কেউ মনোনয়ন জমা দিতে বাধা পেলে তৎক্ষণাৎ সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে বর্ধমানের পুলিশ-প্রশাসন। কিন্তু কেতুগ্রাম-মঙ্গলকোটের মতো উপদ্রুত এলাকায় বামেরা কত আসনে প্রার্থী দিতে পারবে, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
আজ, বুধবার থেকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন জমা শুরু। কিন্তু মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কেতুগ্রাম ১ ব্লকে অর্ধেক আসনে প্রার্থী যোগাড় করা যায়নি বলে সিপিএম সূত্রের খবর। ৮টি পঞ্চায়েতে ১১৬টি আসনে দাঁড়ানোর মতো নাম পাওয়া গিয়েছে মোটে ৬০টি। ওই ব্লকের বেশির ভাগ গ্রামে বিরোধী দলগুলি গত দু’বছরে রাজনৈতিক কার্যকলাপ প্রায় কিছুই চালাতে পারেনি। ব্লকের দু’টি লোকাল কমিটি অফিস, কৃষক সভার দফতর বা আঞ্চলিক দফতরগুলি বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকে তালা বন্ধ।
মঙ্গলকোটেও লাখুরিয়া, সগর, মঙ্গলকোট-সহ অন্তত পাঁচটি পঞ্চায়েত এলাকায় সিপিএমের কার্যত ‘প্রবেশ নিষেধ’। সেখানেও অন্তত ৫টি পঞ্চায়েতে প্রার্থী পাওয়া কঠিন বলে দলের নিচুতলার কর্মীরা মনে করছেন। যদিও রাতে সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অমল হালদার দাবি করেন, “জেলার ১০০ শতাংশ আসনেই আমরা প্রার্থী দেব।” কেতুগ্রাম ১ ও মঙ্গলকোট ব্লক যে এলাকায় পড়ে, সিপিএমের সেই ভাগীরথী অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক দুর্যোধন সরের দাবি, “পরিস্থিতি যতই ভয়ঙ্কর হোক, আমরা কোনও অবস্থাতেই পিছিয়ে আসব না।”
সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, যত বেশি সম্ভব আসনে প্রার্থী দেওয়ার চেষ্টা করতেই হবে। নইলে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে লোকাল বা জোনাল সম্পাদকদের মতো সাংগঠনিক নেতাদের। কিন্তু প্রার্থী জোগাড় করা গেলেও মনোনয়ন জমা করা সহজ হবে না বলেই মনে করছেন মঙ্গলকোট-কেতুগ্রামের সিপিএম নেতারা। সে কারণে, উপদ্রুত ওই দুই এলাকায় মনোনয়ন জমা করার আলাদা কৌশলও নেওয়া হতে পারে।
সিপিএম সূত্রের খবর, কেতুগ্রামে প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা করতে যাবেন দল বেঁধে। দলের ভাগীরথী অজয় জোনাল কমিটির এক সদস্য বলেন, “কান্দরা ব্লক দফতরে একা গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সাহস আমাদের প্রার্থীদের নেই। তাই দলীয় নির্দেশ মেনে এক দিনে সবাই গিয়ে মনোনয়ন জমা দেবেন।” দুর্যোধনবাবু বলেন, “মনোনয়ন জমা দিতে গেলে বাধা পাব, এটা প্রায় নিশ্চিত। তাই পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
মঙ্গলকোটে আবার এক-এক জন করে প্রার্থী প্রায় একা গিয়ে চুপচাপ মনোনয়ন জমা দিয়ে আসতে পারেন। সিপিএম সূত্রের খবর, মঙ্গলকোট ব্লক অফিসে তৃণমূলের লোকজন আস্তানা গেড়ে বসে থাকে। এক সঙ্গে মনোনয়ন জমা দিতে গেলে তারা হামলা করতে পারে। তাই যতটা সম্ভব তাদের অগোচরে মনোনয়ন জমা করে আসাটাই লক্ষ্য। সিপিএম নেতাদের দাবি, মনোনয়ন ঠিকঠাক জমা করা গেলে এই পরিস্থিতিতেও মঙ্গলকোট ব্লকের অন্তত চারটি পঞ্চায়েত তাদের দখলে থাকবে।
দুর্যোধনবাবুর মতে, সর্বদলীয় বৈঠকগুলিতে পুলিশ নিরপেক্ষ থাকার যে আশ্বাস দিয়েছে, তারা সেই মতো তাদের ভূমিকা ঠিক পালন করলে মনোনয়ন জমা দিতে সমস্যা হবে না। সিপিএমের ভাগীরথী অজয় জোনাল সদস্য ফারুক মির্জা বলেন, “এর পরেও বাধা পেলে ফিরে আসব। রক্ত ঝরুক, এটা আমরা চাই না।”
তৃণমূলের কাটোয়া মহকুমার নেতা অপূর্ব চোধুরী অবশ্য বলেন, “এর আগে পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএম তো আমাদের দাঁড়াতেই দেয়নি। কেতুগ্রামের কান্দরায় গণনার দিন ব্যালট পেপার লুঠ করেছিল। তৃণমূল সরকারের আমলে সে সব হবে না। দরকার হলে আমি দাঁড়িয়ে থেকে সিপিএম প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করব।” দুর্যোধনবাবু জানান, সরাসরি মহকুমাশাসকের দফতরে মনোনয়ন জমা দেওয়া যায় কি না, তাঁরা সে ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছেন। |