আইপিএলে স্পট ফিক্সিংকে কেন্দ্র করে গোটা দেশ তোলপাড় হলেও এত দিন মুখ খোলেননি সরকারের কোনও শীর্ষ কর্তাই। অবশেষে বিষয়টি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মুখ খুললেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
ম্যাচ ফিক্সিং কেলেঙ্কারি গত বেশ কয়েক দিন ধরে উত্তপ্ত ক্রিকেট মহল। এর মধ্যেই চার দিনের জাপান ও তাইল্যান্ড সফর সেরে দেশে ফেরার পথে আজ প্রধানমন্ত্রীকে এ নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। স্পট ফিক্সিং, বেটিং, হাওয়ালা কাণ্ড নিয়ে যে ভাবে ক্রিকেটের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে এবং খেলার সঙ্গে যে ভাবে মন্ত্রী-রাজনীতিকরা জড়িয়ে পড়ছেন, তাতে কি এ বার হস্তক্ষেপ করবে সরকার? জবাবে মনমোহন বলেন, “এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে। কোনও মন্তব্য করব না। এটুকু আশা করব যে, খেলার সঙ্গে রাজনীতি মিশিয়ে ফেলা হবে না।”
ক্রীড়াজগতে রাজনীতিকদের মাথা গলানো নিয়ে বিতর্ক বহু দিনের। বিশেষ করে কমনওয়েলথ গেমস দুর্নীতিতে কংগ্রেস নেতা সুরেশ কলমডী জড়িয়ে পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তীব্র হয়। প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যে কিছুটা ধন্ধ তৈরি হয়েছে। কেন না মনমোহন খেলার সঙ্গে রাজনীতি মিশিয়ে না ফেলার কথা বললেও কংগ্রেসেরই একাধিক নেতা মন্ত্রী বিভিন্ন ক্রীড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুক্ল, মধ্যপ্রদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, রাজস্থান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান সি পি জোশী-এঁরা সকলেই কংগ্রেস নেতা এবং কেন্দ্রের মন্ত্রী।
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কংগ্রেস মুখপাত্র মীম আফজল এ দিন বলেন, ক্রীড়াজগতে রাজনীতিকদের আগ্রহ থাকবে না, তেমন কথা প্রধানমন্ত্রী বলেননি। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, খেলার বিষয়টি রাজনীতির অলিন্দে এনে ফেলা ঠিক নয়। তবে কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছেন, যে ভাবে ক্রিকেট রাজনীতি নিয়ে মানুষের অসন্তোষ বাড়ছে, তাতে প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য ইতিবাচক। কেন না কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী এবং রাহুল গাঁধীও এ ব্যাপারে কঠোর বার্তা দিতে চাইছেন। তাঁদের নির্দেশেই গত বুধবার বিসিসিআই সভাপতির পদ থেকে শ্রীনিবাসনের ইস্তফা দাবি করেন ক্রীড়ামন্ত্রী জীতেন্দ্র সিংহ। কংগ্রেস নেতা তথা আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুক্ল-র ওপরেও কংগ্রেস নেতৃত্ব চাপ বাড়াচ্ছেন, যাতে তিনিও শ্রীনিবাসনের পদত্যাগ দাবি করেন। আপাত ভাবে মনে হচ্ছিল যে, শ্রীনিবাসনকে আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে। এবং তার শরিক রাজীব শুক্লও। এই ধারণায় আখেরে ক্ষতি হচ্ছিল কংগ্রেসেরই। এমনকী কংগ্রেসের একাংশ এ-ও দাবি করেন যে, সনিয়া-রাহুল এতটাই অসন্তুষ্ট যে, আসন্ন রদবদলে রাজীব শুক্লকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। কারণ, রাজীবের নেতৃত্বে আইপিএল চলাকালীনই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
ঘরোয়া আলোচনায় রাজীব পাল্টা যুক্তি দেন, ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ নেই। তা ছাড়া ক্রিকেট রাজনীতিতে কংগ্রেসের অনেক নেতা জড়িত। ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থাতেও বহু দলের নেতারা রয়েছেন।
বেটিং ও স্পট ফিক্সিং নিয়ে তদন্তকে পুলিশি ব্যাপার ধরে নিয়েই দলীয় তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। কিন্তু ক্রিকেট দুর্নীতি নিয়ে দেশ জুড়ে উষ্মা বাড়তে থাকায় অবস্থান বদলায় হাইকম্যান্ড। কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব বুঝতে পারেন, এই দুর্নীতি দমনে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ আশা করছে মানুষ। এমনিতেই দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনায় মানুষ ক্ষুব্ধ। তার ওপর স্পট ফিক্সিং নিয়ে যে তোলপাড় হচ্ছে, তাতেও অসন্তোষের আঁচ শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন সরকারের ঘাড়ে পড়ারই আশঙ্কা রয়েছে বলে তাঁরা মনে করেন। কংগ্রেসের এক নেতা জানান, সেই কারণেই প্রথমে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রীকে কপিল সিব্বলের মাধ্যমে স্পট ফিক্সিং ও বেটিং-এর বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়নের ব্যাপারে বার্তা দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে বিসিসিআই সভাপতি পদ থেকে শ্রীনিবাসনকে সরানোর দাবি তোলেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী। দলের ওই নেতার কথায়, “মোদ্দা বিষয় হল, স্পট ফিক্সিং কাণ্ড নিয়ে ক্রিকেটের গায়ে কালি লাগার পর পরিচ্ছন্ন ক্রীড়া পরিবেশ চাইছে মানুষ। কংগ্রেস মানুষের সেই ভাবাবেগের সঙ্গে নিজেদের জুড়তে চাইছে। সেই কারণে সরকার ও দলের নেতারা একযোগে ক্রিকেট দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার বার্তা দিচ্ছেন।” |