একটি জলা বোজানোর অভিযোগকে কেন্দ্র করে শোরগোল বেঁধেছে তারকেশ্বরের তালপুরে।
গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনের নাকের ডগায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে ওই জলাশয়। শাসক দল তৃণমূলের কিছু নেতা ওই জলা বোজানোর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত বলে পুলিশ ওই কাজ বন্ধ করতে সে ভাবে তৎপর হয়নি। প্রশাসনের নানা মহলে বিষয়টি লিখিত ভাবে জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। শেষ পর্যন্ত কাজ বন্ধ রেখে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিডিও।
প্রশাসন সূত্রের খবর, তালপুর পঞ্চায়েতের মুক্তারপুর নারকেলতলায় রাস্তার ধারেই একটি ডোবা রয়েছে। ওই জলাশয়ের কিছুটা অংশ সরকারি জমিতে। গ্রামবাসীদের দাবি, এলাকার মানুষ দৈনন্দিন প্রয়োজনে ওই জলা ব্যবহার করেন। কিছু দিন ধরে সেই ডোবার কিছুটা বালির বস্তা ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। অভিযোগ, ওই জলা বুজিয়ে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে প্রোমোটারির সুবিধার জন্য। এ ব্যাপারে তারকেশ্বরের বিএলএলআরও, বিডিও-কে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়। বিষয়টি জেনে তারকেশ্বরের বিডিও সুমন মজুমদার হস্তক্ষেপ করেন। তিনি বলেন, “আপাতত কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। বিএলএলআরও-কে বিষয়টি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।” ওই জলার পাড় বাঁধানো বা অন্য কোনও কাজে দফতরের কোনও অনুমতি কেউ নেয়নি বলে বিডিও জানিয়েছেন। |
এই জলাকে নিয়েই বিতর্ক। —নিজস্ব চিত্র। |
অভিযুক্তদের পক্ষে তালপুর অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি পতিতপাবন দাস বলেন, “আদপেই জলা ভরা করা হচ্ছে না। ভালর জন্যই বালির বস্তা ফেলে জলার পাড় বাঁধানো হচ্ছে, এতে এক ব্যক্তির বাড়িতে যাওয়ার রাস্তাও হবে।” পঞ্চায়েত প্রধান সিপিএমের অপর্ণা আদক জানান, পঞ্চায়েতে দু’পক্ষই আবেদন জমা দিয়েছেন। তবে পঞ্চায়েত ওই জায়গায় কোনও কাজ করার ছাড়পত্র কাউকে দেয়নি।
অভিযোগকারীদের দাবি, তৃণমূলের কিছু নেতা ওই জলা বোজানোর সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। সিপিএমের কয়েক জন তাঁদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। সর্বোপরি, অভিযুক্তেরা পুরসভার এক প্রভাবশালী পদাধিকারীর ছত্রচ্ছায়ায় রয়েছেন। সে কারণেই পুলিশ চোখ বুজে রয়েছে। তৃণমূলেরই অন্য গোষ্ঠীর নেতাদের অনুগামীরা তাতে বাধা দিচ্ছেন। গোটা বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের ওই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ‘আকচা-আকচি’ শুরু হয়েছে। পতিতপাবনবাবুর বক্তব্য, “সিপিএম ছেড়ে আমাদের দলে আসা কিছু লোক অপপ্রচার করছে।”
ওই এলাকার বাসিন্দা বাসুদেব সিংহ বলেন, “চোখের সামনে জলাটি ভরাট করা হচ্ছে। আমরা বারে বারে পুলিশ- প্রশাসনকে জানিয়েছি। বিডিও পুলিশকে বেআইনি ওই কাজ বন্ধ করতে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন বলেও শুনেছি। অথচ পুলিশের ভূমিকা আদৌ সন্তোষজনক নয়। আপাতত কাজ বন্ধ থাকলেও আমাদের আশঙ্কা ফের ভরাট করার কাজ শুরু হবে।” আরও অনেক গ্রামবাসী একই কথা জানালেন।
থানার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মানেননি পুলিশকর্তারা। এসডিপিও (চন্দননগর) সৈকত ঘোষ জানান, জলা ভরাটের অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে বিডিও তারকেশ্বর থানাকে একটি রিপোর্ট জমা দিতে বলেছিলেন। থানার ওসি ইতিমধ্যেই রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। |