সরকারি পরিবহণ নিগমগুলির বাড়তি অব্যবহৃত জমি বাণিজ্যিক ভাবে কাজে লাগিয়ে রোজগারের চিন্তা রাজ্য সরকার অনেক দিন ধরেই করছে। বাম আমলে এই ভাবনার সূত্রপাত হলেও সুনির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা দানা বেঁধে ওঠেনি। মহাকরণে পালা বদলের পরেও এই নিয়ে ভাবনা-চিন্তা চলছে। সেই পথে এ বার প্রথম পদক্ষেপ করল কলকাতা ট্রাম কোম্পানি (সিটিসি)। নিজেদের জমি বিক্রির অধিকার তারা রাজ্য সরকারের হাতে তুলে দিল। বুধবার সংস্থার বোর্ড মিটিংয়ে ওই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। এর ফলে ওই সংস্থার বিভিন্ন ডিপোয় পড়ে থাকা বাড়তি জমি বিক্রি করায় আর কোনও বাধা থাকল না বলেই মনে করছেন পরিবহণ দফতরের কর্তারা।
কী ভাবে বিক্রি হবে উদ্বৃত্ত জমি?
এক পরিবহণ-কর্তা বলেন, “আমরা আগ্রহপত্র (এক্সপ্রেশন অব ইনটারেস্ট) চাইব। যারা বেশি দর দেবে তাদের ৯৯ বছরের জন্য জমির সত্ত্ব দেওয়া হবে।” আগ্রহপত্র চাওয়ার আগে রাজ্য সরকারও ওই জমির ন্যূনতম দাম স্থির করে রাখবে। বর্তমান সরকারের আমলেই হিডকো কিংবা কেএমডিএ নিউটাউনে জমি বিক্রির ক্ষেত্রে নিলামকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। ট্রাম সংস্থার জমি বিক্রির ক্ষেত্রেও কেন পরিবহণ দফতর ওই পথে হাঁটবে না, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে।
কর্মীদের বেতন ও অন্য পাওনাগণ্ডা মেটাতে ট্রাম সংস্থা ও চারটি বাস নিগমের হাতে থাকা ডিপোর উদ্বৃত্ত জমি বিক্রিতে প্রথম উদ্যোগী হয়েছিল বাম সরকার। কিন্তু নানা জটিলতায় সেই সিদ্ধান্ত আর বাস্তবায়িত হয়নি। কোন নিগমের হাতে কত জমি আছে, তার কতটা অব্যবহৃত পড়ে রয়েছে, তা জানতে একটি বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় বর্তমান সরকারের আমলে। মাস ছয়েক আগে রিপোর্ট মহাকরণে জমা পড়ে। তার পরেই জমি বিক্রির পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে উদ্যোগী হয় সরকার।
প্রাথমিক ভাবে সিটিসি-র ছ’টি ডিপোর জমি বিক্রি করা হবে বলে পরিবহণ দফতর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেগুলি হল টালিগঞ্জ, খিদিরপুর, গড়িয়াহাট, শ্যামবাজার, বেলগাছিয়া ও কালীঘাটে। একই সঙ্গে সিএসটিসি-র ঠাকুরপুকুর ডিপোর উদ্বৃত্ত জমিও বিক্রি হবে। সব মিলিয়ে ৪০০ বিঘার মতো জমি মিলবে বলে জানিয়েছেন এক পরিবহণ-কর্তা। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি জমি আছে টালিগঞ্জে, ২৫০ একর। শ্যামবাজার ডিপোর প্রায় সব জমিই বেচে দেওয়া হবে। আগে ওই ডিপো উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে গালিফ স্ট্রিটে।
ওই জমিতে কী হবে? পরিবহণ দফতর ভেবেছিল, বাণিজ্যিক কাজেই ব্যবহার হবে ওই জমি। কিন্তু সেই পথে হাঁটলে সরকারকে অনেক দায়িত্ব নিতে হবে এবং নগদ টাকা হাতে আসতেও সময় লাগবে। তাই আবাসন তৈরিতেই উৎসাহ দিচ্ছে রাজ্য প্রশাসন। সরকারি ভাবে অবশ্য বলা হচ্ছে, নিয়ম মেনে দরপত্র ডেকে ওই জমি প্রমোটারের হাতে তুলে দেবে পরিবহণ দফতর। এর পরে ক্রেতা কী ভাবে জমি ব্যবহার করবে, তা নিয়ে সরকার মাথা ঘামাবে না। সরকারি নথিতে অবশ্য আবাসন তৈরিরও অনুমোদন থাকছে। |