বিশ্বকাপ জিততে তাঁর ২১ বছর লেগেছে। তবু ২ এপ্রিল, ২০১১-র স্বপ্নালু ওয়াংখেড়ে-রাতে তিনি ওয়ান ডে ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর ঘোষণা করেননি। আরও এক বছর নিয়েছিলেন।
আইপিএল জিততে তাঁর লাগল মাত্র ছ’বছর। কিন্তু সে দিনই২৬ মে, ২০১৩-র আতসবাজির ঝলসানি-মোড়া ইডেনে তিনি জানিয়ে দিলেন, এই শেষ। আইপিএল সেভেন-এ আর তাঁকে দেখা যাবে না।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আগেই চলে গিয়েছেন। রাহুল দ্রাবিড়েরও এটাই ছিল শেষ আইপিএল। তিনি সচিন তেন্ডুলকরও না থাকলে আইপিএলে রইলটা কী? স্বয়ং সুনীল গাওস্কর পর্যন্ত বিস্মিত। ইডেন দেখল এক অভুতপূর্ব মুহূর্ত। প্রকাশ্যে, সত্তর হাজার দর্শকের সামনে মাঠে দাঁড়িয়েই স্বয়ং লিটল মাস্টার আমজনতার মতোই অনুরোধ করছেন মাস্টার ব্লাস্টারকে। “সচিন, মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এ বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় সামনের বছর তো আইপিএলের প্রথম ম্যাচ ওয়াংখেড়েতে। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সই খেলবে। অন্তত নিজের শহরে ওই একটা ম্যাচ খেলো না?” সচিন মুচকি হাসলেন। “খুব লোভনীয় প্রস্তাব সন্দেহ নেই। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, এটাই সেরা সময় আইপিএলকে বিদায় জানানোর।” |
ছ’বছরের অপেক্ষা শেষ। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
কিছুক্ষণ আগেই একই কথা বলেছেন সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করা কিংবদন্তি মুম্বইকর। “এটাই আমার শেষ আইপিএল। আইপিএলকে বিদায় জানানোর আমার কাছে এটাই সেরা সময়। কারণ এই মুহূর্তে আমার হাতে আইপিএল ট্রফিটা রয়েছে। বিশ্বকাপ জিততে আমি একুশ বছর অপেক্ষা করেছি। সে জায়গায় তো আইপিএল ট্রফি পেতে ছ’বছর লাগল।” স্ত্রী অঞ্জলি আর মেয়ে সারা ইডেনেই ছিলেন। সচিনের পরিবারও কি জানত বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের এটাই বিদায়ী আইপিএল ম্যাচ? নইলে সারাক্ষণ ডাগআউটে বসে থেকে মুম্বইয়ের প্রথম আইপিএল খেতাব পাওয়া দেখলেও কেন ম্যাচ শেষে ওই ভাবে মাঠের ভেতর সচিনের কাছে ছুটে আসবেন অঞ্জলি আর সারা? তার পর সেই বিরল ফ্রেম সবার চোখের সামনে সচিনের গালে অঞ্জলির চুম্বন!
৭৮ আইপিএল ম্যাচে ১১৯.৮১ স্ট্রাইক রেট রেখে ২৩৩৪ রান। গড় ৩৪.৮৩। সেঞ্চুরি ১টা, হাফসেঞ্চুরির সংখ্যা ১৩। এখানেই কি শেষ আইপিএল-এ সচিনের অভাবিত রেকর্ডের কোলাজ-সরণি? সম্ভবত না। কমেন্ট্রি বক্সের জন্য এ দিন নেট প্র্যাক্টিসটাও যে সেরে রাখলেন। হরভজনের বলে সিএসকে-র ক্রিস মরিস কট বিহাইন্ড। মুম্বই ডাগআউটে বসা সচিনের কানে তখন কমেন্ট্রি বক্সের মাইক্রোফোন। আম্পায়ারের আঙুল ওঠার আগেই সচিন বলে দিলেন, “ভাজ্জির ডেলিভারিটা দুসরা ছিল। ব্যাটসম্যান বাউন্সে ঠকে গিয়েছে।” কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে টিভি রিপ্লেতে দেখা গেল সচিনের ব্যাখার হুবহু রিপ্লে! ভাষ্যকার হর্ষ ভোগলে রসিকতা করলেও সেটার মধ্যে যেন চাপা আশঙ্কা“সচিন, আপনি ক্রিকেট কমেন্ট্রি করলে তো আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে!”
ঠাট্টা। আবেগ। বিরল মুহূর্তের জন্ম নানান কোলাজের মধ্যেই শনিবারের রাত আইপিএল গ্রহে ঐতিহাসিক হয়ে থাকল। যবনিকা নেমে এল সচিন রমেশ তেন্ডুলকরের আইপিএল-জীবনের উপর। চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি হাতে। “ট্র্যাভেল-প্র্যাক্টিস-ম্যাচ, তার পর আবার ট্র্যাভেল, এ ভাবে টানা ধকল সামলে ম্যারাথন লিগে নিজেদের সফল ভাবে যারা টিকিয়ে রাখতে পারে তাদের হাতেই শেষ পর্যন্ত আইপিএলের ট্রফি ওঠে,” বলেও সচিন স্বীকার করে গেলেন, “তবে ব্যক্তিগত ভাবে আমার সেরা হল তৃতীয় আইপিএলটা। সে বার মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ফাইনালের আগে পর্যন্ত অপরাজিত ছিল।” আর এ বারেরটা? “আইসিং অন দ্য কেক,” সচিন থামলেন। |