বছরখানেক আগে গঙ্গাপাড়ে সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “দর্শনার্থীদের জন্য এই পথ দিনভর খোলা থাকবে। মানুষের নিরাপত্তায় সর্বক্ষণের জন্য থাকবেন রক্ষী।” মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে তিন শিফ্টে সেখানে ৩০ জন রক্ষীও মোতায়েন করে কলকাতা পুরসভা। সেই প্রহরার কাজ কেমন চলছে, সরেজমিন দেখতে গিয়েই শুক্রবার হতবাক হয়ে গেলেন খোদ পুর-কমিশনার খলিল আহমেদ।
এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ গঙ্গাপাড়ে গিয়ে পুর-কমিশনার দেখেন, সেখানে রয়েছেন মাত্র দু’জন নিরাপত্তারক্ষী। তাঁরাও কতর্ব্যরত নন, বরং গঙ্গার হাওয়ায় দিব্যি ভাতঘুম দিতে ব্যস্ত। পুর-কমিশনার বলেন, “ওঁরা শুয়ে ছিলেন। ওই এলাকায় আর কোনও রক্ষীকে দেখা যায়নি।” পুরসভা সূত্রের খবর, ‘বেঙ্গল প্রোটেকটিভ’ নামে এক নিরাপত্তা সংস্থা ওই রক্ষীদের সরবরাহ করেছে। এক-একটি শিফ্টে ১০ জন করে রক্ষীর পাহারা দেওয়ার কথা।
এ দিন ওই ঘটনার পরে পুরসভায় ফিরেই দায়িত্বে থাকা অফিসারদের নিজের ঘরে ডেকে পাঠান খলিল আহমেদ। |
পুরো ঘটনাটি তাঁদের জানিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন তিনি। প্রয়োজনে ওই নিরাপত্তা সংস্থাকে পুরসভার কাজ থেকে সরিয়ে দিতে বলেন। প্রসঙ্গত, পুরসভায় নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগের কাজ দেখে পুরসচিবের দফতর। এবং বৃহস্পতিবারই পুরসচিব পদে রদবদল হয়েছে। এত দিন ওই পদে ছিলেন রীতেন্দ্রনারায়ণ বসু রায়চৌধুরী। তিনি মহাকরণে বদলি হওয়ায় তাঁর জায়গায় হরিহরপ্রসাদ মণ্ডল যোগ দিয়েছেন। পুর-কমিশনারের নির্দেশ মতো এ দিন তিনি বিভাগীয় অফিসারদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন।
পুরসচিবের দফতর সূত্রের খবর, নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগের বিষয়টি তাদের হাতে থাকলেও কোথায়, কত জন রক্ষী নিয়োগ করা হবে, তা ঠিক করে বিভিন্ন দফতর। গঙ্গাপাড়ে নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে সিভিল দফতরের চাহিদা অনুযায়ী।
ডিউটি না-করে দুপুরে রক্ষীদের ঘুমোনো প্রসঙ্গে পুরসচিবের দফতরের একাধিক অফিসারের বক্তব্য, ১২-১৩ হাজার নিরাপত্তারক্ষী, জমাদার, ঝাড়ুদার পুর-এলাকার নানা জায়গায় কাজ করছে। কে, কোথায়, কখন ঘুমোচ্ছে, তা দেখা তাঁদের কাজ নয়। সংশ্লিষ্ট দফতর এ নিয়ে রিপোর্ট দিলে তবেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে।
পুরসচিব হরিহরপ্রসাদ মণ্ডল বলেন, “কমিশনার ওই ঘটনার কথা জানিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। কেন ওই ঘটনা ঘটল, তা সংস্থার মালিকের কাছে জানতে চাইব।” পুরসভা সূত্রের খবর, প্রতি মাসে নিরাপত্তারক্ষী, জমাদার ও ঝাড়ুদারের বেতন বাবদ প্রায় চার কোটি টাকা খরচ হয় পুরসভার। পুরসভার অন্দরমহলেই প্রশ্ন উঠছে, নিরাপত্তার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচের পরেও এই হাল কেন?
পুরসভার এক পদস্থ অফিসার জানান, এ দিনের ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ পুর-কমিশনার। পরিস্থিতি বদলাতে পুরসভার মধ্যে ও বাইরে কর্মরত নিরাপত্তারক্ষী ও গ্রিন পুলিশকর্মীদের প্রতি ছ’মাস অন্তর স্থান বদলের নির্দেশ দেওয়া হবে। পুর প্রশাসন মনে করছে, এক জায়গায় বেশি দিন থাকায় কাজে ঢিলেমি দেখা দিচ্ছে। বাড়ছে দুর্নীতিও। |