সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি আর বেআইনি ভাবে ভূগর্ভের জল তুলতে পারবে না। সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক এই মর্মে একটি নির্দেশ জারি করেছেন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রতিদিন সেক্টর ফাইভের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পাঞ্চলে লুকিয়ে-চুরিয়ে যে ভাবে হাজার-হাজার গ্যালন জল তোলা হচ্ছে, তাতে জেলা প্রশাসন যথেষ্ট ক্ষুব্ধ। এ বার কড়া হাতে সেক্টর ফাইভে জল তোলা বন্ধ করার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে জেলা-প্রশাসন। যে কারণে শিল্পাঞ্চল জুড়ে নজরদারি চালানোর জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হচ্ছে। যারা নিষেধাজ্ঞার পরেও গভীর নলকূপ লাগিয়ে জল তুলবে, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ভূগর্ভের জল তোলা বন্ধ করার জন্য মার্চ মাসে জেলা-প্রশাসন একটি বৈঠক ডাকে। তাতে উত্তর ২৪ পরগনার সব ক’টি পুরসভা-সহ সরকারি স্তরের বিভিন্ন কর্তারা হাজির ছিলেন। মূলত জেলায় ভূগর্ভস্থ জল তোলা কী ভাবে বন্ধ করা যায়, সে বিষয়েই প্রত্যকের মতামত নিয়ে একটি ‘অ্যাকশন প্ল্যান’-এর কথা ভাবা হয়। যার সূত্র ধরেই সেক্টর ফাইভ শিল্পাঞ্চলের জন্য এই নির্দেশ বলে মনে করা হচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল এ ব্যাপারে জানান, সরকারের নির্দিষ্ট জায়গা থেকে অনুমতি নিয়েই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি ভূগর্ভস্থ জল তুলতে পারবে। এ বিষয়েই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ‘সেক্টর ফাইভ স্টেক হোল্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট কল্যাণ কর জেলা-প্রশাসনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর মতে, সেক্টর ফাইভে অধিকাংশই বহুতল অফিস বাড়ি। এই অঞ্চলে মাটির তলার জলস্তর ধরে রাখা খুবই জরুরি। শিল্পাঞ্চলের স্বার্থেই জল তোলা বন্ধ করে ‘নবদিগন্ত ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট’ সংস্থার কাছ থেকে জল কেনা উচিত বলে কল্যাণবাবু মনে করেন। পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, জল সরবরাহের ক্ষেত্রে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে প্রশাসনকে।
সেক্টর ফাইভে পানীয় জল সরবরাহ ও নিকাশি ব্যবস্থার জন্য আধুনিক পরিকাঠামো তৈরি করেছে নবদিগন্ত ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট সংস্থা। টাটা গোষ্ঠীভুক্ত দুই সংস্থা ‘জুসকো’ ও ‘ভোল্টাস’ রাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে গড়ে তুলেছে এই সংস্থাটি। আধুনিক এই পানীয় জল-প্রকল্পটি গড়তে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৭০ কোটি টাকা। যার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ‘জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আর্বান রিনিউয়াল মিশন’ তহবিল থেকেও অর্থ মঞ্জুর করে। জল বণ্টন ও নিকাশি নকশার পরিকাঠামো এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে প্রতিদিন ৩০ লক্ষ গ্যালন জল সেক্টর ফাইভ শিল্পতালুকে সরবরাহ করা যায়। আবার আড়াই লক্ষ গ্যালনের মতো বর্জ্য জল নিকাশি নালার মাধ্যমে সংগ্রহ করে, তা পরিশোধন করার পরে আশপাশের ভেড়িগুলিতে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য সেক্টর ফাইভে বছর দুয়েক আগে একটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরি করে প্রায় শ’দুয়েক সংস্থাকে জল সরবরাহ করাও শুরু হয়ে গিয়েছে।
কিন্তু অভিযোগ, সরকারি ভাবে জলের লাইন নিয়েও শিল্পাঞ্চলের বহুতল অফিসগুলি লুকিয়ে পাম্প বসিয়ে মাটির তলা থেকে বহু গ্যালন জল তুলে নিচ্ছে। এর আগেও সেক্টর ফাইভ নবদিগন্ত কর্তৃপক্ষ নিষেধাজ্ঞা জারি করে জল তোলা বন্ধ করার চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু তারা সফল হয়নি। ফলে বহু কোটি টাকা খরচ করে শিল্পাঞ্চলে জল সরবরাহ প্রকল্পটি এখনও পর্যন্ত লাভের মুখ দেখতে পায়নি। উল্টে জলকর বাবদ যা আদায় হচ্ছে, তা ব্যাঙ্কের ঋ
ণ শোধ করতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে নবদিগন্ত ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট সংস্থার এক কর্তা জানাচ্ছেন। তাঁর দাবি, বর্তমানে তাঁরা প্রতি হাজার লিটার জলের দাম নিচ্ছেন ৩০ টাকা ২০ পয়সা দরে। যা বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদের থেকে অনেক কম। তবু সংস্থাগুলি তাদের চাহিদামতো জল না কিনে প্রয়োজনের অধিকাংশটাই মাটি থেকে তুলে নিচ্ছে। |