কেন্দ্র বনাম রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দ্বৈরথে এ বার আসরে খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।
বছর ঘুরলেই লোকসভা নির্বাচন। অথচ অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর তেমন লক্ষণ নেই। বৃদ্ধি এখনও পাঁচ শতাংশের নীচে। পরিকাঠামোয় লগ্নি অধরা। সংস্কার থমকে। আর সুদ কমার আশায় শিল্প তাকিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দিকে। এই পরিস্থিতিতে শিল্প তথা বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরাতে শুক্রবার সুদ কমানোর পক্ষে জোরালো সওয়াল করলেন মনমোহন। কয়েক মাস ধরেই যা ক্রমাগত করে আসছেন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হারে কিছুটা লাগাম পড়েছে। আগামী দিনে তা আরও নিয়ন্ত্রণে আসবে। বৃদ্ধির সহায়ক নীতিও তৈরি করা হবে। তাই এখন সুদ কমানোর যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে।
গত আর্থিক বছরের শেষ তিন মাসেও (জানুয়ারি-মার্চ) বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৪.৮%। যা তার আগের তিন মাসের (৪.৭%) তুলনায় সামান্য বেশি। ফলে সব মিলিয়ে, আগের আর্থিক বছরে বৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে মাত্র পাঁচ শতাংশ। গত এক দশকে যা সব থেকে কম। এই পরিস্থিতিতে দীর্ঘ দিন ধরেই শীর্ষ ব্যাঙ্কের কাছে সুদ কমানোর দাবিতে সোচ্চার শিল্পমহল। এ বার সেই একই দাবি তুললেন প্রধানমন্ত্রীও। কিন্তু ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম যে ভাবে কমছে, তার পর আগামী ১৭ জুনের ঋণনীতি পর্যালোচনায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ফের সুদ কমাতে কতটা রাজি হবে, প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তা নিয়ে। গতকালই দেশে ডলার আসার তুলনায় তা অনেক বেশি বেরিয়ে যাওয়া (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট) নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর দুব্বুরি সুব্বারাও। মনে করিয়ে দিয়েছেন খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার এখনও চড়া থাকার কথা। তাঁর মতে, পরিস্থিতি মানলে সুদ কমানোর সুযোগ এখন খুবই সীমিত। তাই তিনি এ কথা বলার পরের দিনই প্রধানমন্ত্রীর আজকের বক্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নিজে মুখ খোলার পরেও সুব্বারাওয়ের পক্ষে সুদ কমানো কতটা সম্ভব, প্রশ্ন থাকছে তা নিয়ে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, মনমোহনের আজকের বিবৃতি যতটা রাজনৈতিক, ততটা অর্থনৈতিক যুক্তি নির্ভর নয়। তাঁদের মতে, ডলারের তুলনায় টাকার দাম তলানিতে ঠেকেছে। দাঁড়িয়েছে গত ১১ মাসের সব থেকে নীচে। এই পরিস্থিতিতে যন্ত্রপাতি-সহ বিভিন্ন মূলধনী পণ্য আমদানির খরচ বাড়ার সমূহ সম্ভাবনা। আবার বিদেশ থেকে যন্ত্রাংশ আমদানির জন্য বাড়তি কড়ি গুনতে হলে, লগ্নির খরচ বাড়বে। তার হাত ধরে বাড়বে উৎপাদনের খরচও। তখন স্বাভাবিক ভাবেই পণ্য-পরিষেবার দাম বাড়াবে সংস্থাগুলি। ফলে আর এক দফা মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা এখনও পুরোদস্তুর বহাল। এই পরিস্থিতিতে বৃদ্ধিকে চাঙ্গা করার জন্য সুদ কমানোর ঝুঁকি শীর্ষ ব্যাঙ্ক নিতে চাইবেন না বলেই অর্থনীতিবিদদের ধারণা। মনমোহন নিজে অর্থনীতিবিদ। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরও ছিলেন। তা সত্ত্বেও কি সুব্বারাওয়ের বাধ্যবাধকতা বুঝতে পারছেন না তিনি?
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, তেমনটা একেবারেই নয়। ২০১৪ সালের ভোটের আগে শিল্পমহলকে কিছুটা তুষ্ট রাখতে চান তিনি। সেই কারণেই সুদ কমানোর পক্ষে তাঁর এই সওয়াল। কিন্তু রাজনীতির এই বাধ্যবাধকতা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নরের নেই। তাই তিনি আদৌ সুদ কমাবেন কি না, প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে তা নিয়ে। |