স্কুলের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক নবম শ্রেণির ছাত্রকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে জলপাইগুড়ি ফণীন্দ্রদেব ইন্সটিটিউশনে মঙ্গলবার যান জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের প্রতিনিধি দল। গত সোমবার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করা হয়। স্কুলের একটি বেঞ্চ ভাঙার অভিযোগে জয়দীপকে মারধর করা-সহ মানসিক অত্যাচার চালানোর অভিযোগ ওঠে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে। সোমবার রাতে ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে দুজনেই এলাকা ছেড়ে চলে গিয়েছেন বলে পুলিশ সূত্রের দাবি। রাতেই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে ঢিল ছুড়ে একাংশ বাসিন্দা হামলা চালায় বলে অভিযোগ।
এ দিন ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যুর কারণে স্কুল বন্ধ রাখা হয়। তবে সকালের দিকে ছাত্র ও একাংশ শিক্ষকরা স্কুলে যান। তখনই কমিশনের দলটি যায়। স্কুলের অন্য শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি জেলা প্রশাসন ও পুলিশকেও পৃথক ভাবে ঘটনাটি তদন্ত করে দেখতে বলেছে কমিশন। কমিশনের সদস্য বিনোদ কুমার টিকো বলেন, “স্কুলে যাতে ছাত্রছাত্রীদের মানসিক হয়রানির শিকার না হতে হয়, তা দেখতে সব রাজ্যকেই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গকেও এ বিষয়ে আগেই বলা হয়েছিল। অথচ সেই মতো যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তা জলপাইগুড়ির অভিযোগেই বোঝা যািচ্ছে। রাজ্য সরকারকে এ বিষয়ে সর্তক হতে আবার নির্দেশ দেব।”
মঙ্গলবার ছাত্রের দেহ নিয়ে মিছিলও করে ছাত্র পরিষদ। সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পরে জয়দীপের দেহ স্কুলে নিয়ে যাওয়ার পথে, পরিবার পরিজনদের সঙ্গে ছিলেন ছাত্র পরিষদের একাংশ কর্মী সমর্থকেরাও। ছাত্র পরিষদের সমর্থকদের উদ্যোগেই ছাত্রের দেহটি জেলা পুলিশ সুপারের দফতরের দিকে নিয়ে যেতে চায়। যদিও পথে পুলিশ বাঁধা দেওয়ায় পূর্ত দফতরের মোড়ে মৃতদেহ নিয়ে মিছিলটি আটকে পড়ে। পরে অবশ্য পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি নিজেই পূর্ত দফতরের মোড়ে এসে ঘটনাটির যথাযথ তদন্তের আশ্বাস দেন।
এর পরে ছাত্রের মরদেহ স্কুলে নিয়ে যাওয়ার পরে অবশ্য স্কুলে কোনও ছাত্র বা শিক্ষক ছিলেন না। স্কুলের তরফে কেউ শ্রদ্ধা না জানানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মৃত ছাত্রের পরিবারের সদস্যরা। অভিযুক্ত শিক্ষকদের শাস্তি চেয়ে এদিন সকাল থেকেই ছাত্র পরিষদের কর্মী সমর্থকরা স্কুলের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। সহপাঠীর মৃত্যুর তদন্ত দাবি করে স্কুলের পোশাকে ছাত্রদের একাংশ পোস্ট অফিস মোড় অবরোধ করে রাখে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের তরফেও জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শককে প্রায় দু ঘণ্টা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পুলিশ সুপার বলেন, “দুই শিক্ষকের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, স্কুলের প্রধান শিক্ষককে শো কজ করা হবে।
অভিযুক্ত শিক্ষকরা কেন পালিয়ে গেলেন তা নিয়েও ধন্দে পুলিশ। মঙ্গলবার দুই শিক্ষকের বাড়িতেই কাউকে পাওয়া যায়নি। বন্ধ বাড়ির সামনে থেকেই ফিরতে হয় পুলিশকে। স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ধীরেন ঝম্পটি বলেন, “গত ২০ বছরের মধ্যে স্কুল থেকে কাউকে বহিস্কার করা হয়নি। এটা স্কুলের সংস্কৃতি নয়। এ ক্ষেত্রেও তেমনটি হয়নি বলেই বিশ্বাস।” স্কুলের পরিচালন সমিতির অভিভাবক প্রতিনিধি অপূর্ব দাস বলেন, “জয়দীপের বাড়ি গিয়েছিলাম। সকলের সঙ্গেই কথা হয়েছে। আমরাও ঘটনাটি পৃথক খতিয়ে দেখছি।” পরিচালন সমিতির শিক্ষক প্রতিনিধি তপন চক্রবর্তী বলেন, “ছাত্রদের সামান্য বকাঝকা করা সব স্কুলেই হয়। এ ক্ষেত্রেও তা হতে পারে। অভিযোগটি বিশ্বাসযোগ্য নয়। ভালভাবে যাচাই করে দেখা প্রয়োজন। যদিও ছেলেটি খুব শান্ত স্বভাবের ছিল।” |