কেন্দ্রীয় কোনও বিশেষজ্ঞ সংস্থা ছাড়া সারদা-কাণ্ডের তদন্ত সম্ভব নয় বলেই মনে করছে কলকাতা হাইকোর্ট।
রাজ্য সরকারের দাবি ছিল, সারদা-কাণ্ডের তদন্তের জন্য পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ যথেষ্টই যোগ্য। উপরন্তু তারা নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করছে বলে সরকারের অভিমত। কিন্তু আদালতের বক্তব্য: রাজ্য পুলিশ মামলাটির তদন্ত ঠিকঠাক করতে পারছে কি পারছে না, সেটা এ ক্ষেত্রে আদৌ গুরুত্বপূর্ণ নয়। এমনকী, রাজ্য পুলিশ এই তদন্তের যোগ্য না অযোগ্য, তা নিয়েও কোনও প্রশ্ন হাইকোর্ট তুলছে না। বস্তুত, এই মামলায় এটি বিচার্য বিষয়ই নয় বলে আদালত মনে করছে। এবং হাইকোর্টের মতে, মামলাটির বহর ও বিস্তৃতির পরিপ্রেক্ষিতেই এর তদন্তভার কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে থাকা উচিত।
মঙ্গলবার সারদা-কাণ্ড নিয়ে আইনজীবী বাসবী রায়চৌধুরীর দাখিল করা জনস্বার্থ-মামলার শুনানির সময় এমনই মন্তব্য করেছেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র। তাঁর বক্তব্য: সারদা-কেলেঙ্কারির যে রকম বহর ও বিস্তার, তা প্রায় নজিরবিহীন। তাই এর তদন্ত যে কোনও সংস্থা করতে পারবে না। আর পাঁচটা খুন বা অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে এই ঘটনাকে এক করে দেখা যে উচিত নয়, তা জানিয়ে বিচারপতি মিশ্র বলেন, “এই অপরাধের জাল দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্য, এমনকী বিদেশেও বিস্তৃত। কোটি কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ। তাই এ জাতীয় অপরাধের তদন্ত যে কোনও সংস্থার পক্ষে করা সম্ভব নয়।” আদালতের মতে, বড় পরিকাঠামো, বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি, সর্বাধুনিক ব্যবস্থা, এবং গোটা দেশ জুড়ে তদন্তকার্যে সমন্বয়সাধনের ক্ষমতাসম্পন্ন কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থাকেই সারদা-তদন্তের দায়িত্ব দিতে হবে। প্রধান বিচারপতি মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে জনস্বার্থ-মামলাটির শুনানি আবার হবে কাল, বৃহস্পতিবার। |
নিউ টাউন থানায় সুদীপ্ত। —নিজস্ব চিত্র |
এ দিনের সওয়ালে রাজ্য সরকারের তরফে জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সারদা-কাণ্ড নিয়ে সরকার তদন্ত করছে। মূল অভিযুক্তেরা গ্রেফতার হয়েছেন, উদ্ধার হয়েছে বিস্তর সম্পত্তি, অনেক নথি। তাই রাজ্য সরকারই দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারবে বলে দাবি করেন জিপি। অশোকবাবুর বক্তব্যের পরে বিচারপতি বাগচী বলেন, তদন্তের ক্ষেত্রে ঘটনার গুরুত্ব ও বিশালত্ব বিচার করেই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। সেবি ও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফেও কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত চালানোর দাবি তোলা হয়।
এ দিন শুনানির গোড়ায় কেন্দ্রীয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট ও কোম্পানি বিষয়ক (কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স) মন্ত্রকের তরফে ডিভিশন বেঞ্চে দু’টি রিপোর্ট জমা পড়ে। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেটের কৌঁসুলি ভাস্করপ্রতাপ বৈশ্য পরে জানান, তাঁরা বিধাননগর পুলিশের কাছ থেকে সারদা-মামলার এফআইআরের প্রতিলিপি চেয়েছিলেন, কিন্তু পুলিশ তা দেয়নি। আর এই প্রেক্ষাপটে তাঁদের অভিযোগ, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেট সারদা-কাণ্ডের তদন্তে নামতে চাইলেও রাজ্য সহযোগিতা করছে না। অভিযোগটির ভিত্তিতে এ দিন হাইকোর্টের নির্দেশ, এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টোরেটের হাতে প্রয়োজনীয় সব নথিপত্র তুলে দিতে হবে। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, আদালতের অনুমতি না-থাকায় ডিরেক্টোরেটকে এফআইআরের প্রতিলিপি দেওয়া হয়নি। এ বার ওই সব নথি তাদের দেওয়া হবে বলে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে।
পাশাপাশি অসম-ত্রিপুরা-ঝাড়খণ্ড-ওড়িশায় সিবিআইয়ের সারদা-তদন্ত কোন পর্যায়ে রয়েছে, প্রধান বিচারপতি মিশ্র এ দিন তা জানতে চেয়েছিলেন সিবিআইয়ের কৌঁসুলি হিমাংশু দে’র কাছে। হিমাংশুবাবু আদালতকে বলেন, তিনি এ ব্যাপারে পুরোপুরি অবহিত নন। তবে কোনও কোনও রাজ্যে প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান। আদালত সিবিআই-কে বলেছে, বৃহস্পতিবার কোর্টের কাজ শুরু হওয়ার সময়ে হলফনামা দিয়ে ওই তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে রিপোর্ট পেশ করতে হবে। সাংসদ কুণাল ঘোষের আইনজীবীর বক্তব্য অবশ্য ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন শুনতে চায়নি। “যাঁর নামে অভিযোগ রয়েছে, তিনি কী ভাবে জনস্বার্থ-মামলায় সামিল হবেন?” প্রশ্ন তুলেছে কোর্ট।
|