এক জন ভুগোল নিয়ে পড়তে চায়। অন্য জন চায় চিকিত্সক হতে। আর্থিক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে দু’জনে মাধ্যমিকে ভাল রেজাল্ট করেছে। কিন্তু ভবিষ্যতে আর পড়তে পারবে কি না তা নিয়ে দুই কৃতীর পরিবারেই সংশয় দেখা দিয়েছে। জলপাইগুড়ি পান্ডাপাড়া এলাকার দেশবন্ধুনগর এলাকার বাসিন্দা মহাদেব বণিকের দুই মেয়ে ছোট রিয়া। এবার মাধ্যমিকে জলপাইগুড়ি শহরের কদমতলা গার্লস স্কুল থেকে ৫১৩ পায়। রিয়া বাংলায় ৮০, ইংরেজিতে ৬০, অঙ্কে ৬৫, ভৌত বিজ্ঞানে ৮০, জীব বিজ্ঞানে ৮১, ইতিহাসে ৭৩ এবং ভূগোলে ৭৪ পেয়েছে। মহাদেববাবুর মুদিখানার দোকান রয়েছে। দোকানের পিছনে পাকা বাড়িতে স্ত্রী, দুই মেয়েকে নিয়ে থাকেন মহাদেববাবু। রিয়ার মা লিপিকাদেবী বলেন, “মেয়ের ভূগোল নিয়ে পড়ার খুব ইচ্ছা। ভূগোল নিয়ে পড়ানোর খরচ অনেক। সেই সঙ্গতি আমাদের নেই। কী করে পড়াব জানি না” রিয়ার আঁকতে ভাল লাগে। রিয়া বলে, “শিক্ষকদের পাশাপাশি বাড়িতে জ্যাঠতুতো দিদি পুজা মাধ্যমিকে সাহায্য করেছেন। ভুগোল নিয়ে পড়তে চাই। জানি না পারব কী না।”
কার্যত একই অবস্থা জলপাইগুড়ির খারিজা বেরুবাড়ি ২ নম্বর গ্রামপঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা তুষার রায়ের। স্থানীয় বোনাপাড়া হাইস্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়ে তুষার পেয়েছে ৬৪৫। এরমধ্যে বাংলায় ৮৪, ইংরেজিতে ৮৩, অঙ্কে ৯৮, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৬, জীবন বিজ্ঞানে ৯৭, ইতিহাসে ৯০ এবং ভূগোলে ৯৭ পেয়েছে তুষার। দরমার বেড়া আর টিনের চাল দেওয়া দুটি ঘরে তিন ভাই এবং বাবা-মা’র সঙ্গে থাকে তুষার। বাবা ধীরেন্দ্রনাথবাবু দিনমজুর, মা বাসন্তীদেবী অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সহায়িকা। তুষার বড় হয়ে চিকিত্সক হতে চায়। পড়তে চায় জলপাইগুড়ি জেলা স্কুল। কিন্তু বাধা বলতে আর্থিক সঙ্গতি। বাসন্তীদেবী বলেছেন, “কোনও ক্রমে মাধ্যমিক অবধি পড়িয়ে দিতে পেরেছি। ছেলে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে যায়। এর পরে আর পড়াতে পারব কি না জানি না।” বোনাপাড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক কিরণচন্দ্র রায় বলেন, “তুষারকে উচ্চ মাধ্যমিকের সব বই আমরা দেব। সব রকম ভাবে সাহায্য করব তুষারকে।” |