পশ্চিমবঙ্গের পরে এ বার ওড়িশা। সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এবং দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে এ বার হেফাজতে নিতে চায় ওড়িশা পুলিশ। বালেশ্বর আদালত এ ব্যাপারে নির্দেশ জারি করেছে বলে ওড়িশা পুলিশ সূত্রের খবর। ওই নির্দেশ বিধাননগর আদালতে পেশ করা হবে। এর মধ্যে মঙ্গলবার আদালত নির্দেশ দিয়েছে, সুদীপ্ত-দেবযানীকে জেল-হাজতে রাখতে হবে। আদালতের নির্দেশে এ দিন বিকেলে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে আলিপুর জেলে।
ওড়িশা পুলিশ সূত্রের খবর, ওড়িশায় আমানতকারীদের কাছ থেকে অন্তত ৭০ কোটি টাকা তুলেছে সারদা গোষ্ঠী। গত ৪ মে ওড়িশা পুলিশের অপরাধ দমন শাখা বালেশ্বরে সারদার অফিস সিল করে দেয়। তল্লাশি চালানো হয় সংস্থার পুরীর অফিসেও। মহারাষ্ট্র পুলিশও সুদীপ্তকে জেরা করতে চেয়ে বিধাননগর এসিজেএম আদালতে আর্জি জানিয়েছে। যদিও সেই আর্জি খারিজ হয়ে যায়। |
|
|
বারুইপুর আদালতে দেবযানী ও সুদীপ্ত। মঙ্গলবার।—নিজস্ব চিত্র |
|
মঙ্গলবার সকালে সুদীপ্ত-দেবযানীকে বারুইপুর মহকুমা আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক দেবদীপ মান্না তাঁদের চার দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন। ১ জুন তাঁদের ফের আদালতে হাজির করানো হবে। একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে অরবিন্দ চৌহানকেও। সুদীপ্ত-দেবযানীর বিরুদ্ধে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পুলিশ জয়নগর ও বারুইপুর থানার দু’টি মামলা দায়ের করেছিল। ওই দু’টি মামলায় দু’জনকে ১৪ দিন জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত। এ দিন সুদীপ্ত-দেবযানীকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায়নি পুলিশ। সরকারি আইনজীবী রফিক আহমেদ মোল্লা বলেন, “তদন্তের স্বার্থে ওই দু’জনকে পুলিশি হাজতে নেওয়া হয়েছিল। বহু নথি উদ্ধার হয়েছে। এখন তদন্ত শেষ পর্যায়ে। আপাতত অভিযুক্তদের আর পুলিশি হাজতে রাখার প্রয়োজন নেই। দরকার হলে তাঁদের ফের পুলিশি হাজতে নেওয়ার আর্জি জানানো হবে।”
এ দিন বিচারকের সামনে সুদীপ্ত-দেবযানীর স্বাক্ষর ও আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। পুলিশি সূত্রের খবর, সুদীপ্ত-দেবযানীর সই করা বহু শংসাপত্র ও নথি পাওয়া গিয়েছে। হাতের ছাপ ও স্বাক্ষরের নমুনা হস্তরেখা বিশারদকে দিয়ে পরীক্ষা করানো হবে। বারুইপুর, চম্পাহাটি ও ফুলতলায় সারদার অফিস থেকে মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়া প্রায় ৫০টি সার্টিফিকেট উদ্ধার করা হয়েছে। ওই সার্টিফিকেটগুলির মূল্য প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা। ওই সব সার্টিফিকেটে সুদীপ্ত-দেবযানীর সই রয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাঁদের সইয়ের নমুনা নেওয়া হয়েছে।
এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ সোনারপুর থানা থেকে দেবযানীকে এবং বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ নিউ টাউন থানা থেকে সুদীপ্তকে বারুইপুর মহকুমা আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। আদালতের সামনে ভিড় করেন বিজেপি এবং যুব কংগ্রেসের সমর্থকেরা। বিক্ষোভকারীদের সামলাতে আদালতের সামনে র্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স মোতায়েন রাখা হয়েছিল। শুনানি চলাকালীন সুদীপ্তকে আদালতের কাঠগড়ায় আসতে বলেন বিচারক। সাড়ে ৫টা নাগাদ সুদীপ্ত-দেবযানীকে নিয়ে আলিপুর জেলের পথে রওনা হয় পুলিশ।
বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট সূত্রের খবর, যে-অডিট সংস্থা সারদা গোষ্ঠীর হিসেব পরীক্ষার দায়িত্বে ছিল, এ দিন তাদের এক কর্মী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন। এ দিনই সারদা গোষ্ঠীর অন্যতম
ডিরেক্টর মনোজ নাগেলকে দুর্গাপুর আদালতে তোলা হয়। তাঁকে ফের ৫ দিন পুলিশ হাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
|