|
|
|
|
বায়ুসেনার মহড়ায় ত্রস্ত যাত্রী-বিমানের পাইলটেরা
সুনন্দ ঘোষ • কলকাতা |
ককপিট থেকে পাইলট আচমকা দেখতে পেলেন সামনে দিয়ে সাঁ করে উড়ে গেল দু’টি যুদ্ধ বিমান। ভয়ার্ত কণ্ঠে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, “এরা কারা?” এটিসি জানাল, বায়ুসেনার বিমান। মহড়া দিচ্ছে। গলা শুকিয়ে গেল পাইলটের। তা হলে কি আরও বিমান রয়েছে আশপাশে? উত্তর দিতে পারে না এটিসি।
গত মাসের ঘটনা। কলকাতা থেকে ডিব্রুগড় যাচ্ছিল ইন্ডিগোর বিমানটি। সামনে পরিষ্কার আকাশ। ১৫ হাজার ফুট-এর কাছাকাছি নেমে সামনে দুই যুদ্ধ-বিমান দেখে সে দিন হতচকিত পাইলট সঙ্গে সঙ্গে গতি কমিয়ে ফেলেন। এড়ানো যায় দুর্ঘটনা।
উত্তর-পূর্ব ভারতের আকাশে ইদানীং প্রায়ই এমন ঘটছে। কাছাকাছি অন্য বিমান চলে এলে ককপিটে বিপদ সঙ্কেত বেজে ওঠার ঘটনাও কয়েক বার ঘটেছে। কখনও, যাত্রী বিমানের মাথার উপর দিয়ে সোঁ করে উড়ে যাচ্ছে যুদ্ধ-বিমান। কখনও চলে আসছে নাকের ডগায়। ইন্ডিগো, এয়ার ইন্ডিয়া, গো, জেট, স্পাইসজেট যাত্রী বিমানের পাইলটেরা এখন গুয়াহাটি, ডিব্রুগড়, তেজপুরে নামতে গিয়ে তাই প্রমাদ গনছেন। এক একটি যুদ্ধ-বিমানের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় আড়াই হাজার কিলোমিটার। শঙ্কিত পাইলটদের অনেকেই ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)-এর কাছেও এ নিয়ে অভিযোগ করেছেন। |
|
চিত্রণ: নির্মল মল্লিক |
এক পাইলটের কথায়, “আমরা সব সময় এটিসি-র সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। এত জন যাত্রীর নিরাপত্তা থাকে আমাদের হাতে। যুদ্ধ-বিমানগুলি যখন-তখন কাছাকাছি চলে এলে তো সমস্যা হবেই! যুদ্ধ-বিমানের পাইলটেরা যদি এটিসি-র সঙ্গে যোগাযোগ করে চলে, তা হলে তাদের অবস্থান সম্পর্কে এটিসি আমাদের সতর্ক করতে পারবে। ওরা নিজেদের অবস্থান এটিসি-কে কেন জানাবে না?” এই সমস্যা সমাধানে সম্প্রতি উদ্যোগ নিয়েছে বিমান মন্ত্রক। দিল্লি থেকে মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, “আগামী সপ্তাহে দিল্লিতে বৈঠক ডাকা হয়েছে। উত্তর-পূর্বে বায়ুসেনার বিভিন্ন ঘাঁটির দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারেরা সেখানে থাকবেন।”
উত্তর-পূর্ব ভারতে চিনের সঙ্গে সীমানায় নিজেদের ঘাঁটিগুলিকে আরও শক্তিশালী করছে বায়ুসেনা। বাগডোগরা, তেজপুর, জোরহাট, ছাবুয়া, মোহনবাড়ি, কলাইকুন্ডা থেকে নিয়ম করে শুরু হয়েছে মহড়া। যখন-তখন সাঁ-সাঁ করে আকাশে উঠে আসছে সুখোই বিমান।
বায়ুসেনার এক অফিসারের কথায়, মাটি থেকে সাধারণত ১৫ হাজার ফুটের মধ্যে যুদ্ধ-বিমান ওড়ে। যাত্রীবাহী বিমান যায় আরও ওপর দিয়ে। সাধারণত, যুদ্ধ-বিমান অত উপরে যায় না। কিন্তু, যুদ্ধের মহড়া চলার সময়ে তারা সাজানো শত্রু-বিমানের তাড়ায় আচমকা গতি বাড়িয়ে ৩০-৪০ হাজার ফুট পর্যন্ত উঠে যায়। আবার নেমেও আসে।
তা হলে কি মাঝ আকাশে বিপদের সম্ভাবনা কমানো যাবে না? বায়ুসেনার মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক জেরার্ড গ্যালভে বলেন, “যাত্রী বিমানের যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, সে জন্য আমাদের ব্যবস্থা রয়েছে।” সেনা সূত্রে খবর, সেনাবাহিনী নিজস্ব এটিসি মারফত প্রতি মুহূর্তে লক্ষ্য রাখে যুদ্ধ ও যাত্রী বিমানের উপরে। যাত্রী বিমান কোনও ভাবে কাছে চলে এলে যুদ্ধবিমানের পাইলটকে সতর্ক করে দেওয়া হয়।
কিন্তু ১৫ হাজার ফুটের ওপরে ওড়ার সময়ে অসামরিক এটিসি-কে জানাতে বাধা কোথায়? বায়ুসেনার মুখপাত্রের কথায়, যুদ্ধ-বিমানে মাত্র এক জন পাইলট থাকেন। উচ্চ গতিতে বিমান নিয়ে উড়ে বেড়ানোর ফাঁকে তাঁকে তিনটি চ্যানেল বদলে সেনা অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয়। এর পরে ওই পাইলট অসামরিক এটিসি-র সঙ্গে যোগাযোগ করবেন কী করে? আর যে বিমান এই মুহূর্তে ১০ হাজার ফুট উচ্চতায় রয়েছে, কয়েক মিনিটের মধ্যেই সে ৪০ হাজার ফুট উপরে উঠে যায়। এত ঘন ঘন উচ্চতা, গতি ও অবস্থান বদলাতে হয় যে তা এটিসি-কে জানানো সম্ভব হয় না।
আগামী সপ্তাহের বৈঠকে এই সমস্যা মোকাবিলায় কি ফর্মুলা বেরোয়, সে দিকেই তাকিয়ে পাইলটেরা। |
|
|
|
|
|