বাগান বন্ধের দু’সপ্তাহের মধ্যে শ্রমিক পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যুর ঘটনায় দ্রুত বাগান চালু করতে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকল শ্রম দফতর। বুধবার জলপাইগুড়ি শ্রম আধিকারিক দফতরে কাঁঠালগুড়ি বাগান পুনরায় চালু করা নিয়ে ওই বৈঠক হবে। এ দিকে সরকারি উদাসীনতায় অনাহার ও অপুষ্টি জনিত কারণে বিনা চিকিত্সায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবিতে সরব হয়েছে সিটু। জেলা শাসক স্মারকি মহাপাত্র বলেন, “বাগান বন্ধের জন্য অনাহার বা অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। বাগানটি যাতে পুনরায় চালু করা যায় সে জন্য উদ্যোগী হয়েছি। বাগানে ১০০ দিনের কাজ চলছে। এ ছাড়া মেডিক্যাল ক্যাম্প করে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতরা হলেন গঞ্জু ওঁরাও (৪২), সীমানি মুন্ডা (২০) এবং বিত্তি ওঁরাও (৫০)। দীর্ঘ দিন থেকে তাঁরা অসুস্থ ছিলেন নানা রোগে। বিত্তি ওঁরাও-কে বীরপাড়া হাসপাতাল থেকে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গত ২৩ মে তাঁর মৃত্যু হয়। বাকিদের বাড়িতে মৃত্যু হয়। ওই তিন জনের মৃত্যুর পরে সোমবার স্বাস্থ্য দফতর মেডিক্যাল ‘ক্যাম্প’ করে বাগানের বাসিন্দা দুজনকে জলপাইগুড়ি ও এক জনকে ধূপগুড়ি হাসপাতালে ভর্তি করায়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, মৃতদের মধ্যে ২ জন যকৃতের রোগে ভুগছিলেন। অন্য জন পেটের সমস্যায় ভুগছিলেন। জলপাইগুড়ির মূখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকার বলেন, “দেড় বছর ধরে একটি সংস্থার মাধ্যমে সপ্তাহে দুদিন ক্যাম্প চালানো হচ্ছিল কাঁঠালগুড়িতে। এখন থেকে ছয় দিন ক্যাম্প চলবে। স্বাস্থ্য কর্তারা মাঝেমধ্যে গিয়ে খোঁজ খবর করবেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিত্সার নির্দেশ দেওয়া হয়।”
২০০২ সাল থেকে আট বছর বন্ধ থাকার পর ২০১০ সালের ২ জুন নতুন মালিক বাগানটি চালু করেন। যে হেতু বাগানের গাছ অত্যন্ত পুরনো আর সেগুলি থেকে পাতা মিলছে না তাই নতুন গাছ রোপণ করে রুগ্ণ দশা কাটিয়ে তুলতে কয়েক বছর সময় দরকার বলে মালিক পক্ষ দাবি করেন। রাজ্য সরকার ফি সপ্তাহে শ্রমিকদের জন্য অন্ত্যোদয়ের চাল, স্বাস্থ্য পরিষেবা সহ ১০০ দিনের কাজ দেওয়ার শর্তে রাজি হয়। ২০১০ সালে শ্রমিকদের মজুরি ছিল ৬৭ টাকা। পরের বছর ত্রিপাক্ষিক চুক্তির পরে সমস্ত বাগান বর্ধিত হারে মজুরি দেয়। পুরনো হারে মজুরি দেওয়া হয় একই মালিকের কাঁঠালগুড়ি ও রামঝোরা বাগানে। মার্চ মাসে শ্রমিক অসন্তোষে রামঝোরা বন্ধ হয়। ১৫ দিন বাদে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের পর মালিক পক্ষ ৮২ টাকা দিতে রাজি হলে বাগানটি চালু হয়। রামঝোরায় মজুরি বাড়ালেও কেন তাঁদের ৬৭ টাকা মজুরি তা নিয়ে কাঁঠালগুড়ির শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ে। |