বিগত পঞ্চায়েত ভোটে তাবড় বাম নেতারা শত চেষ্টাতেও মুর্শিদাবাদ জেলার সমস্ত শরিককে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেননি। রাজ্যপাট যাওয়ার পর অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাম শরিকরা জোট বেঁধে লড়ার সিদ্ধান্ত নিল। এ বার ভোটে শতকরা ৯৯ ভাগেরও বেশি আসনে ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াইয়ে নামার কথা জানান শরিক দলগুলির জেলা সম্পাদকরা।
অতীতে সিপিএম-এর ‘দাদাগিরি’র অভিযোগ তুলে অন্যান্য শরিকরা আলাদাভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করত। এ বার বড় শরিকের প্রতি সেই ধরনের কোনও অভিযোগ ওঠেনি। তাই পঞ্চায়েতের প্রায় সব আসনেই সমঝোতা হয়েছে বলে বাম নেতাদের দাবি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “পঞ্চায়েত ভোটে এ বার জেলায় সার্বিক ঐক্য হচ্ছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৫-১৬টি আর পঞ্চায়েত সমিতির ৩টি আসন ছাড়া বাকিগুলিতে রফা হয়েছে। যা শতকরা হিসাবে ৯৯ ভাগেরও বেশি।”
নির্বাচনী এলাকা বিন্যাসের পর জেলা পরিষদের আসন সংখ্যা হয়েছে ৭০টি। পঞ্চায়েত সমিতির মোট আসন হয়েছে ৭৪৮টি। আর গ্রাম পঞ্চায়েতের আসন ৪২৪৭টি। জেলা পরিষদে আরএসপি ১৩, ফরওয়ার্ড ব্লক ৩টি, সিপিআই ২টিতে লড়ছে। বাকি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে সিপিএম। এই রফাতে খুশি আরএসপি-র জেলা সম্পাদক বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক বিভাস চক্রবর্তী।
বিশ্বনাথবাবু বলেন, “রাজ্যে এখন দুঃসময় চলছে। এই পরিস্থিতিতে পঞ্চায়েত ভোটে জেলায় এ বারই প্রথম সার্বিক ঐক্য হল।” বিভাসবাবু বলেন, “সরকারের বাইরে থেকে নির্বাচনে লড়া কঠিন কাজ। তাই নমনীয় মনোভাবের মধ্য দিয়ে আসন বন্টন হয়েছে।” তিনি বলেন, “অন্য বার শতকরা ৪০ থেকে ৬০ ভাগ আসনে ঐক্য হত না। ঐক্য হওয়া আসনগুলিতে গোঁজ দেওয়া হত। এ বার তা হবে না বলে নেতারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “রাজ্যে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সব শরিকই ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াইয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছেন। তাই এ বার পঞ্চায়েতে
বামফ্রন্ট এককাট্টা।”
কিন্তু ‘এককাট্টা’ কতটা বাস্তবায়িত হবে তার প্রমাণ মিলবে মনোনয়মপত্র জমা দেওয়ার পর, মন্তব্য জেলা বামফ্রন্টের এক নেতার। তিনি বলেন, “রাজনীতি, ফ্রন্ট এ সব কথা গ্রাম নীচু স্তরে খাটে না। সেখানে সচল হল গোষ্ঠী বা বংশের ভোটার সংখ্যা, লোকবল ও লাঠিবল। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময়সীমা না পেরোলে কিছু বলা যাবে না।” অবশ্য আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন বাম নেতারা।
ঐক্যমত্য সত্ত্বেও এখনও কেন বামফ্রন্ট প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল না? মৃগাঙ্কবাবু বলেন, “ভোট নিয়ে এতদিন অনিশ্চয়তা ছিল। তাই তালিকা তৈরি হয়নি। কমিশন বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। প্রার্থী তালিকাও তৈরি। শনিবার জেলা পরিষদের ৭০ জন প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হবে। ৫ জুন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হবে।” |