ফ্রন্ট শরিকদের দাবি, রাজ্যপাট খুইয়ে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে ‘নরম’ অবস্থান নিচ্ছে সিপিএম। রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক থাকার দায় থেকেই এ বারের ভোটে সিপিএম শরিকদের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী। শরিক দলগুলির আব্দারে জোটের স্বার্থে নিজেদের প্রাপ্য আসনও ছাড়তে রাজি সিপিএম। আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লকের মতো বাম শরিকদের অন্তত দাবি এমনটাই।
আরএসপি-র জেলা সম্পাদক শঙ্কর সরকার বলেন, “জোটের ব্যাপারে গত বারের তুলনায় এ বার সিপিএমের ভূমিকা অনেক বেশি ইতিবাচক। ফলে জেলায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের সব স্তরের সিংহভাগ আসনেই এ বার আসন সমঝোতা হয়েছে। যে কয়েকটি আসন নিয়ে ঐক্যমত্য তৈরি হয়নি, অচিরে সেগুলিতেও রফা হবে।” আরএসপি-র এক জেলা নেতার কথায়, আগে আসন রফা নিয়ে ফ্রন্টে তেমন আলোচনায় হত না। বড় শরিক সিপিএম নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফ্রন্টের বৈঠকে তা জানাত। নিজেদের অবস্থান থেকে নড়চড় করত না সিপিএম। এ বার কিন্তু ভিন্ন চিত্র। আসন সমঝোতা নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে বামফ্রন্টে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু নিজে বাম ঐক্য বাস্তবায়িত করার জন্য একাধিক বার জেলায় এসেছেন বলে ফ্রন্ট সূত্রের খবর। সিপিএমের ‘নরম’ মনোভাবের দরুন এ বারের পঞ্চায়েতে প্রায় ৯৫ শতাংশ আসনে বাম দলগুলি একযোগে লড়াই করবে বলে বাম দলগুলির জেলা নেতাদের দাবি।
তবে বামফ্রন্ট সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত সার্বিক ঐক্যমত্য হয়নি। তেহট্ট-১ ও ২ ব্লক এবং করিমপুর-১ ব্লকের কয়েকটি জায়গায় আসন বণ্টন নিয়ে জটিলতা কাটেনি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক তথা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক সুমিত দে বলেন, “বামফ্রন্টের নীতি অনুযায়ী জোটের স্বার্থে আমরা আমাদের প্রাপ্ত আসনের বেশ কিছু শরিকদের ছেড়ে দিচ্ছি। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের প্রায় ১০০টি আসন তিন শরিককে ছাড়া হয়েছে। তিন ব্লকে এখনও পর্যন্ত জোটের জট যা রয়েছে, আশা করি আলোচনার মাধ্যমে কয়েক দিনের মধ্যে তার নিষ্পত্তি হবে।”
পঞ্চায়েতে জোট নিয়ে আশাবাদী বাম শরিক সিপিআইও। দলের জেলা সম্পাদক কার্তিক দাস বলেন, “এ বার জেলায় বাম ঐক্য হবেই। দু’একটি জায়গায় সমস্যা থাকলেও আলোচনার মাধ্যমে তা মিটবে বলে আশা করা যায়।” ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য নারায়ণ মজুমদারের বক্তব্য, “এটা সত্যি জোটের বিষয়ে এ বার সিপিএম অনেক নমনীয় অবস্থান নিয়েছে। তবে এখনই সার্বিক জোট হয়েছে, এমনটা বলা যাচ্ছে না। দু’একটি ব্লকে কিন্তু জোটের জটিলতা রয়ে গিয়েছে। তবে সে সব ক্ষেত্রেও দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চলছে।”
‘বড়ভাই সুলভ’ মনোভাব ছেড়ে সিপিএমের হঠাৎ জোটে মতি হওয়ার কারণ কী? এই প্রশ্নই উঁকি মারছে জেলার রাজনৈতিক মহলেই। তবে বাম শরিকরা সকলেই বলছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিই এর জন্য দায়ী। ক্ষমতা হারিয়ে জোটবদ্ধ হয়ে লড়াই করাটাই এখন ভবিতব্য।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-র বক্তব্য, “গত পঞ্চায়েত ভোটে বাম-ঐক্য না হওয়ার মাসুল গুণতে হয়েছে সব শরিককে। সব দলেরই ফল হয়েছিল খারাপ। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করতে চাইছি না। ২৬ মার্চের বামফ্রন্টের বৈঠকে জোটের ব্যাপারে সর্ব সম্মতিক্রমে ঠিক হয় সার্বিক ঐক্য হবেই। ঐক্য নিশ্চিত করতে তারপরও ছ’বার ফ্রন্টের বৈঠক হয়েছে।” |