ফুটপাথে সব্জির ঝুড়ি সামনে রেখে মাথায় হাত দিয়ে বসেছিলেন পঙ্কজ সাহা। মাঝে-মধ্যে কেউ কেউ এসে অভিনন্দন জানিয়ে যাচ্ছে। তাতে যেন কপালে চিন্তার ভাঁজটা আরও চওড়া হচ্ছে। অভিনন্দনের কারণ, ৬৬৩ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয়েছে সব্জি বিক্রেতা পঙ্কজবাবুর এক মাত্র ছেলে পুষ্পেন। চিন্তার কারণ, দিন আনি দিন খাই সংসারে এর পরে কী ভাবে ছেলেকে পড়াবেন, ভেবে তার কূল পাচ্ছেন না পঙ্কজবাবু।
কাটোয়ার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে হাজরাপুর কলোনির এক গলিতে বাড়ি পুষ্পেনদের। টিনের চালের এক কামরার ঘর। পঙ্কজবাবু কাটোয়া স্টেশনের কাছে রুদ্র মার্কেটে ফুটপাথে সব্জি বিক্রি করেন। তাঁর স্ত্রী মিঠুদেবী একটি বেসরকারি স্কুলে শিশুদের পাহারা দেওয়ার কাজ করেন। সাহা দম্পতি জানান, ছেলেকে পড়াতে হিমসিম খেয়েছেন তাঁরা। মিঠুদেবী বলেন, “শিক্ষকদের অবদান ভোলার নয়। বই-খাতা কিনে দেওয়া-সহ নানা ভাবে ওঁরা সাহায্য করেছেন। উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার জন্যও তাঁরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন।”
মিঠুদেবীদের পড়শি কালীশঙ্কর চক্রবর্তী, শেফালি সরকারেরা বলেন, “পরিবারটি খুব গরিব। কষ্ট করে ছেলেকে পড়িয়েছে। পুষ্পেনের ভাল ফল দেখে আমরা সবাই গর্বিত।” মিঠুদেবী জানান, সব্জি বিক্রি করতে ভোরে বেরোন তাঁর স্বামী। ফেরেন রাতে। তাঁর ঘুমের সমস্যা যাতে না হয়, সে জন্য পুষ্পেন রাতে পড়াশোনা করতে পারত না। তাই অধিকাংশ দিন স্কুলে না গিয়ে দিনের বেলা বাড়িতেই পড়ত পুষ্পেন, দাবি মিঠুদেবীর। প্রতি দিন দুপুরে বাজারে বাবাকে খাবার পৌঁছনো, ছুটির দিনে সব্জি বিক্রিতে হাত লাগানোর কাজও করে পুষ্পেন।
পড়াশোনার বাইরে গোয়েন্দা গল্পের বই পড়তে ভালবাসে কাশীরামদাস বিদ্যায়তনের এই ছাত্র। ভবিষ্যতে কলেজে শিক্ষকতা করতে চায় সে। তার স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক সুবীর দত্তের আশ্বাস, “ওই ছাত্রের পড়াশোনা চালানোর ব্যাপারে আমাদের পক্ষে যা করণীয়, করা হবে।” পুষ্পেন বলে, “গৃহশিক্ষকতা করার প্রস্তাব আসছে। মা ও শিক্ষকেরা বারণ করছেন। কিন্তু পড়াশোনা চালাতে গেলে হয়তো শেষ পর্যন্ত সেই কাজ আমাকে করতে হবে।” এই সব সাত-পাঁচ ভেবেই চিন্তায় পঙ্কজবাবুও। তিনি বলছেন, “ছেলের ফলে সবাই খুশি, কিন্তু আমার মনটা খারাপই হয়ে রয়েছে।” |