প্রায় মাস খানেক ধরে প্রস্তুতি চলছিল। সাতদিন ধরে গোটা উত্তরবঙ্গ থেকে বাছাই ১০০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো শুরু হয়। টেলিফোন, ইমেলে অংশগ্রহণকারীদের দিনক্ষণ জানিয়ে সকাল সকাল চলে আসার কথাও বলা হয়। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মুখোমুখি বসে প্রশ্নোত্তর পর্ব হাতছাড়া করতে রাজি ছিলেন না শিল্পদ্যোগীরা। সঙ্গে থাকার কথা ছিল উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবেরও। জেলার জমিজট, শিল্প সমস্যা-সম্ভাবনা, পর্যটন ক্ষেত্র, চা শিল্প ছাড়াও নানা প্রশাসনিক জটিলতার বিষয়ের প্রশ্ন নিয়ে বুধবার সকালের জন্য প্রস্তুত ছিলেন ছয় জেলার নানা প্রান্তের শিল্পদ্যোগীরা। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জরুরি বৈঠকে যোগ দিতে ডাকায় ভেস্তে গেল কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজের (সিআইআই) উত্তরবঙ্গ শাখার শিল্প সংক্রান্ত আলোচনার অনুষ্ঠান। বুধবার সকালে কলকাতা ফিরে গেলেন শিল্পমন্ত্রী। তিনি বলেন, “জরুরি বৈঠকের জন্য চলে যেতে হচ্ছে। পরে শিল্পোদ্যোগী সকলের সঙ্গে কথা বলব।”
মঙ্গলবার শিলিগুড়ি পৌঁছন শিল্প মন্ত্রী। বুধবার মাটিগাড়ার উত্তরায়ণের একটি অভিজাত ক্লাবে অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। তা ভেস্তে যাওয়ায় শিল্পোদ্যোগীরা অনেকেই হতাশ ও ক্ষুব্ধ। তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, এমনতি উত্তরবঙ্গ শিল্পে পিছিয়ে। নতুন সরকার নানা পরিকল্পনার কথা বলছেন। শিল্পোদ্যোগীদের নানা বক্তব্য রয়েছে। এই ধরণের প্ল্যাটফর্ম ছাড়া তা সরকারের মন্ত্রীদের কাছে একযোগে পৌঁছানোও সব সময় সম্ভব হয় না। বড় কাজেই প্রস্ততি নিয়েও এই ধরণের অনুষ্ঠান বাতিল করাটা বাঞ্ছনীয় নয়। মন্ত্রীদের বিষয়টি ভাবা উচিত। ১-২ ঘন্টা সময় বার করে অনুষ্ঠানটি করা গেলে উত্তরবঙ্গের শিল্পোদ্যোগী মানুষের কাছে অন্যরকম বার্তা যেত।
উত্তরবঙ্গের কয়েকজন বিশিষ্ট শিল্পদ্যোগী বলেন, “অনুষ্ঠানটি ১১টা নাগাদ শুরুর কথা ছিল। এদিন সকাল ৯টার পরে টেলিফোন, এসএমএস করে অনুষ্ঠান বাতিলের কথা বলা হয়। অনেককে জানানোও হয়নি। এতে কোচবিহার, রায়গঞ্জের মত এলাকা থেকে যাঁরা হয়ত আসতেন, তাঁরা সমস্যা পড়েন। পরে ক্ষমা প্রকাশ বা দুঃপ্রকাশ করাটা কোনও কাজের কথা নয়।” এই দিন উদ্যোক্তাদের তরফে সিআইআই-এর উত্তরবঙ্গের ডেপুটি ডাইরেক্টর লক্ষ্মী লিম্বু কৌশল বলেন, “আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলাম। শিল্পমন্ত্রীও চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কলকাতায় জরুরি বৈঠক থাকায় উনি থাকতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। অনুষ্ঠান বাতিল করা ছাড়া আমাদের আর করার কিছু ছিল না। মোটামুটি সবাইকে অনুষ্ঠান বাতিলের কথা বলে দেওয়া হয়।”
এমতাবস্থায়, উত্তরবঙ্গে শিল্প স্থাপন নিয়ে রাজ্য সরকার কতটা আন্তরিক তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “গত মঙ্গলবার একটি অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী উত্তরবঙ্গ নিয়ে অনেক কথা বলেন বলে কাগজে দেখলাম। আর আজ মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক বলে শিল্পদ্যোগীদের হতাশ করে চলে গেলেন। কয়েক ঘন্টা থেকে অনুষ্ঠানটি করেও যেতে পারতেন। জানি না কী ধরণের কলকাতায় বৈঠক রয়েছে।” অশোকবাবুর কটাক্ষ, “আসলে শিল্পের থেকে অর্থলগ্নি সংস্থার শিল্প নিয়ে পার্থবাবুরা বেশি উৎসাহী। তাই হয়ত এই অনুষ্ঠানকে বেশি গুরুত্ব দেননি।”
এই প্রসঙ্গে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতমবাবু বলেন, “শিল্পমন্ত্রীর কলকাতায় খুবই জরুরি বৈঠক রয়েছে, তাই উনি চলে গিয়েছেন। তবে যতদূর জানি, নানা মহলে কথা বলে অনুষ্ঠানটি করে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। আবার ওঁর সময় পেলে নিশ্চয়ই এই ধরণের অনুষ্ঠান হবে। উদ্যোক্তাদের তরফে হয়ত বাতিলের খবর জানাতে দেরি হতে পারে।” উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রীর সংযোজন, “বামেদের বিষয়টি নিয়ে ভাবার দরকার নেই। বামফ্রন্ট আমলের পরে দুই বছরে উত্তরবঙ্গের কী হয়েছে তা মানুষ দেখছে।”
|