প্রেমিকার বিয়ে ঠিক হয়েছিল অন্যত্র। যে দিন বিয়ের রেজিষ্ট্রি হওয়ার কথা, তার আগের রাতে দলবল নিয়ে প্রেমিকার বাড়িতে চড়াও হয়ে তার মাকে গলার নলি কেটে খুন করার অভিযোগ উঠল প্রেমিকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, গাছে বেঁধে বেধড়ক
মারা হয় মেয়েটির বাবাকেও। লুঠ করা হয় টাকা, গয়না।
আরামবাগের বেউড় গ্রামে সোমবার রাতের এই ঘটনায় পুলিশ দু’জনকে ধরেছে। এসডিপিও (আরামবাগ) শিবপ্রসাদ পাত্র জানান, ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শেখ সাবির-সহ ছ’জনের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
বেউড় গ্রাম লাগোয়া এলাকায় দর্জি এবং মোবাইল সারানোর দোকান চালায় সাবির। পোশাক তৈরির প্রয়োজনে ওই তরুণীও সেই দোকানে যেতেন। সেই সূত্রেই দু’জনের ঘনিষ্ঠতা বলে দাবি পুলিশ সূত্রের। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ওই তরুণীর অন্যত্র বিয়ের ঠিক করেন পরিজনেরা। তা জেনে যায় সাবির। তদন্তকারী অফিসাররা জানান, এর পরেই ওই তরুণীকে নিয়ে গ্রাম ছাড়ে সে। শিয়ালদহ হয়ে ওঠে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে এক বন্ধুর বাড়িতে। সেখানে দিন কয়েক কাটিয়ে সুভাষগ্রামে আর এক পরিচিতের বাড়িতে ওই তরুণীকে রাখে সাবির। |
মেহেরজান বিবির দেহ ঘিরে আত্মীয়-প্রতিবেশীরা। —নিজস্ব চিত্র। |
ওই তরুণীর দাবি, “আমাকে আরামবাগের মুথাডাঙ্গা থেকে জোর একটি গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় সাবির। পরে বুঝি, ও নারী পাচারচক্রে জড়িত। সাবিরের বন্ধুদের কথা শুনে ব্যাপারটা আমার কাছে পরিষ্কার হয়। অন্য একটি মেয়েকেও ওরা আটকে রেখেছিল। তখনই পালিয়ে আসি।” তাঁর বাবা শেখ বাদশা আলমের দাবি, “মেয়ের ফোনে জানতে পারি, ওকে জয়নগরে রাখা রয়েছে। আমরা জয়নগর থানায় অভিযোগও দায়ের করি। মেয়ে ফিরে আসার পর থেকে ফোনে সাবির প্রায়ই আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দিত।”
বাদশা আলম জানান, সোমবার গভীর রাতে দলবল নিয়ে চড়াও হয় সাবির। ঘরে তখন ছিলেন তিনি ও তাঁর স্ত্রী মেহেরজান বিবি (৫৫)। ছেলে শেখ জাহির আব্বাস শ্বশুরবাড়িতে ছিলেন। মেয়ে গিয়েছিলেন পিসির বাড়িতে আইবুড়ো ভাত খেতে। বাদশা আলমের দাবি, “প্রথমে দরজা খুলিনি। ওরা বলে, ‘বিদ্যুৎ অফিস থেকে আসছি। সঙ্গে পুলিশ আছে।’ কী ব্যাপার বুঝতে দরজা খুলতেই শুরু হয় মারধর, লুঠপাট।” তাঁর দাবি, “সাবির মুখে গামছা বেঁধে এসেছিল। গলার আওয়াজে চিনতে পারি। বারবার বলি, ‘সব নিয়ে নাও, প্রাণে মেরো না’। ওরা মারধর করতেই থাকে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই তরুণীর খোঁজে দুষ্কৃতীরা ঘরে ঘরে তল্লাশি চালায়। আলমারি ভাঙার আওয়াজে গ্রামবাসীরা যাতে জেগে না যান, তাই ঘাড়ে চাপিয়ে সেটি নিয়ে তারা বাইরে নিয়ে যায়। সঙ্গে নিয়ে যায় বাদশা আলম এবং মেহেরজানকেও। অভিযোগ, বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে একটি পুকুরপাড়ে আলমারি ভেঙে নগদ টাকা ও সোনার গয়না হাতিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। তারপরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে মেহেরজান বিবির গলার নলি কেটে দেয়। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
পুলিশ জানায়, সাবির বিবাহিত এবং আদতে নন্দীগ্রামের বাসিন্দা। ব্যবসার প্রয়োজনে সে আরামবাগের ওই গ্রামে থাকত। সেখানে তার আত্মীয়েরা থাকেন। এ দিন বেউড় গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ওই তরুণীর বাড়িতে পড়শিদের ভিড়। মেয়েটির দাদা বলেন, “বোন যে বাড়িতে নেই, সে খবর সম্ভবত ওদের কাছে ছিল না। না হলে ওকেও ওরা মেরে ফেলত!” আরামবাগ কোর্টে বিয়ের রেজিষ্ট্রি হওয়ার কথা ছিল তরুণীর। তবে এ দিন আর তা হয়নি। |