গোটা ম্যাচটাই প্রথমে ফিক্স করে ফেলা হত। তার পর সেই ম্যাচের ওপরেই তিনি মোটা টাকার বাজি ধরতেন। সিইও হিসেবে দলের গোপনতম বহু খবর তিনি জানতেন। সেই সব হাঁড়ির খবর টাকার বিনিময়ে পৌঁছে দিতেন বুকিদের কাছে। আজ গুরুনাথ মায়াপ্পনকে আদালতে তুলে এমনই সব বিস্ফোরক দাবি করল মুম্বই পুলিশ। মুম্বইয়ের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত আজ ২৯ মে পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠিয়েছে গুরুনাথকে।
মুম্বই পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) হিমাংশু রায় জানান, গত দু’বছর ধরে আইপিএলে বেটিং করে এসেছেন গুরুনাথ। শুধু সিএসকে নয়, অন্যান্য টিমের ম্যাচেও বেটিং করেছেন তিনি। চলতি মরসুমে এন শ্রীনিবাসনের জামাই যদিও এক কোটি টাকা হেরেছেন, কিন্তু দেখা গিয়েছে, চেন্নাইয়ের ম্যাচগুলোয় সাধারণত টাকা জিতেছেন তিনি। বেটিংয়ের মাধ্যম ছিলেন বিন্দু দারা সিংহ।
গত কাল মাঝরাতে গ্রেফতারের পর আজ সকাল থেকেই গুরুনাথকে জেরা শুরু করে পুলিশ। এক সময়ে বিন্দুকেও তাঁর সঙ্গে বসানো হয়। দুপুরে গুরুনাথকে তোলা হয় আদালতে। সরকারি কৌঁসুলি ওয়াজিদ শেখ শুনানিতে বলেন, ম্যাচ চলাকালীন বিন্দু ও গুরুনাথের মধ্যে অজস্র বার ফোন চালাচালির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। প্রথমে গুরুনাথ ফোন করতেন বিন্দুকে, তার পর বাজি ধরতে বলে বিন্দুর ফোন যেত বুকি পবন জয়পুর, সঞ্জয় জয়পুর বা জুপিটারের কাছে। পুলিশ দেখতে চাইছে, স্ট্র্যাটেজিক টাইমআউটের সময়েও গুরুনাথ মাঠ থেকে বিন্দুকে ফোন করতেন কি না। সেই সঙ্গে, টাকাপয়সার ব্যাপারে তাঁদের বোঝাপড়া কী ছিল, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ জানায়, গুরুনাথের চারটি মোবাইল। কিন্তু সব ক’টির সিমকার্ড আসল কাগজপত্র দিয়েই নেওয়া হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত নয়।
পুলিশের দাবি, বিন্দু দু’জন বুকিকে দুবাইয়ে পালাতে সাহায্য করেছিলেন। এদের মধ্যেই এক জন তাঁর কাছে আম্পায়ার আসাদ রউফের জন্য একটি পার্সেল রেখে গিয়েছিল। কিন্তু রউফ তত দিনে ভারত থেকে পাততাড়ি গোটানোয় সেটি আর তাঁর হাতে আসেনি। বিন্দুর সূত্রে রউফের সঙ্গে গুরুনাথের ঠিক কী সম্পর্ক ছিল, তা-ও খতিয়ে দেখতে চায় ক্রাইম ব্রাঞ্চ।
আদালতে সরকারি কৌঁসুলি বলেন, “ক্রিকেট স্বাভাবিক খেলা। কিন্তু এঁরা (গুরুনাথরা) তাকে অস্বাভাবিক করে তুলেছেন।” গুরুনাথের সাত দিন পুলিশ হেফাজতের আর্জি জানান তিনি। গুরুনাথের আইনজীবী আবাদ পণ্ডা অবশ্য যুক্তি দেন, গুরুনাথ যে হেতু পুলিশের সমনে সাড়া দিয়ে এসেছেন, অতএব তাঁকে গ্রেফতার করা যায় না। তা ছাড়া, তাঁর তো আখেরে এক কোটি টাকা ক্ষতিই হয়েছে। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম পি পাঘে গুরুনাথের পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেন। যুগ্ম কমিশনার জানান, গুরুনাথের বাড়িতেও তল্লাশি চালাবেন তাঁরা। আজ কলকাতায় যান বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট শ্রীনিবাসন। কিন্তু জামাইয়ের সঙ্গে দেখা করার ব্যাপারে কোনও আগ্রহ দেখা যায়নি তাঁর। উল্টে তিনি যে পদ ছাড়ছেন না, সাংবাদিকদের সামনে সে কথাই আরও এক বার জোর দিয়ে জানান তিনি। জামাইকে আড়ালও করেননি তিনি। বরং বলেছেন, “গুরুনাথের এতে (বেটিং) জড়িত থাকার ব্যাপারে আমি কিছু জানতাম না। আমরা তদন্ত করব। অন্য কারও ক্ষেত্রে যে ব্যবস্থা নেওয়া হত, এ ক্ষেত্রেও একই তৎপরতার সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
দিল্লির পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার জানিয়েছেন, ধৃত ক্রিকেটার ও বুকিদের জেরা করে আইপিএলের বিভিন্ন দলের বেশ কিছু ক্রিকেটারের নাম তাঁরা পেয়েছেন। উপযুক্ত প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত তাঁদের নাম প্রকাশ করা হবে না। গত কাল হায়দরাবাদে ধৃত ইয়াইয়া খান নামে এক বুকি পুলিশের কাছে দাবি করে, চলতি আইপিএলেই কিছু ক্রিকেটারের সাহায্যে সে স্পট ফিক্সিং করে জিতেছে। আজ আবার আমদাবাদে বিনোদ মুলচন্দানি নামে আর এক বুকিকে গ্রেফতার করা হয়। নগদ ১ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা ও ২৬ লক্ষ টাকার দশটি সোনার বিস্কুট পাওয়া গিয়েছে তার কাছে।
|