আইপিএল ফাইনালের সন্ধেতেই ক্রিকেট-জুয়া চালানোর অভিযোগে মহানগরের বিভিন্ন প্রান্তে তিন জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তাদের কাছে মিলেছে নগদ কয়েক লক্ষ টাকা, ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন। যার জেরে ফের স্পষ্ট হয়ে উঠেছে কলকাতায় ক্রিকেট বেটিং-চক্রের রমরমার ছবিটা।
পুলিশ জানায়, কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ), লালবাজারের গুন্ডাদমন শাখা ও বিধাননগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একটি যৌথ দল রবিবার বাগুইআটিতে পবন অগ্রবাল নামে এক জনকে গ্রেফতার করে। তাঁর কলকাতা ও বেঙ্গালুরুতে পরিবহণ ব্যবসা রয়েছে। সন্ধেতেই বড়বাজারে পাকড়াও হয় আরও দুই বুকি আদিত্য দামানি ও রাজ শর্মা। এ দিন গভীর রাত পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন প্রান্তে তল্লাশি চলেছে। গোয়েন্দারা জানান, এ দিন ইডেনের ভিতরে গুন্ডাদমন শাখার একটি বিশেষ দলকে মোতায়েন করা হয়েছিল। আর একটি দল এবং এসটিএফ-কে রাখা হয়েছিল শহরের বিভিন্ন প্রান্তে নজরদারির জন্য। নজরদারির এই ‘জোড়া ফলা’ই এ দিন সাফল্য এনেছে বলে লালবাজারের কর্তাদের দাবি।
পুলিশ-সূত্রের খবর: চলতি আইপিএলে স্পট ফিক্সিং-কাণ্ডে শ্রীসন্ত-সহ তিন ক্রিকেটার ধরা পড়ার পরেই কলকাতা ও আশপাশে গোয়েন্দারা জাল বিছিয়েছিলেন। বেটিং-চক্রে জড়িত সন্দেহে গত বুধবার উত্তর কলকাতার গৌরীবাড়িতে গ্রেফতার হয়েছেন ফিল্ম প্রযোজক অজিত সুরেখা-সহ দশ জন। পুলিশ সূত্রের দাবি, সুরেখার মোবাইলের কললিস্ট পরীক্ষা করে ইতিমধ্যে আরও কিছু সূত্র মিলেছে। সেগুলো কী?
তদন্তকারীরা জানান, ওই কললিস্ট থেকে মিলেছে টালিগঞ্জের কয়েক জন অভিনেতা-অভিনেত্রীর নম্বর। যদিও ক্রিকেট-জুয়ার সূত্রেই সেগুলিতে কথোপকথন হয়েছিল কি না, পুলিশ এখনও সে ব্যাপারে নিশ্চিত নয়। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, গত ক’দিন ধরে দফায় দফায় কললিস্ট খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কিছু দিশা শিগগিরই মিলবে বলে তাঁরা আশাবাদী। এবং এই কললিস্ট ঘাঁটতে গিয়েই নতুন একটি তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের সামনে। সেটা কী?
পুলিশ-সূত্রের খবর: সুরেখার ডেরা থেকে বাজেয়াপ্ত মোবাইলের কয়েকটির নম্বরের শেষ তিনটে অঙ্ক ৪৪৪। জেরায় তদন্তকারীরা জেনেছেন, ৪৪৪ হল অজিত সুরেখার বিশেষ পছন্দের সংখ্যা (লাকি নাম্বার)। বেশি দাম দিলে পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার থেকে এ জাতীয় সিম পাওয়া যায়। তদন্তকারীদের দাবি: শেষে ‘৪৪৪’ থাকা সিমের ফোনগুলি অজিত ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতেন। সেগুলোয় এসটিডি বা আইএসডি কল আসেনি। মনে হচ্ছে, বিপদ এড়াতে অজিত ওই ‘বিশেষ’ নম্বরের ফোনে জুয়া সংক্রান্ত কথাবার্তা বলতেন না। মন্তব্য এক পুলিশ-কর্তার।
লালবাজার-সূত্রের খবর: চলচ্চিত্র প্রযোজনার পাশাপাশি রেসের মাঠে দীর্ঘ কাল বেটিং-ব্যবসা চালিয়েছেন অজিত। বছর কয়েক আগে বাইশ গজের জুয়ায় তাঁর হাত পাকানো শুরু। গোয়েন্দা-সূত্রের অনুমান, সুরেখাকে রেসের মাঠ থেকে ক্রিকেটের ময়দানে নিয়ে যাওয়ার পিছনে শহরের কয়েক জন পুরনো বুকির অবদান রয়েছে, যাদের মাধ্যমে তাঁর সঙ্গে আন্তর্জাতিক বেটিং-চক্রের যোগাযোগও গড়ে ওঠে। এক গোয়েন্দা-কর্তা জানান, অজিত ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের কাছে পাওয়া মোবাইলের কললিস্ট ঘেঁটে কয়েকটি বিদেশি নম্বরের (আইএসডি কল) হদিস মিলেছে। মিলেছে ভিন্ রাজ্যের কিছু নম্বরও। বেটিং-চক্র ভেদ করতে তাই তোলপাড় করা হচ্ছে অজিত সুরেখার কললিস্ট।
|