দুই ইনিংসের মাঝে কিছু ক্ষণের বিরতি। এ ছাড়া, মাঝেমধ্যে ‘স্ট্র্যাটেজিক টাইম-আউট’। খেলার মাঝে ওই সব বিরতির অপেক্ষাতেই ওত পেতে ছিল ওরা। আর তাতেই হাতে চলে এসেছিল বেশ কয়েক হাজার টাকার মাল। নিমেষে তা ঢুকেও গিয়েছিল নি-ক্যাপে। কিন্তু বাদ সাধল দুঁদে গোয়েন্দার চোখ। বমাল ধরা পড়ল ঝাড়খণ্ডের পাঁচ চোর। আর তাদের নি-ক্যাপ থেকে বেরিয়ে পড়ল আটটা দামি মোবাইল।
রবিবার সন্ধ্যার ভরা ইডেন। আইপিএল-এর ফাইনাল ম্যাচ। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স বনাম চেন্নাই সুপার কিংসের খেলা দেখতে মাঠে হাজির হাজার পঞ্চাশেকেরও বেশি দর্শক। সেই ভিড়ে খান পঞ্চাশেক দামি মোবাইল সরাতে পারলেই কেল্লা ফতে। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, এমনটা ভেবেই ঝাড়খণ্ডের রাজমহল থেকে আসা পনেরো-কুড়ি জনের একটি দল রবিবার সন্ধ্যায় রীতিমতো টিকিট কেটে ইডেনের ডি, ই, এফ ব্লকে ঢুকেছিল। সেই দলটি মোবাইল চুরিতে ওস্তাদ বলে জানিয়েছে পুলিশ। |
গোয়েন্দাদের দাবি, ধরা পড়ার পরে লক্ষ্মণ সিংহ, গোবিন্দ মাহাতো, অশোক নোনিয়া, অক্ষয় নোনিয়া ও কৃষ্ণ নোনিয়া নামে পাঁচ দুষ্কৃতী জেরায় মোবাইল চুরির গোটা পরিকল্পনা জানিয়ে দিয়েছে। কী সেই ছক?
গোয়েন্দারা জানান, ধৃতেরা ঠিক করেছিল, ইডেনের বাইরে গাড়ি পার্কিংয়ের কাছে ঘোরাঘুরি করবে না। কারণ, সেখানে পুলিশ-পাহারা থাকে। আবার পুলিশের নজর এড়িয়ে লুকিয়ে-চুরিয়ে ইডেনে ঢোকার পরিকল্পনাও তারা করেনি। বরং ভাল জামা-প্যান্ট, জুতো পরে বুক ফুলিয়ে আইপিএল ফাইনাল দেখতে ঢুকেছিল। পুলিশের সামনে দিয়ে গটগট করে হেঁটে যে যার জায়গায় বসেও পড়ে। শুধু মোবাইল হাতানোর সময় হিসেবে বেছে নিয়েছিল খেলার মাঝের বিরতিগুলো।
গোয়েন্দাদের দাবি, জেরায় এক দুষ্কৃতী জানিয়েছে, এর আগে ইডেনে আইপিএল ম্যাচ দেখতে এসে তাদের অভিজ্ঞতা হয়, বিরতির সময়ে স্টেডিয়ামের ভিতরে বিভিন্ন খাবারের স্টলে ভিড় উপচে পড়ে। তাড়াতাড়ি খাবার কিনে বসার জায়গায় ফিরতে ব্যস্ত থাকেন দর্শকেরা। তার মধ্যে কারও খেয়ালই থাকে না পকেট থেকে কে কী বার করে নিচ্ছে।
কিন্তু মোবাইল হাতিয়ে ওই চোরেরা কেন নি-ক্যাপে রেখেছিল?
গোয়েন্দারা জানান, অশোক, অক্ষয় জানিয়েছে, জামা বা প্যান্টের পকেট থেকে নিমেষে মোবাইল তুলে নিজেদের জামা বা প্যান্টের পকেটে ঢোকালে বিস্তর ঝুঁকি থাকে। পুলিশ বা মোবাইল ফোনের মালিক ধরে ফেললে সুড়সুড় করে নিজেদের পকেট থেকে বের করে দিতে হয় চোরাই মাল। তাই নি-ক্যাপ। কারণ মোবাইলের মালিক বা পুলিশ চেপে ধরলেও চট করে হাঁটুতে হাত বুলিয়ে চোরাই মাল রয়েছে কি না তা দেখবে না।
লালবাজারের এক গোয়েন্দা-কর্তা জানান, ওয়াচ সেকশনের (নজরদারি) ওসি বিধান দাস ও তাঁর দলবল সে দিন ইডেনের ডি ব্লকের খাবারের স্টলের সামনে ছিলেন। লক্ষ্মণ, গোবিন্দদের ঘোরাঘুরি করতে দেখে সন্দেহ হয়েছিল তাঁদের। কিন্তু দর্শকের ভিড়ে প্রথমে ঠিক বুঝতে পারেননি। পরের বিরতিতে বিধানবাবু নজর করেন, এক যুবক বারবার নি-ক্যাপ ঠিক করছে। তার মতো আরও দুই যুবককে একই ভাবে নি-ক্যাপ ঠিক করতে দেখে তাঁর সন্দেহ বাড়ে। ওই যুবকদের চেপে ধরে তাদের হাঁটুতে হাত বোলাতেই বেরিয়ে পড়ে দামি মোবাইল। ততক্ষণে গোয়েন্দারা আরও দুই পকেটমারকে ধরে ফেলেছেন। কিন্তু পনেরো-কুড়ি জনের ওই দলের বাকিরা চম্পট দেয়। |