পুরসভার এক চিফ ইঞ্জিনিয়ারের কাজে বেশ কয়েক কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে পুর প্রশাসনকে। পুর সূত্রের খবর, রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে নিকাশি পরিকাঠামোর উন্নয়নের কাজের বরাত পাওয়া একটি আন্তর্জাতিক ঠিকাদার সংস্থা দেউলিয়া হয়। সেই খবর পেয়েও তা পুরসভাকে সময় মতো জানাননি ওই ইঞ্জিনিয়ার। ফলে প্রায় ১০২ কোটি টাকার ওই কাজ মাঝপথে আটকে গিয়েছে। যেটুকু কাজ হয়েছে, তার জন্য প্রায় ৪৪ কোটি ইতিমধ্যেই মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে অস্ট্রিয়ার ওই সংস্থাকে। পুরসভা সূত্রে খবর, ওই ইঞ্জিনিয়ার কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন, তাঁর ভুল হয়েছিল।
নিকাশির পরিকাঠামো উন্নয়নে রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে জিআরপি লাইনার বসানোর দায়িত্ব পায় অ্যাঞ্জেলাইনার নামে আন্তর্জাতিক এক ঠিকাদার সংস্থা। ২০১১র নভেম্বরে ওই ওয়ার্ক অর্ডার পায় অস্ট্রিয়ার সংস্থাটি।
মঙ্গলবার পুরসভায় মেয়র পরিষদের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে চিফ ইঞ্জিনিয়ারের (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) বিরুদ্ধে সরব হন একাধিক মেয়র পারিষদ। তাঁদের বক্তব্য, খবরটা সময়ে পেলে ওই সংস্থার সম্পত্তি আটকে রাখা সম্ভব হত। পুর সূত্রের খবর, গত ৮ মার্চ অস্ট্রিয়ার আদালত ওই সংস্থাকে দেউলিয়া হিসেবে ঘোষণা করে। ২২ মার্চ অস্ট্রিয়ার আদালতের পক্ষ থেকে ই-মেলে সেই খবর পুরসভার চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে জানিয়ে দেওয়া হয়। ওই ঠিকাদার সংস্থা দেউলিয়া ঘোষিত হওয়ায় পুরসভার কোনও ক্ষতি হচ্ছে কি না এবং হয়ে থাকলে তার পরিমাণ কত, তা জানাতে বলা হয়। পুরসভাকে জবাব দেওয়ার জন্য ১০-১২ দিন সময় দেয় আদালত। বলা হয়, ওই সময়ের মধ্যে জবাব না পেলে কলকাতা পুরসভার সঙ্গে ঠিকাদার সংস্থাটির চুক্তি বাতিল বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ তার পরে পুরসভা ওই সংস্থার কাছ থেকে আর কোনও পাওনা দাবি করতে পারবে না।
পুর সূত্রের খবর, চিফ ইঞ্জিনিয়ার সেই খবর জানাননি পুর প্রশাসনকে। যদিও পুর-আইনে বলা আছে, কোনও ঠিকাদার কাজ শেষ না করে চলে গেলে কাজ সম্পূর্ণ করার খরচ পুরসভাকে মেটাতে হবে সেই সংস্থাকেই। প্রয়োজনে সংস্থার যন্ত্রপাতি ও আনুষঙ্গিক সম্পত্তি নিজেদের দখলেও নিতে পারে পুরসভা।
চিফ ইঞ্জিনিয়ার সময়ে পুরসভাকে খবর না দেওয়ায় এ দিন মেয়র পরিষদের বৈঠকে বাদানুবাদ হয়। চিফ ইঞ্জিনিয়ার নীলাংশু বসুকে ডেকে পাঠিয়ে মেয়র পরিষদের অনেকে জানতে চান, কেন তিনি পুর-প্রশাসনকে সময়ে বলেননি?
এক পদস্থ অফিসার বলেন, “নীলাংশুবাবু জানান, তিনি ই-মেলটি দেখেননি।” যদিও তা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করেননি মেয়র পারিষদদের অনেকেই। আরও জানা গিয়েছে, বরাত পাওয়া সংস্থাটি দেউলিয়া হওয়ায় অস্ট্রিয়ারই আর একটি সংস্থা ওই কাজ সম্পূর্ণ করতে আদালতে আবেদন জানায়। তা পুরসভাকে জানায় অস্ট্রিয়ার আদালত। আদালতের তরফে জানানো হয়, পুরসভা রাজি থাকলে তবেই নতুন সংস্থা সেই কাজ নিতে পারবে।
পুর সূত্রের খবর, নীলাংশুবাবু দ্বিতীয় সংস্থাটিকে ওই কাজের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য পুরসভার কাছে প্রস্তাবও পাঠান। পুরসভার আইন দফতরের মতে, বরাত পাওয়া ঠিকাদার সংস্থার অসমাপ্ত কাজ বিনা দরপত্রে অন্য সংস্থাকে দেওয়া যায় না। ওই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে পুর-অর্থ দফতরও বলে, পুর-অনুমতি ছাড়া কেউ দ্বিতীয় সংস্থাকে বরাত দিতে পারে না।
শেষে ঠিক হয় রাজ্যের অ্যাকাউন্ট্যান্ট জেনারেলের মত চাওয়া হবে। নীলাংশুবাবু এ নিয়ে কিছু বলেননি। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে নিকাশির কাজে একটা সমস্যা হয়েছে। সমাধানের পথ খোঁজা হচ্ছে।” |