বোর্ড অধিবেশন চলাকালীন একটি গৃহীত প্রস্তাব পাশ করানোর সময় বাম কাউন্সিলরদের বাধায় ধুন্ধুমার বেধে গেল আসানসোল পুরসভায়। অভিযোগ, শাসক দলের কাউন্সিলরদের হাতে মারও খেয়েছেন বিরোধীরা। জখম এক সিপিএম কাউন্সিলরকে আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তিও করানো হয়েছে। বৃহস্পতিবারের এই ঘটনার জেরে অধিবেশন বয়কট করে বেরিয়ে আসেন বাম কাউন্সিলরেরা। তবে চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র তিওয়ারির দাবি, এরকম কিছুই হয়নি। বিরোধীদের মার খাওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেছেন তিনি। আসানসোলের মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, অধিবেশন ভন্ডুল করার জন্যই বিরোধীরা এমন করেছেন।
বিকেল চারটে নাগাদ তৃণমূলের ১৩ জন ও সিপিএমের ১৬ জন কাউন্সিলরকে নিয়ে পুরসভার অধিবেশন শুরু হয়। শুরুতেই শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন চেয়ারম্যান জিতেন্দ্র তিওয়ারি। এরইসঙ্গে গত বোর্ড সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি পাশ করানোর জন্য প্রস্তাব আকারে পড়তে শুরু করেন তিনি। তখনই বাধা দেন বাম কাউন্সিলরা। বিরোধী নেতা প্রাক্তন মেয়র সিপিএমের তাপস রায় দাবি তোলেন, এটা অগণতান্ত্রিক পদ্ধতি। তিনি বলেন, “আলোচনার পরে সিদ্ধান্তগুলি পাশ করানোর নিয়ম।” এরপরেই চেয়ারম্যানকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। গণ্ডগোল বেধে যায় শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে। চিৎকারের মধ্যেই চেয়ারম্যান মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়কে বক্তব্য রাখার জন্য বলেন। তাপসবাবু বক্তব্য রাখার জন্য উঠতেই বিক্ষোভ তীব্র আকার নেয়। মেয়রকে বাধা দেন বিরোধীরা। দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতিও শুরু হয়ে যায় বলে অভিযোগ। |
পুরভবনে তখন চলছে বচসা। বৃহস্পতিবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, তখনই ধাক্কাধাক্কিতে মাটিতে পড়ে যান সিপিএম কাউন্সিলর ওয়াসিমূল হক। জনাকয়েক তৃণমূল কাউন্সিলর তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন বলেও অভিযোগ। পড়ে যান সিপিএমের আরেক কাউন্সিলর দিপালী মণ্ডলও। বেশ কিছুক্ষণ এই অবস্থা চলার পরে রণে ভঙ্গ দিয়ে অধিবেশন বয়কট করে বেরিয়ে আসেন বাম কাউন্সিলরেরা। ওয়াসিমূল হকের অভিযোগ বলেন, “আমাকে মেয়র পারিষদ অনিমেষ দাস কিল, চড়, ঘুষি মেরেছেন।” তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অনিমেষবাবু বলেন, “জন প্রতিনিধির গায়ে হাত দেওয়ার কথা ভাবতেই পারি না আমি। অভিযোগ মিথ্যে। হই হট্টগোলের মাঝে উনি পড়ে গিয়েছেন।” সিপিএমের তাপস রায় জানান, অনিমেষ দাস-সহ কয়েকজন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে তাঁরা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করছেন। ঘটনার প্রতিবাদে শহর জুড়ে আন্দোলনে নামার ডাকও দিয়েছেন তাঁরা।
মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, প্রাক্তন মেয়র তাপস রায় পুরসভার একটি মার্কেট কমপ্লেক্স অনৈতিক ভাবে মাত্র ১২ লক্ষ টাকায় ৩০ বছরের লিজ দিয়েছেন। অথচ এটি প্রায় দু’কোটি টাকায় লিজ দেওয়া যেতে পারত বলে তাঁর দাবি। তিনি বলেন, “পুরসভার এই আর্থিক ক্ষতি রুখতে আমরা পুরনো লিজ চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেটিই এই অধিবেশনে পাশ করানোর কথা ছিল। বিরোধীরা তা বুঝে গিয়ে অধিবেশন ভন্ডুল করেছে।” তবে মেয়রের অভিযোগের জবাবে তাপস রায় দাবি করেন, তিনি কোনও রকম অনৈতিক কাজ করেননি। উল্টে বৃহস্পতিবার অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পুরসভার চেয়ারম্যান অধিবেশন চালাচ্ছিলেন। তাঁরা রুখে দাঁড়াতেই প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে তৃণমূল কাউন্সিলররা তাঁদের প্রহার করেছেন।
এ দিনের অধিবেশনে যোগ দেননি কংগ্রেসের ১২ জন কাউন্সিলরও। পুরসভার পরিবেশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে দুনীর্তির অভিযোগ তুলে পুরভবনে অবস্থান বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। তাঁদের দাবি, মেয়রকে পদত্যাগ করতে হবে, ঘটনার সিবিআই তদন্ত করাতে হবে। মেয়র পারিষদ রবিউল ইসলাম বলেন, “এই আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে পরোক্ষে মেয়রেরও যোগ রয়েছে। তাঁকে পদত্যাগ করতে হবে।” |