রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল কোচবিহার। শুক্রবার রাতে সিপিএম জেলা সম্পাদকের গাড়িতে হামলার ঘটনার রেশ মিটতে না মিটতেই শনিবার তৃণমূলের জেলা সভাপতির গাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠল। এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ দিনহাটার নান্দিনায় ঘটনাটি ঘটে। গোলমালের সময় দুষ্কৃতীরা রবীন্দ্রনাথবাবুর গাড়ি লক্ষ্য করে দুই রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে বলেও পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। ঘটনায় উভয় পক্ষের অন্তত ৬ জন জখম হন। জখম তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে দু’জনকে জেলা সদর হাসপাতালে এবং এক জনকে দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। অন্য দিকে, ফরওয়ার্ড ব্লকের এক জখম সমর্থককে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
তৃণমূলের অভিযোগ ফরওয়ার্ড ব্লক ও সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালায়। বামফ্রন্ট নেতৃত্ব অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করে ঘটনার জন্য তৃণমূলকেই দায়ী করেছেন। এ দিকে দলের জেলা সম্পাদকের গাড়িতে হামলার প্রতিবাদে সিপিএমের ডাকে শনিবার কোচবিহারের বাণেশ্বর ও আমবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতে ১২ ঘণ্টার বন্ধ পালিত হয়। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। দু’টি অভিযোগই খতিয়ে দেখা হবে।” |
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার বামফ্রন্টের দু’টি অফিস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নয়ারহাট এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ঘটনার জেরে শনিবার নান্দিনায় দুই শিবিরের সমর্থকদের মধ্যে দলীয় দফতর ভাঙচুর ও পাল্টা ভাঙচুরের অভিযোগ নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। ওই সময় দলীয় কর্মী বৈঠকে যোগ দিতে এলাকায় যান তৃণমূল জেলা সভাপতি। দলের অভিযোগ, নান্দিনা চৌপথী লাগোয়া এলাকায় গাড়ি পৌঁছলে একদল দুষ্কৃতী লাঠিসোটা নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। ওই সময়ে রবীন্দ্রনাথবাবুর গাড়ির সঙ্গে থাকা তৃণমূলের বাইক আরোহী কয়েক জন সমর্থক ওই ঘটনা দেখে প্রতিবাদ করেন। বাদানুবাদের সময় দু’পক্ষের সমর্থকেরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। তৃণমূল জেলা সভাপতি বলেন, “বামফ্রন্টের কর্মী সমর্থকেরা শনিবার নান্দিনায় আমাদের অফিস ভাঙচুর করে। ওই অফিস দেখে কর্মী বৈঠক করার পরিকল্পনা ছিল। রাস্তায় সিপিএম ও ফরওয়ার্ড ব্লক আশ্রিত দুষ্কৃতীরা গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। দলীয় কর্মীরা বাঁধা দিলে হামলা চালায়।”
তৃণমূলের দাবি, ওই ঘটনায় ইকবাল হোসেন নামে এক দলীয় কর্মীর মাথায় চোট লাগে, জখম হন আরও পাঁচ জন। রবীন্দ্রনাথবাবুর অভিযোগ, “দুষ্কৃতীরা আমার গাড়ি লক্ষ্য করে দুই রাউন্ড গুলি ছোড়ে। ররাত জোরে বেঁচেছি। পুলিশকে সমস্ত ঘটনা জানিয়েছি।” যদিও ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ-র পাল্টা অভিযোগ, “এলাকায় গিয়ে তৃণমূল জেলা সভাপতি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পুলিশকে সামনে রেখে সোবান আলি নামে এক সিপিএম কর্মীর বাড়ি ভাঙচুর করান। এর পরেই উত্তজনার সৃষ্টি হয়। ওই ঘটনা থেকে নজর ঘোরাতেই এই অভিযোগ তোলা হচ্ছে।” তৃণমূল সভাপতির উপরে কোনও হামলা হয়নি বলেই তাঁর দাবি। উদয়নবাবু আরও বলেন, “গুলি চালালে কার্তুজের খোল তো মিলবে! সেটা কোথায়?” সিপিএমের জেলা সম্পাদক তারিণী রায় বলেন, “তৃণমূল সমর্থকেরা ধারাবাহিক আক্রমণ করছে। তা আড়াল করতেই বাজারে গুলি চালনার গল্প ছাড়া হয়েছে।” হামলার প্রতিবাদে এ দিনই মরাপোড়া চৌপথীর দিনহাটা রোডে প্রায় দুই ঘণ্টা পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় দলীয় সমর্থকেরা। |