ট্রেনের ধাক্কায় বুনো হাতির মৃত্যু ঠেকাতে জঙ্গল চিরে যাওয়া রেলপথে কম সংখ্যক ট্রেন চালানোর দাবি তুললেন পরিবেশপ্রেমীরা। শুক্রবার হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন (ন্যাফ) -এর পক্ষ থেকে এনজেপিতে ডিআরএমের অফিসের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়। তাঁরা এরিয়া ম্যানেজার পার্থ শীলের মাধ্যমে রেল মন্ত্রী ও রেল প্রতিমন্ত্রীকে একটি স্মারকলিপিও দেন।
ন্যাফের তরফে একটি পরিসংখ্যান দিয়ে জানানো হয়েছে, গত দশ বছরে ৪২টি হাতি, ৩টি চিতা, ২টি পাইথন ও ৬টি বাইসন ট্রেনের ধাক্কায় মারা গিয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছরে ৯টি হাতি ট্রেনের ধাক্কায় মারা গিয়েছে। ন্যাফের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, “রেল ও বন দফতরের তরফে নানা ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলেও হাতি মৃত্যু রোধ হচ্ছে না। এটা দীর্ঘদিন ধরে চলতে পারে না। আমরা চাই রেল প্রতিমন্ত্রী একবার ডুয়ার্সে ঘুরে গিয়ে এ ব্যপারে ব্যবস্থা নিন।”
ডুয়ার্সের প্রকৃতিপ্রেমী সংগঠনের পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ জানানো হয়েছে। আরণ্যক নামের একটি সংগঠনের পক্ষে কানাইলাল চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রেল ও বনকর্তারা বৈঠক করছেন। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।” ডুয়ার্স জাগরণের সম্পাদক ভিক্টর বসু বলেন, “কিছু ট্রেন ঘুরিয়ে ফালাকাটা হয়ে চালালে হাতির মৃত্যু অনেক কমত।”
বন দফতর সূত্রের খবর, ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে ৩ জুলাই রেল মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে দিল্লিতে ফের বৈঠকে বসবেন বনকর্তারা। ওই বৈঠকে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের কর্তারাও থাকবেন। পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলির অভিযোগ, এর আগেও দুর্ঘটনা এড়াতে আন্ডার পাস, লাইনের পাশে নজর মিনার তৈরি, ট্রেনের গতিবেগ কমানো, কন্ট্রোল রুম থেকে হাতির গতিবিধির খবর পেয়ে চালককে সতর্ক করার মতো বিভিন্ন প্রকল্পের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু কাজ কিছু হয়নি।
ডুয়ার্সের পাঁচটি অভয়ারণ্যের মধ্য দিয়ে গিয়েছে আলিপুরদুয়ার থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত ১৬৪ কিলোমিটার রেল পথ। মিটার গেজ থাকার সময় ১৯৭৪ সাল থেকে ২৭ বছরের হিসেবে ট্রেনের ধাক্কায় ২৭টি হাতি মারা যায়। ২০০৪ সালে ব্রড গেজ হওয়ার পরে ট্রেনের ধাক্কায় মারা যায় ৩৯টি হাতি মারা গিয়েছে। ব্রডগেজে উন্নীত হওয়ার পরে দিনে ওই পথে ১৫টি যাত্রীবাহী ট্রেন ও ২০ মালগাড়ি চলাচল করছে।
বৃহস্পতিবার ভোরে বানারহাটের কাছে তিনটি হাতির মৃত্যু এবং একটি হাতির জখম হয়। রেল ও বনকর্তারা একে অন্যের কাঁধে দায় চাপিয়েছেন। উত্তরবঙ্গের প্রধান বনপাল বিপিন সুদ বলেন, “দেড় কিলোমিটার পর্যন্ত রেল পথ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। চালক সতর্ক থাকলে ওই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।” যদিও উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের অতিরিক্ত ডিভিশনাল ম্যানেজার বেনিফিস লাকড়া বলেন, “ওই সময় মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। সামান্য দূরের কিছু দেখা যায়নি। ট্রেনের গতি কম ছিল বলে চালক জানিয়েছেন।” এ দিন সন্ধ্যায় ন্যাশনাল ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরো’র পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক চতুর্ভুজ বহেরা বানারহাটে যান। তিনি একটি রিপোর্ট দিল্লিতে পাঠাবেন বলে জানান।
|