|
|
|
|
২০ বছর পর মায়ের জামিনের টাকা মেটাল ছেলে
সংবাদসংস্থা • কানপুর |
বছর কুড়ি আগেই মিলেছিল জামিন। কিন্তু শর্ত ছিল মুক্তির জন্য দিতে হবে ৫০০০ টাকার বন্ড। সেই অর্থ মেটানোর সামর্থ্য বা লোকবল কিছুই ছিল না সাধারণ, নিম্নবিত্ত পরিবারের গৃহবধূ বিজয় কুমারীর। বন্দি জীবনের গোড়ার দিকে লখনউ জেলেই এক ছেলের জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। দু’দশক পরে সেই ছেলেই ওই পাঁচ হাজার টাকার বন্ড দিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে গেল মাকে।
জেলের নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, বছর আঠারোর ওই যুবকের নাম কানহাইয়া। জন্মের পর থেকে ছ’বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের কাছেই ছিল সে। কিন্তু একটু বড় হতেই জেল কর্তৃপক্ষ তাকে পাঠিয়ে দেন সরকারি হোমে। সেখানেই নাম-গোত্রহীন আর পাঁচটা ছেলে মেয়ের মধ্যে একার চেষ্টায় বড় হয়ে উঠতে থাকে। তবে মায়ের কথা, মায়ের স্মৃতি কোনও দিনই ভুলতে পারেনি কানহাইয়া। ছোট থেকে একটাই জেদ ছিল, যে করেই হোক টাকা জোগাড় করে ছাড়িয়ে আনতে হবে মাকে।
২০১২-র জুলাইয়ে একটি পোশাক কারখানায় শ্রমিকের কাজে যোগ দেয় কানহাইয়া। দিন রাতের অক্লান্ত পরিশ্রমে যা উপার্জন হতো তার প্রায় সবটাই সঞ্চয় করত। চাকরিতে যোগ দেওয়ার এক বছরের মধ্যেই সফল হয় উদ্দেশ্য। ৫০০০ টাকা জমতেই মাকে সসম্মানে ফিরিয়ে নিতে লখনউ জেলে আসে সে।
১৯৯০ সাল থেকে এই লখনউ জেলেই জীবন কেটেছে বিজয় কুমারীর। ইলাহাবাদ হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতির রায়ে খুনের অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল তাঁর। ১৯৯৪ সালে আদালত নিজের রায় পুনর্বিবেচনা করলে সাজা কিছুটা মকুব হয়।
৫০০০ টাকা বন্ডের ভিত্তিতে জামিন মেলে। কিন্তু খুনের আসামি বলে পরিবার, পরিজন সকলেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। তাই বন্ডের টাকা মেটানোর কেউ ছিল না। সহায়, সম্বলহীন বিজয় তাই আঁকড়ে ধরেছিলেন কানহাইয়াকে। কিন্তু একটা সময়ের পর কানহাইয়াকেও কেড়ে নেন জেল কর্তৃপক্ষ।
কুড়ি বছর পর সেই ছেলের চেষ্টাতেই বাড়ি ফিরতে পেরে ভীষণ খুশি বিজয়। তিনি জানালেন, “নিজের অধিকারের লড়াই চালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাপের বাড়ি বা শ্বশুরবাড়ির কোনও আত্মীয়কেই পাইনি।” মাকে বন্দিজীবন থেকে মুক্তি দিতে পেরে ছেলে কানহাইয়া অবশ্য জানাল, “মা ছাড়া নিজের বলতে কেউ নেই। এটুকু তো আমাকে করতেই হতো। আমি খুব খুশি।” |
|
|
|
|
|