|
|
|
|
ডুয়ার্সে ফের অঘটন |
ট্রেনের ধাক্কায় তিন হাতির মৃত্যু
নিলয় দাস • বানারহাট |
ভোর রাতে জঙ্গলের মধ্যে রেল লাইন পেরোনোর সময়ে ট্রেনের ধাক্কায় ডুয়ার্সে আবার মৃত্যু হল তিনটি হাতির। বৃহস্পতিবার বানারহাটের মরাঘাট এলাকায় এই দুর্ঘটনায় আর একটি হাতি গুরুতর জখম হয়েছে। এই এলাকা থেকে মাত্র তিনশো মিটার দূরে ২০১০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মালগাড়ির ধাক্কায় মারা গিয়েছিল সাতটি হাতি।
মিটার গেজ লাইনের সম্প্রসারণ করে ২০০২ সালে ব্রডগেজ করার পরে গত ৯ বছরের মধ্যে ওই লাইনে এই নিয়ে ৪৭টি হাতি ট্রেনের ধাক্কায় মারা গেল। তার মধ্যে এ বছরই মারা গিয়েছে ১০টি হাতি।
প্রতি বারের মতো এ বারেও হাতির মৃত্যুর পরে রাজ্য সরকার ও রেল দফতরের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়ে গিয়েছে। রেলপ্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরী দাবি করেছেন, “দুর্ঘটনা হয়েছে হাতি করিডর বা হাতি চলাচলের রাস্তার বাইরে।” বনমন্ত্রী হিতেন বর্মণের অবশ্য বক্তব্য, “হাতি করিডরেই দুর্ঘটনা হয়েছে।” সেই সঙ্গেই তাঁর দাবি, ট্রেনের গতিও ওই এলাকায় যা থাকার কথা, তার থেকে বেশি ছিল। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ার জংশন পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে পাঁচটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে। হাতি মৃত্যু রোধ করার জন্য ডুয়ার্স চিরে চলে যাওয়া ওই ১৬০ কিলোমিটার রেলপথে সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত ট্রেনের গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার রাখার কথা। ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে হিতেনবাবু এই দিন বলেন, “ট্রেনটি ঘণ্টায় ৭০-৮০ কিলোমিটার গতিবেগে চলছিল। না হলে এক সঙ্গে এতগুলি হাতি মারা যেতে পারে না। রেলের জন্যই
এই কাণ্ড ঘটেছে, মুখ্যমন্ত্রীকে
রিপোর্ট দেব।” |
|
বানারহাটের কাছে মরাঘাটে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত হাতি। ছবি: রাজকুমার মোদক। |
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ারের এডিআরএম বেনিফিস লাকড়া অবশ্য জানান, ট্রেনটি ঠিক গতিবেগেই চলছিল।
জোর বৃষ্টির কারণে চালক হাতিগুলি দেখতে পাননি।
শেষে এমার্জেন্সি ব্রেক কষলেও হাতিগুলিকে বাঁচানো যায়নি। অধীর অভিযোগ করেছেন, “লাইনের আশেপাশে হাতি ঘোরাফেরা করলে, তা বন দফতরেরই জানিয়ে দেওয়ার কথা। তারা কিছু জানায়নি।” অধীরের দাবি, “করবেট ন্যাশনাল পার্কে যেমন ক্যামেরার মাধ্যমে হাতিদের গতিবিধি নজরে রাখা হয়, এখানেও সেই ব্যবস্থা করা হোক।” তবে রেল মন্ত্রক সূত্রেরও খবর, যত দিন না ফালাকাটা দিয়ে ডবল লাইন শুরু হচ্ছে তত দিন মানুষ-বন্যপ্রাণী সংঘাত চলবে। হিতেনবাবু অবশ্য পাল্টা বলেন, “এত বড় রেলপথে আমাদের পক্ষে ক্যামেরা বসানো সম্ভব নয়। তবে কিছু ট্রেন ফালাকাটা হয়ে ঘুরে গেলে এই ধরনের ঘটনা এড়ানো সম্ভব।” ফালাকাটা হয়ে ওই বিকল্প পথে ডবল লাইন বসানোর কাজ কয়েকটি জায়গাতে শুরু হয়েছে।
রেল ও বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন ২৫ থেকে ৩০টি হাতির দল রেতির জঙ্গল থেকে বার হয়ে চা বাগান পেরিয়ে মরাঘাটের দিকে যাচ্ছিল। ট্রেনের ধাক্কায় একটি মাদি ও একটি চার বছর বয়সী দাঁতাল হাতির মৃত্যু হয় ঘটনাস্থলেই। দু’টি পূর্ণ বয়স্ক মাকনা হাতি আহত হয়। তার একটি পরে মারা যায়। অন্যটিকে ক্রেন দিয়ে তুলে ট্রাকে চাপিয়ে গরুমারা অভয়ারণ্যে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। বন দফতরের প্রজেক্ট এলিফ্যান্ট-এর অধিকর্তা এ এন প্রসাদ বলেন, “এ ব্যাপারে রেল মন্ত্রকের সঙ্গে রাজ্য সরকারের আলোচনায়
বসা উচিত।” |
|
|
|
|
|