অংকে ১০০ ভৌতবিজ্ঞানে ৯৯। বাকি সব বিষয়ে প্রাপ্ত নম্বর ‘লেটার মাকর্স’-এর থেকে বেশি। মোট নম্বর ৬৫১। শতকরা হিসাবে ৯৩ ভাগ। মাধ্যমিক পরীক্ষার ওই উজ্জ্বল নম্বর পেয়েও মন ভাল নেই সুতপা মণ্ডলের।
মুর্শিদাবাদ জেলার নওদার প্রত্যম্ত এলাকার কুলাইচণ্ডী গ্রামে বাড়ি। এক দিকে দারিদ্রের পীড়ন অন্য দিকে
|
সুতপা মণ্ডল |
উচ্চশিক্ষার টান। ওই টানাপোড়েনে তাকে বাড়ি ছাড়তে হচ্ছে। পৈত্রিক ভিটে থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে নদিয়ার করিমপুরে তাকে চলে যেতে হচ্ছে পড়তে। সুতপা অবশ্য পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত এক কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে নওদার পাটিকাবাড়ি উচ্চমাধ্যমিক স্কুলে পড়াশুনা করেছে। সেই স্কুলেও উচ্চমাধ্যমিক রয়েছে। কিন্তু বাড়িতে রেখে কাছের স্কুলে সন্তানকে পড়ানোর সামর্থ নেই কর্মহীন বাবা সুশান্ত মণ্ডলের।
সুশান্তবাবু বলেন, “উচ্চমাধ্যমিকের পর মেয়ে মেডিক্যালে জয়েন্ট পরীক্ষা দিতে চায়। তার জন্য মেয়েকে বহরমপুরে রেখে পড়াতে পারলে ভাল হত।” সম্পত্তি বলতে পৈত্রিক বাড়ি আর ২ বিঘা জমি। ওই জমি থেকে বছরে আয় ৪ কুইন্টাল ধান আর ৪ কুইন্টাল পাট। তাতে মেয়ের লেখাপড়া ও সংসার চলে না। তাই তিনি গৃহশিক্ষকতা করেন। তাঁর কথায়, “মাসে দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা জোটে। ওই আয়ে মেয়ের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন দেখা হয়তো অনেকে বিলাসিতা বলতে পারেন।”
জেদি তার প্রমাণ মেলে পাটিকাবাড়ি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক অরবিন্দ বিশ্বাসের কথায়। অরবিন্দবাবু বলেন, “পঞ্চম শ্রেণিতে তার রোল নম্বর ছিল ১২। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ৬। অষ্টম শ্রেণিতে রোল হয় ৩। নবম ও দশম শ্রেণিতে সে ছিল সেকেন্ড। আর মাধ্যমিক পরীক্ষায় স্কুলের সেরা।” উচ্চমাধ্যমিকের পর তার প্রথম পছন্দ মেডিক্যাল নিয়ে পড়া। না হলে সে অঙ্ক নিয়ে পড়তে চায়। মাধ্যমিকে ১০০ পেয়েছে অঙ্কে। সুতপার কথায়, “দৈনিক ৫-৬ ঘণ্টা পড়া ছাড়া ছবি আঁকি, ডিসকভারি চ্যানেল দেখি আর টিভিতে গেম খেলি।”
তার নতুন স্কুল বানি থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে। তার মধ্যে এক কিলোমিটার সাইকেলের পথ। বাকি ৭ কিলোমিটার বাসযাত্রা। ধকল সইবে তো? সুতপার জবাব, ‘‘কষ্ট না করলে কখনও কেষ্ট মেলে!” |