পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে সিপিএম-তৃণমূলের সংঘর্ষের জেরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল সিউড়ি থানার কোমা পঞ্চায়েতের জানুরি গ্রাম। শুক্রবার সকালের ঘটনা। ঘটনায় দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে এলাকায় সন্ত্রাস ছড়ানো, মারধর, বোমাবাজি ও ঘর লুঠপাটের অভিযোগ তুলেছে। সংঘর্ষে এক মহিলা-সহ দু’জন জখমও হয়েছেন। তাঁদের সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। ঘটনাস্থলে পুলিশ রয়েছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মঙ্গলবার কোমা পঞ্চায়েতে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিতর্ক তৈরি হয়। এ দিনের ঘটনা তারই জের। তৃণমূলের অভিযোগ, এ দিন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেই সকাল ছ’টা নাগাদ সিপিএমের লেকেরা তাঁদের আট-দশজন কর্মী-সমর্থকের বাড়িতে ঢুকে হামলা চালায়। বোমাবাজি, বাড়িঘর লুঠপাট ও মারধর করা হয়। মহিলাদের উপরেও হামলা চালানো হয় বলে তৃণমূলের অভিযোগ। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, গোটা ঘটনাটি ঘটেছে সিপিএমের দখলে থাকা স্থানীয় পঞ্চায়েতের প্রধানের নেতৃত্বে। যদিও তৃণমূলের এই অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়ে সিপিএমের পাল্টা দাবি, ওই পঞ্চায়েত তাঁদের দখলে। তাই নির্বাচনের আগে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতেই এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করতে চাইছে তৃণমূল। এ দিন সেই উদ্দেশ্যে তৃণমূলের লোকেরাই তাঁদের উপরে হামলা চালিয়েছে বলে সিপিএমের অভিযোগ। |
শুক্রবার জানুরি গ্রামে চলছে পুলিশি টহল। —নিজস্ব চিত্র |
অভিযুক্ত পঞ্চায়েত প্রধান, সিপিএমের সপ্তম মাহারা বলেন, “এই পঞ্চায়েতের ছ’টি আসনের সব ক’টিতেই গত নির্বাচনে আমরা জয়ী হয়েছি। কিন্তু রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রীতি মতো খবরদারি শুরু করেছে। প্রতি মাসে একটি করে স্মারকলিপি জমা দেওয়া তো আছেই। সঙ্গে কী ভাবে পঞ্চায়েত চলবে সেই নিয়ে প্রতিনিয়ত চাপ তৈরি করছে তৃণমূল।” তাঁর আরও দাবি, “গত মঙ্গলবার তৃণমূলের কিছু লোকজন আমার অনুপস্থিতিতে পঞ্চায়েতে স্মারকলিপি দিতে এসেছিল। এসেই পঞ্চায়েতে ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে আমি এলে আমার উপরেও তারা চড়াও হয়।” এ নিয়ে সিউড়ি থানায় একটি অভিযোগও জানানো হয়। তৃণমূলের পক্ষ থেকেও সিপিএমের ২৬ জনের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ জমা পড়ে। সপ্তমবাবুর দাবি, “তৃণমূলের অভিযোগ মিথ্যা। বরং কেন মিথ্যা অভিযোগ করা হল, তা জানতে গিয়ে আমাদেরই তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হতে হয়।”
তৃণমূলের সিউড়ি ২ ব্লকের সভাপতি নুরুল ইসলাম অবশ্য প্রধানের দাবি মানেননি। তাঁর পাল্টা দাবি, “স্মারকলিপি নয়, ওই দিন কিছু বাসিন্দা একশো দিনের কাজ চাইতে (চার/ক ফর্ম চাইতে) গিয়েছিলেন। তাঁরা আমাদের সমর্থক হলেও সে দিন তাঁদের সঙ্গে কোনও তৃণমূলের পতাকা ছিল না। পঞ্চায়েতে ঢুকে কেউ কোনও বিশৃঙ্খলও করেননি।” কিন্তু পঞ্চায়েতে যাওয়ার জন্য ফেরার পথে সিপিএমের লোকজন ওই তৃণমূল সমর্থকদের মারধর করে বলে তাঁর অভিযোগ। তারই জেরে তৃণমূল থানায় অভিযোগ জানায় বলে তিনি জানিয়েছেন। থানায় অভিযোগ করাতেই এ দিন সিপিএমের লোকজন তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে চড়াও হয় বলেও তৃণমূলের দাবি। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। |