কেন্দ্রীয় সরকার তথা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতির অভিযোগ করে হাওড়ায় যে ভাবে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তার জবাব দিতে নেমে পড়ল কংগ্রেস। এক দিকে দিল্লির কংগ্রেস নেতৃত্ব কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী জয়রাম রমেশকে হাওড়ায় পাঠিয়ে তথ্য দিয়ে দেখাতে চাইছেন, কেন্দ্র মমতার সরকারের সঙ্গে কোনও বঞ্চনা করেনি। বিজেপি-তৃণমূল আঁতাঁতের প্রসঙ্গও রাজনৈতিক ভাবে হাতিয়ার করতে চাইছেন রমেশ। অন্য দিকে, ৩৫৬ ধারা জারি করার জন্য কেন্দ্রের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর চ্যালেঞ্জের কড়া জবাব দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব। আবার ৩৫৬ নিয়ে কৌশলে মুখ্যমন্ত্রীকে খোঁচা দিয়েছে সিপিএম-ও।
উপনির্বাচনের প্রচারে কাল, বৃহস্পতিবার হাওড়ায় রোড-শো করার কথা তৃণমূল নেত্রীর। সেই দিনই সনিয়া গাঁধী-রাহুল গাঁধীর আস্থাভাজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রমেশকে পাঠানো হচ্ছে হাওড়ায় কংগ্রেসের প্রচারে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, প্রচারে গিয়ে বিজেপি-তৃণমূল আঁতাতের পাশাপাশি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির সঙ্গে তৃণমূলের যোগাযোগের বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন রমেশ। হাওড়ায় এ বার বিজেপি প্রার্থী দেয়নি। সেই সূত্রেই তৃণমূল-বিজেপি’র সমঝোতার কথা এনে পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কাছে বার্তা দিতে চাইছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব। তাঁদের দাবি, গত লোকসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের দৌলতেই সংখ্যালঘু ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু বিজেপি-র সঙ্গে তলে তলে সমঝোতা করে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন মমতা।
হাওড়ায় প্রচারে গিয়ে সোম ও মঙ্গলবার কংগ্রেসকে তুলোধোনা করেছেন তৃণমূল নেত্রী। তিনি মন্তব্য করেছেন, “রোজ ষাঁড়ের মতো গুঁতোচ্ছে কংগ্রেস! কখনও আয়কর দফতর, কখনও সিবিআই, কেন্দ্রীয় সরকারের সব দফতরকে আমাদের পিছনে লাগিয়ে দিয়েছে।” হাওড়ায় দাঁড়িয়েই এর জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে কংগ্রেস। এই ব্যাপারে প্রশ্নের জবাবে রমেশ মঙ্গলবার বলেছেন, “কংগ্রেস প্রতিহিংসার রাজনীতি করে না। তদন্ত কেন, কী কারণে হচ্ছে, তা সবই মানুষ জানে।” তাঁর কথায়, “কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আকছার বঞ্চনার অভিযোগ তুলছেন মুখ্যমন্ত্রী। জবাবে শুধু এটুকুই বলতে পারি, কেন্দ্র কী বিপুল পরিমাণ সাহায্য করছে, তা জানতে মুখ্যমন্ত্রী মাঝে মধ্যে যেন তাঁর মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলে নেন!” কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলন করেও গত দু’বছরে পশ্চিমবঙ্গে গ্রামোন্নয়নের জন্য বিভিন্ন খাতে কেন্দ্রের আর্থিক সাহায্যের সবিস্তার খতিয়ান তুলে ধরার কথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর। প্রসঙ্গত, রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায় ঘোষণার দিনই একশো দিনের কাজের প্রকল্পের জন্য ১৭০০ কোটি টাকা অনুমোদন করেছিলেন রমেশ।
দিল্লিতে রমেশ যখন প্রতিহিংসার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন, কলকাতায় একই ভাবে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব জবাব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর ৩৫৬ ধারা-সংক্রান্ত মন্তব্যের। মুখ্যমন্ত্রী দিল্লিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, “বাঘের বাচ্চা হলে ৩৫৬ ধারা প্রয়োগ করো, বুঝে নেব!”
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য এ দিন পাল্টা বলেছেন, “ওঁর (মমতার) হুঙ্কারে অন্য দলের কিছু আসে যায় না। কংগ্রেস উজবুক দল নয়! হঠকারী কাজ কংগ্রেস করে না! যখন তখন ওঁর মতো ৩৫৬ ধারা দাবি করে না। যখন তা করার প্রয়োজন হবে, যথার্থ ভাবেই কংগ্রেস তা দাবি করবে।”
বাম জমানায় বহু বার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ৩৫৬ ধারা প্রয়োগের দাবিতে সরব হয়েছিলেন বিরোধী নেত্রী মমতা। সেই প্রসঙ্গ স্মরণ করিয়ে দিয়েই সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্য, “ওই দাবি তো উনি করতেন! আমরা বলছি, ৩৫৬ নিয়ে আপনাকে লড়তে হবে না! ওই পরিস্থিতি হলে আমরাই লড়ব! অতীতে অনেক বার যেমন লড়েছি।”
বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তের প্রশ্নে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের জবাবে প্রদীপবাবুর পাল্টা বক্তব্য, “আপনার রাজনৈতিক সংসারের লোকেরা যদি আয়কর বিভাগের তদন্তের বিষয়বস্তু হন, তো কী করা যাবে! আপনিই বা কেন তাঁদের সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছেন?” তাঁর আরও হুঁশিয়ারি, “সময়মতো কংগ্রেস যা ব্যবস্থা নেওয়ার, নেবে। অপেক্ষা করুন!”
দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সুরেই এনডিএ-জমানার ইতিহাস টেনে প্রদীপবাবু তৃণমূল নেত্রীর উদ্দেশে প্রশ্ন তুলেছেন, “এখনও গোপনে গোপনে বিজেপির সঙ্গে যে সম্পর্ক রাখেন না, তা বলার সৎ সাহস আছে আপনার?” কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ারও কটাক্ষ, “হাওড়ায় বিজেপি তো স্পষ্ট করে বলেইছে, কংগ্রেস-সিপিএমকে ভোট দেবেন না। পরোক্ষ ভাবে তার মানে তৃণমূলকে ভোট দিতে বলেছে! রাজনাথ সিংহের সঙ্গে তৃণমূলের এক সাংসদ দেখা করতে গিয়েছিলেন। তাতেই তো ওঁদের বন্ধুত্ব প্রমাণিত!” |