|
|
|
|
মাওবাদী এলাকায় উন্নয়ন, হিসেব চায় যোজনা কমিশন
অনমিত্র সেনগুপ্ত ও প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি |
সুকমা কাণ্ডের পর নড়েচড়ে বসল যোজনা কমিশন। দেশের মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায় ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকশন প্ল্যান (আইএপি)-র আওতায় থাকা জেলাগুলির উন্নয়নের কাজ বাস্তবে ঠিক কতটা এগিয়েছে, রাজ্যগুলিকে তা সোমবারের মধ্যে জানাতে বলল যোজনা কমিশন।
আগামী ৫ জুন দিল্লিতে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে। ওই দিনই মাওবাদী সমস্যা নিয়ে আলাদা বৈঠক হবে। সেখানে ছত্তীসগঢ়, অন্ধ্রপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা ও মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও ডিজিপি-রা হাজির থাকবেন। তবে নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ততার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসছেন না। তাঁর প্রতিনিধি হয়ে থাকবেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তার ঠিক আগে দেশের ৯টি মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্যের আইএপি জেলাগুলির উন্নয়ন ও পরিকাঠামোগত নির্মাণ সংক্রান্ত কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র। ওই প্রকল্পের আওতায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাও।
অনুন্নয়নকে মাওবাদী সমস্যার একটি বড় কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে ২০১০ সালে ওই সুসংহত উন্নয়ন প্রকল্পটি হাতে নেয় কেন্দ্র। প্রথমে ৩৫টি জেলায় পাইলট প্রকল্প হিসাবে ওই পরিকল্পনা শুরু হলেও বর্তমানে দেশের ৯টি রাজ্যের ৮২টি জেলার সার্বিক পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে বিশেষ অনুদান দিয়ে থাকে কেন্দ্র। গত আর্থিক বছরের শেষেই ওই প্রকল্প বন্ধ করার পরিকল্পনা থাকলেও সুকমা কাণ্ডের পর সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আগামী চার বছর ওই প্রকল্প চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্র। ওই খাতে এর পর থেকে প্রতি বছর এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র।
আগামী চার বছর ওই জেলাগুলির জন্য পাঁচ কোটি টাকা করে বরাদ্দ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে খরচ হবে ৪১০ কোটি টাকা। আর বাড়তি ৫৯০ কোটি টাকা জেলাগুলির জনসংখ্যা ও এলাকার আয়তনের হিসাবে বণ্টন করা হবে।
পিছিয়ে থাকা জেলাগুলিতে ওই অর্থ খরচ হওয়ার কথা মূলত থানা, ডাকঘর, মোবাইল টাওয়ার, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ও গ্রামসভা গঠন করার জন্য। কিন্তু যোজনা কমিশনের সমীক্ষা বলছে, সব ক’টি রাজ্যই ওই অর্থ সময়ে খরচ করতে ব্যর্থ হয়েছে। শেষ হয়নি পরিকাঠামো সংক্রান্ত কাজও। গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত সার্বিক ভাবে সব ক’টি রাজ্য মিলিয়ে কেন্দ্রীয় অনুদানের ৭২ শতাংশ খরচ করতে পেরেছে বলে জানিয়েছে কমিশন। এতে প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যর্থ হচ্ছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
সুকমার ঘটনার পর আর দেরি করতে চাইছে না কেন্দ্র। তাই যোজনা কমিশনের পক্ষ থেকে তড়িঘড়ি ৯টি রাজ্যের মুখ্যসচিব, জেলাশাসক ও সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সুংসহত পরিকল্পনার দায়িত্বে থাকা অফিসারদের আগামী সোমবারের মধ্যে প্রকল্প-সংক্রান্ত সমস্ত রিপোর্ট দিল্লিতে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার বক্তব্য, “প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে কোনও খামতি হলে তার দায়িত্ব এড়াতে পারে না যোজনা কমিশনও। কেন না প্রাথমিক ভাবে সাফল্য এলেও সম্প্রতি বেশ কিছু মন্ত্রক আইএপি পরিকল্পনাটি লঘু করার জন্য যোজনা কমিশনের উপর চাপ সৃষ্টি করছিল। তাতে সায় দিয়েছিল কমিশনের একাংশ।”
কী ভাবে? পি চিদম্বরম কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্বে থাকার সময়ে ২০১০ সালে আইএপি পরিকল্পনাটি হাতে নিয়েছিলেন। পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য ছিল, প্রথমে অভিযান চালিয়ে কোনও একটি এলাকাকে মাওবাদীদের হাত থেকে মুক্ত করা। তার পর সেখানে ঘাঁটি গেড়ে ওই এলাকার উন্নয়ন ঘটানো। যাতে ভবিষ্যতে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে সংঘাতে স্থানীয় মানুষের সাহায্য পাওয়া যায়। কিন্তু পরে আইএপি জেলাগুলির জন্য বরাদ্দ অর্থ সংশ্লিষ্ট রাজ্যের অনগ্রসর খাতে পাওয়া অর্থের সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেয় কিছু মন্ত্রক। তাতে সমর্থনও জানায় যোজনা কমিশন। কিন্তু ওই প্রস্তাবে বেঁকে বসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
মন্ত্রক তাদের আপত্তিতে কমিশনকে জানায়, আইএপি জেলাগুলির যে অর্থ বরাদ্দ করা হচ্ছে তা নির্দিষ্ট প্রকল্পপিছু পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য দেওয়া হচ্ছে। যেমন উপদ্রুত জেলাগুলিতে থানা, ডাকঘর বা মোবাইল টাওয়ার বসানো। ওই নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়গুলির সঙ্গে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযানের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
কিন্তু বিষয়টি নিয়ে টানাপোড়েন চলতে থাকায় প্রকল্প রূপায়ণের গতি যে মার খেয়েছে তা সুকমার ঘটনার পর মানতে বাধ্য হয়েছে দু’পক্ষই। তাই মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকের আগে আর দেরি না করে দ্রুত কাজের খতিয়ান চেয়ে পাঠানো হয়েছে রাজ্য সরকারগুলির কাছে।
|
পুরনো খবর: হামলার পরে মহেন্দ্র কর্মার দেহ ঘিরে নাচ মাওবাদীদের |
|
|
|
|
|