ভোটে কাঠি পড়তেই অশান্তির দামামা
ঙ্গলকোট থেকে রায়না, কেতুগ্রাম থেকে জামুড়িয়াপঞ্চায়েত ভোটের প্রক্রিয়া শুরু হলেই জেলাজুড়ে তারা আক্রান্ত হতে পারে বলে বারবার অভিযোগ তুলছিল সিপিএম। মনোনয়নপত্র তোলা শুরু হতেই শুধু সিপিএম নয়, আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ তুলল কংগ্রেস, সিপিআইএমএল (লিবারেশন), বিজেপি-ও। ব্লক অফিস ঘিরে রেখে, মারধর করে তাড়িয়ে দিয়ে বুধবার বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন তুলতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
অশান্তি শুরু হয়েছে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই। জামুড়িয়ার বাহাদুরপুর সিপিএম অঞ্চল কমিটির কার্যালয়ে তৃণমূল হামলা চালায় বলে অভিযোগ। সিপিএমের ওই কমিটির সদস্য রবিলোচন মণ্ডল জামুড়িয়া থানায় অভিযোগ জানান, জনা দশেক তৃণমূল কর্মী তাঁদের কার্যালয়ে চড়াও হয়। আশপাশের মানুষজন প্রতিরোধ করলে তারা পালিয়ে যায়। তৃণমূল নেতা বিজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, “বেশির ভাগ আসনে ওরা প্রার্থী দিতে পারবে নাবুঝতে পেরেই আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেছে।”

বর্ধমানে আহত সিপিআই (এমএল) লিবারেশন প্রার্থীরা।
মঙ্গলবার রাতে বারাবনির দাসকেয়ারি এলাকায় এক সিপিএম নেতার বাড়িতে বোমা মারার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের বারাবনি ২ লোকাল কমিটির সম্পাদক শ্রীধর রাউত বুধবার দুপুরে পুলিশে অভিযোগ করেন, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ তাঁর বাড়ির পাঁচিল টপকে এক দল দুষ্কৃতী ঢোকে। তারা বাড়ির দরজায় একটি বোমা মারে। বিকট আওয়াজে স্থানীয় মানুষজন বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। শ্রীধরবাবুর দাবি, “আমি বেরিয়ে দেখি, দরজার পাশের অংশ কালো হয়ে গিয়েছে। মাটিতে ছড়িয়ে আছে বোমার অংশ। জানলার পাশে রাখা ছিল আর একটি তাজা বোমা। সেটি জল ঢেলে নিষ্ক্রিয় করি।” রাতেই তিনি পুলিশকে বিষয়টি জানান। বুধবার সকালে পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান বারাবনির সিআই সনৎ ভট্টাচার্য। ঘটনাস্থল থেকে বোমার অংশ সংগ্রহ করে পুলিশ।
সিপিএমের বারাবনি জোনাল সম্পাদক অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “আমাদের প্রার্থীদের ভয় দেখাতেই তৃণমূল এ সব শুরু করেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন যে তৃণমূল হতে দেবে না, এর থেকেই তা প্রমাণ হয়। আমরা নির্বাচন কমিশনে বিষয়টি জানাব।” অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। দলের বারাবনির নেতা পাপ্পু উপাধ্যায়ের বক্তব্য, “আমাদের সঙ্গে মানুষ রয়েছেন। বোমাবাজি করে ভোটে জেতার প্রয়োজন আমাদের পড়ে না। নিজেরা এ সব করে জনসমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে সিপিএম।”

কালনায় চলছে মনোনয়ন তোলা।
সিপিএমের অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক মনোজ দত্ত অভিযোগ করেন, জামুড়িয়া ব্লক অফিসের কাছেই প্রধান রাস্তার চারটি মোড়ে তৃণমূল কর্মীরা শিবির করে রয়েছেন। সেখান থেকে তাঁরা বিরোধী কর্মীদের ‘প্রার্থী হলে দেখে নেওয়া হবে’ বলে ক্রমাগত হুমকি দিয়ে চলেছেন। বুধবার বাহাদুরপুরের ব্লক অফিস থেকে সিপিআই জামুড়িয়া লোকাল কমিটির সম্পাদক গোপলসরণ ওঝা এবং দলের নেতা এসএন দুবে মনোনয়ন তুলে বাড়ি ফিরছিলেন। দুপুর ১২টা নাগাদ তাঁদের মোটরবাইক দাঁড় করিয়ে কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। গোপালবাবুরা জামুড়িয়া থানায় অভিযোগ করেন, জনা দশেক তৃণমূল সমর্থক তাঁদের উপরে চড়াও হয়।
এ দিনই পাণ্ডবেশ্বর ব্লক অফিসে মনোনয়ন পত্র তুলতে গিয়েছিলেন ব্লক কংগ্রেস নেতা শিমূল সিংহ-সহ দলের পাঁচ জন। কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি গোপীনাথ পাত্র অভিযোগ করেন, পুলিশের সামনেই তৃণমূল কর্মীরা ব্লক অফিসের সামনে শিমূল সিংহদের গাড়িতে ইটপাথর ছোড়ে। শিমূলবাবুরা গাড়ি থেকে নামতে তাঁদের মারধর করা হয়। গোপীনাথবাবুর অভিযোগ, “খবর পাওয়ার পরে আমরা আক্রান্তদের নিয়ে মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করে এসেছি। প্রতিলিপি পাণ্ডবেশ্বর থানায় পাঠানো হয়েছে।”
অন্ডাল মোড়ে মনোনয়ন পত্র তুলতে যাওয়ার সময়ে সিপিআই কর্মী, সিঁদুলির বাসিন্দা জয়ন্ত সেন প্রহৃত হন বলে অভিযোগ। এ ব্যাপারে অন্ডাল থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা অন্ডাল অঞ্চল কমিটির সম্পাদক প্রভাস রায় অভিযোগ করেন, অন্ডাল মোড়ে বাস থেকে নামতেই জনা পনেরো তৃণমূল সমর্থক জয়ন্তবাবুকে বেধড়ক মারধর করে। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বাবা-মা। বাধা দিতে গেলে তাঁদের নিগ্রহ করা হয় বলেও অভিযোগ। জয়ন্তবাবুর দাবি, “আবার যদি মনোনয়ন পত্র তুলতে যাই তা হলে পরিণতি আরও খারাপ হবে বলে হুমকি দিয়েছে ওরা।” প্রভাসবাবু দাবি করেন, পাণ্ডবেশ্বর ব্লক অফিস ঘিরে তৃণমূল ব্লক সভাপতি নরেন চক্রবর্তীর নেতৃত্বে এক দল সমর্থক বসে আছেন। নরেনবাবুর পাল্টা বক্তব্য, “ওরা পায়ের তলার মাটি হারিয়ে ভুয়ো আতঙ্কে ভুগছে। সিপিএম-কংগ্রেস একজোট হয়ে মিথ্যা অভিযোগ আনছে।”

বারাবনিতে চলছে মনোনয়ন তোলা।
বুধবার বিকেলে দুর্গাপুরের জেমুয়া পঞ্চায়েতে সিপিএমের সমর্থনে নির্বাচনী সভায় আসেন বর্ধমান-দুর্গাপুরের সিপিএম সাংসদ সাইদুল হক। তিনি অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে বিরোধী তৃণমূল এই পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সিপিএম জনপ্রতিনিধিদের ঢুকতে বাধা দিয়েছে। এখন পঞ্চায়েত ভোটের আগে সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে, প্রার্থী হতে বারণ করা হচ্ছে। তৃণমূল যদিও অভিযোগ মানতে চায়নি।
পুলিশ জানায়, আইনশৃঙ্খলা ব্যাপারে সর্বত্র নজর রাখা হচ্ছে। আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দ বলেন, “যে সব অভিযোগ পেয়েছি সেগুলির ক্ষেত্রে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে। শান্তিপূর্ণ ভাবে মনোনয়ন তোলা-জমার ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ দিনের মতো মনোনয়নের প্রক্রিয়া শেষ হতেই বর্ধমান জেলা (গ্রামীণ) কংগ্রেসের তরফে জানানো হয়েছে, আজ, বৃহস্পতিবার থেকে কালনা, কাটোয়া ও বর্ধমানে কোনও ব্লক অফিসে আর মনোনয়ন তোলা-জমার দিতে যাবেন না তাদের পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি প্রার্থীরা। তাদের দাবি, প্রার্থীদের নিরাপত্তা দিতে প্রশাসন ও পুলিশ ব্যর্থ। তাই মহকুমাশাসকের অফিসে মনোনয়ন জমার সুযোগ দিতে হবে। তা না হলে কালনা, কাটোয়া ও বর্ধমানে কোনও ব্লক অফিসে মনোনয়ন জমা দিতে যাবেন না কংগ্রেসের গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরের জন্য। জেলায় নানা অশান্তির অভিযোগ তুলে রাজ্য নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠিয়েছে সিপিএম-ও। চিঠির প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা ও পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জাকে।
প্রার্থী খুঁজে না পেয়ে নানা রকম মিথ্যা অভিযোগ তুলছে সিপিএম। মানুষ কিন্তু সব বুঝছেন।
স্বপন দেবনাথ,
যেখান যেখানে গোলমালের খবর পাওয়া গিয়েছে, পুলিশ উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছে।
এসএমএইচ মির্জা,
ব্লক অফিসের সামনে দুষ্কৃতী জড়ো করেছে তৃণমূল। সব জায়গায় মনোনয়ন তুলতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়,
শান্তিপূর্ণ মনোনয়নের জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কোনও অভিযোগ পেলেই পদক্ষেপ করা হবে।
অজয় নন্দা,
জেলার বেশ কিছু থানা তৃণমূলের কথায় চলছে। ফলে পুলিশের ভূমিকা কিন্তু ঠিক থাকছে না।
অমল হালদার,
মনোনয়ন তোলা ও জমা নেওয়া যেখানে হয়েছে, সেই চত্বরে কিছু ঘটেনি বলেই খবর পেয়েছি।
ওঙ্কার সিংহ মিনা,
কংগ্রেসের জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি আজিজুল হক মণ্ডল অভিযোগ করেন, বর্ধমান ১ ও ২, গলসি, খণ্ডঘোষ, মেমারি ১ ও ২ ব্লকে প্রার্থীদের কোথাও বাস থেকে নামিয়ে মারধর, কোথাও ব্লক অফিস থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডলও অভিযোগ করেন, আউশগ্রাম ২, মেমারি ২ ও খণ্ডঘোষ ব্লক অফিসের কাছে তাঁদের প্রার্থী ও প্রস্তাবকদের মারধর, আটকে রাখার ঘটনা ঘটেছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে চিঠি পাঠিয়ে সিপিএম অভিযোগ করেছে, মনোনয়নের প্রক্রিয়া শুরুর কারণে বুধবার তাদের কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি নিতে দেয়নি পুলিশ। অথচ, বুদবুদ থেকে গলসি পর্যন্ত তৃণমূলের মোটরবাইক মিছিলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মেমারি ১ এবং বর্ধমান ১ ও ২ ব্লকে তাদের নেতা ও প্রার্থীদের উপরে হামলা হয়েছে বলে সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের অভিযোগ। বিজেপি-রও অভিযোগ, মেমারি-২ ব্লকে তাদের প্রার্থীরা প্রহৃত হয়েছেন।
তৃণমূলের জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ অবশ্য সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন।

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.