মনমরা এক কিশোরীকে ‘ঠিক’ করতে গুনিনের শরণাপন্ন হয়েছিলেন পরিবারের লোকজন। ঝাড়ফুঁকের সময়ে ওই কিশোরীকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে ওই গুনিনকে। নদিয়ার চাপড়া থানা এলাকার ঘটনা। ধৃত কালীপদ সাঁতরার বাড়ি নদিয়ার কড়ুইগাছিতে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বছর সতেরোর ওই কিশোরীকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। তার শরীরের ৩০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে।
জেলা পুলিশের ডিএসপি (সদর) দিব্যজ্যোতি দাস বলেন, “ওই গুনিন আগুন জ্বালিয়ে ঘরের ভিতরে ঝাড়ফুঁক করছিল। তখন মেয়েটির গায়ে আগুন ধরে যায়। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই ওই গুনিনকে ধরা হয়েছে।” জেলা হাসপাতালের অবসরপ্রাপ্ত মনোবিদ দেবাশিস দাশগুপ্ত বলেন, “লোকে যেটাকে ‘ভূতে ধরা’ বলে মনে করে, সেটা আসলে মানসিক রোগ। হঠাৎ করে মনের উপর চাপ তৈরি হলে কেউ অসংলগ্ন আচরণ করে। চিকিৎসা হলে দ্রুত নিরাময় সম্ভব।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, গত বছর নবম শ্রেণিতে ওঠার পরেই পড়াশোনা ছেড়ে দেয় ওই কিশোরী। দিন কয়েক আগে তার বিয়ে ঠিক হয়। তার পর থেকেই মনমরা ও অসুস্থ হয়ে পড়ে ওই কিশোরী। গ্রামীণ চিকিৎসকের ওষুধে কাজ না হওয়ায় প্রতিবেশীদের কথামতো কিশোরীর বাবা কালীপদ গুনিনের শরণাপন্ন হন গত ১২ মে। তার দু’দিন পরে গুনিনের বাড়িতেই অগ্নিদগ্ধ হয় ওই কিশোরী।
গত ২৬ মে পুলিশের কাছে গুনিনের বিরুদ্ধে মেয়েকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন কিশোরীর বাবা। ওই দিনই ধরা হয় গুনিনকে। মেয়েটির বাবা বলেন, “গুনিনের লোকজন হুমকি দিচ্ছিল বলে পুলিশের কাছে প্রথমে অভিযোগ জানাতে ভয় পাচ্ছিলাম।” হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে ওই কিশোরী বুধবার বলে, ‘‘আমাকে ওই গুনিনের বাড়ি বাবা দু’দিন নিয়ে গিয়েছিলেন। দু’দিনই আমাকে লাঠি ও ঝাঁটা দিয়ে খুব মারধর করা হয়।”
কিন্তু মন খারাপ সারানোর জন্য গুনিনের কাছে কেন?
মেয়েটির দাদা বলেন, “বিয়ের আর কয়েক দিন বাকি ছিল। তার আগে বোনের অস্বাভাবিক আচরণ দেখে মনে হয়েছিল, ভূতে ধরেছে। তাই গুনিনের কাছে যাওয়া হয়।”
চাপড়া-১ পঞ্চায়েত প্রধান কংগ্রেসের বিন মহম্মদ বিশ্বাস জানান, নদিয়ার ওই এলাকায় আগে শিক্ষার হার কম থাকলেও বর্তমান প্রজন্ম স্কুলমুখো হয়েছে। তবু কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়তে চেষ্টা চালানো হবে। পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের জেলা সম্পাদক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মূলত অশিক্ষা এবং অজ্ঞতার কারণে মানুষ এখনও গুণিনের কাছে ছুটছে। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে।” |