অন্তত ৫০ কোটি টাকা নয়ছয় ও অপচয়ের অভিযোগে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (এসজেডিএ) একাধিক ইঞ্জিনিয়র ও ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসজেডিএ-এর তরফে এফআইআরে যাঁদের নাম রয়েছে, সেই অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র মৃগাঙ্কমৌলি সরকার, সপ্তর্ষি পাল, ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশের একাংশের ভূমিকা নিয়ে আগেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্ট নেতৃত্ব। ৩১ মে শিলিগুড়ি এবং দার্জিলিঙে আইন অমান্য আন্দোলন করবে জেলা বামফ্রন্ট।
মঙ্গলবার আরও এক ধাপ এগিয়ে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে এসজেডিএ-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য এবং প্রাক্তন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক (সিইও) গোদালা কিরণ কুমারের বিরুদ্ধেও সরাসরি অভিযোগ তুলেছে বামফ্রন্ট। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা এসজেডিএ-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান অশোক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, “যে সময়ে দুর্নীতি হয়েছে বলে এসজেডিএ অভিযোগ করেছে, তখন চেয়ারম্যান ছিলেন রুদ্রনাথবাবু ও সিইও ছিলেন গোদালা কিরণ কুমার। তাঁদের ভূমিকা সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয়। তাঁদের বিরুদ্ধেও এফআইআর করতে হবে।”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী তথা এসজেডিএ-এর বর্তমান চেয়ারম্যান গৌতম দেব অবশ্য জানান, তাঁরা সঠিক পদক্ষেপ করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের উন্নয়নের অভিমুখ নষ্টের চক্রান্ত করে লাভ হবে না। দুর্নীতি বরদাস্ত করব না বলে পদক্ষেপ করেছি। এফআইআর করা হয়েছে। ২ জন গ্রেফতার হয়েছেন। সাধারণ মানুষ ঠিক সময়েই যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁদের সম্বন্ধে জানতে পারবেন।” তাঁর হুঁশিয়ারি, “১৯৯১ সাল থেকে এসজেডিএ-তে যে কাজ হয়েছে তা বিশেষজ্ঞ দল দিয়ে খতিয়ে দেখা হবে। ওই সব কাজে যাঁরা যুক্ত রয়েছেন, কেউ ছাড় পাবেন না।” তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথবাবু জানান, যে হেতু বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে তাই তিনি কোনও মন্তব্য করবেন না। প্রাক্তন সিইও জি কিরণ কুমার বলেন, “বর্তমান চেয়ারম্যান ও সিইও যা বলার বলবেন।”
এ দিন অশোকবাবু অবশ্য তথ্য-পরিসংখ্যান দাখিল করে একাধিক দাবি করেছেন। তাঁর আশঙ্কা, “এসজেডিএ থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা লুঠ হয়েছে। কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার, ঠিকাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মূল অপরাধীদের আড়াল করা হচ্ছে।” তিনি জানান, স্পেশাল ক্যাগ অডিটের পাশাপাশি, ২০১১-র মার্চ থেকে ২০১৩ সালের মার্চ অবধি সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য ও বার্ষিক প্রশাসনিক রিপোর্ট মানুষের সামনে প্রকাশ করতে হবে।
অশোকবাবুর দাবি, “চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব ছেড়ে আসার সময় এসজেডিএ-র তহবিলে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা রেখেছিলেন। পরে রাজ্য ও কেন্দ্রের তরফে তেমন কোনও টাকা আসেনি। কেন্দ্রীয় সরকারের নানা খাতের টাকাও ছিল। কেন্দ্রের তরফেও উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত প্রয়োজন।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঠিকাদার সংস্থাগুলিকে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাজে যে টাকা দেওয়া হয়েছে তার নথি সম্প্রতি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। কাকে কখন কোন প্রকল্পের জন্য কী ভাবে টাকা দেওয়া হয়েছে তা খতিয়ে দেখার পর একাধিক ঠিকাদার সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করে দেওয়া হয়েছে।
|