নিজেরা না পারলে নির্দল প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দেওয়ার চিন্তা করেও শেষমেশ সম্মুখ সমরেই যেতে চাইছে সিপিএম। প্রয়োজনে পুলিশ যাতে তাদের ঢাল হয়ে দাঁড়ায়, তার জন্য প্রশাসনের উপরে চাপ বাড়াতে চাইছে তারা। যদিও নিচুতলার নেতা-কর্মীদের এ নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
নির্বাচন নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হতেই জেলা সিপিএম প্রাথমিক ভাবে ঠিক করেছিল, তৃণমূলের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী দাঁড়ালে দল তাকে সমর্থন করবে। সেই মতো মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম ১, রায়না, খণ্ডেঘোষ-সহ বিভিন্ন ব্লকে নির্দল প্রার্থীদের খুঁজেও রেখেছিল সিপিএম। এতই সঙ্গে, তৃণমূলের হুমকিতে পালাবে না, এমন ‘ডাকাবুকো’ প্রার্থীদেরও প্রাথমিক তালিকা করা হয়েছিল।
কিন্তু ইতিমধ্যে যথাসম্ভব বেশি আসনে দলীয় প্রার্থী দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আলিমুদ্দিন। মঙ্গলবারই বর্ধমানে সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁরা ১০০ শতাংশ আসনে প্রার্থী দেবেন। বুধবার, মনোনয়ন তোলা ও জমা দেওয়ার প্রথম দিনেই মার খেয়ে সেই সঙ্কল্প আরও জোরালো হয়েছে।
সিপিএম সূত্রের খবর, মনোনয়ন তোলার প্রথম দিন থেকেই দলীয় দফতরে তৃণমূলের হামলার যে খবর আসছে, তাতে নির্দলদের উপরে আর ভরসা রাখতে পারছে না সিপিএম। বরং বাম মনোভাবাপন্নদের দলীয় প্রতীকে দাঁড় করাতে চাইছে তারা। অমলবাবুর কথায়, “পুলিশ-প্রশাসন কী রকম নিচ্ছে, তা আমরা শনিবার পর্যন্ত দেখব। সোমবার থেকে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি প্রয়োগ করে লড়াই করব।”
কিন্তু আচমকা লড়াইয়ের শক্তি পাবেন কী ভাবে? সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের দাবি, “কৃষকসভার সদস্য যে হারে বেড়েছে তাতে বোঝা যায়, গ্রামে আমাদের ভিত কত শক্ত। সন্ত্রাসের জন্য সবাই গুটিয়ে ছিল। এখনই তো খোলস ছেড়ে বেরোনোর সময়।” সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য দুর্যোধন সরের দাবি, “দলের সদস্যেরা তো বটেই, বামমনস্ক মানুষজনও প্রার্থী হতে আঞ্চলিক কমিটির নেতাদের কাছে আবেদন করছেন। পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরাও কৌশল বদলাচ্ছি।”
সিপিএমের নিচুতলার কর্মীরা অবশ্য ভরসা পাচ্ছেন না, ব্লক অফিসে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে কি না। মঙ্গলকোটে দলের এক প্রার্থী বলেন, “বুধবার দলের নির্দেশ মতো আমরা চার-পাঁচ জন চুপিসাড়ে মনোনয়ন তুলতে যাই। ব্লক অফিসে অন্তত দেড়শো তৃণমূল কর্মী-সমর্থক ছিলেন। নাম, পরিচয়, কেন এসেছি জানার পরেই তাঁরা ঢুকতে দিচ্ছেন। বিরোধী প্রার্থী হতে এসেছি জানলেই মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
তৃণমূলের বর্ধমান জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথের কটাক্ষ, “সিপিএম দূর্গে শেষ কফিন পড়তে যাচ্ছে বুঝে এলাকা তপ্ত করতেই লড়াইয়ের গল্প জুড়েছে। আমরা দলীয় কর্মীদের এই ফাঁদে পা না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি।” |