প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার ঘটনায় রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের গড়া তদন্ত কমিটির রিপোর্টে অভিযোগের তির কার্যত তৃণমূলের দিকেই। কাল, সোমবার কমিশনের কাছে রিপোর্ট পেশ করবে কমিটি। দেড় মাস কেটে গেলেও পুলিশ এখনও ওই ঘটনার তদন্ত শেষ করে উঠতে পারেনি।
গত ১০ এপ্রিল প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে হামলার পরে অধ্যাপক অমল মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গড়েছিল রাজ্য মানবাধিকার কমিশন। মাস দেড়েক ধরে তদন্ত চালিয়ে কমিটি তার রিপোর্ট তৈরি করেছে। অমলবাবু শনিবার বলেন, “পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা
বলে তাঁদেরই দেওয়া তথ্য যাচাই করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রীড়া বিভাগের রেজিস্টার, ক্যাশ মেমো সব খতিয়ে দেখা হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক রিপোর্টও দেখা হয়েছে। সব দিক বিচার করে ঘটনার পুনর্নির্মাণের চেষ্টা করা হয়েছে এবং তার ভিত্তিতেই তদন্ত রিপোর্টটি তৈরি হয়েছে।”
তদন্ত রিপোর্টে কী রয়েছে, তা জানাতে রাজি হননি অমলবাবু। তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে, প্রেসিডেন্সিতে হামলাকারীরা যে তৃণমূল ও তাঁর ছাত্র সংগঠনের সমর্থক, এমন ইঙ্গিতই থাকছে রিপোর্টটিতে। সেখানে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুরের সময় প্রেসিডেন্সির প্রধান ফটকে কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীরা স্বীকার করেছেন, বাইরে এক দল যুবক তৃণমূলের পক্ষে স্লোগান দিচ্ছিলেন। দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে নিগ্রহের প্রতিবাদে এসএফআইকে ধিক্কার জানাচ্ছিলেন তাঁরা। তাঁদের অনেকেরই হাতে ছিল তৃণমূলের পতাকা। সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর ক্ষেত্রে এই সব তথ্যকেও গুরুত্ব দিয়েছে কমিটি।
তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেন, “কাজ শুরুর আগেই যে বিচারক বৈদ্যুতিন চ্যানেলে বসে দোষীদের চিহ্নিত করে ফেলেন, তাঁর বিচারের মূল্য কত টুকু, মানুষই তা বিচার করবেন।”
ওই দিন প্রেসিডেন্সির মূল ফটকের তালা ভেঙে ভিতরে ঢুকে হামলা চালায় বহিরাগত এক দল যুবক। হামলায় সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন ছাত্র জখম হন। ভাঙচুর চালানো হয় বেকার ল্যাবরেটারিতেও। সেখান থেকে একটি বর্শা উদ্ধার করে পুলিশ। পার্থবাবু ওই ভাঙচুরের ঘটনাকে ছোট ঘটনা বলে মন্তব্য করেন। পরে তিনি দাবি করেন, তৃণমূলের কেউই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। যদিও ওই ঘটনায় পুলিশ যাঁদের গ্রেফতার করেছিল, তাঁরা তৃণমূল সমর্থক বলেই পরিচিত।
প্রেসিডেন্সিতে পাওয়া বর্শাটি ওই প্রতিষ্ঠানেরই ক্রীড়া বিভাগের হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন পার্থবাবু। কিন্তু দিন কয়েক আগেই মানবধিকার কমিশনের কমিটি জানিয়ে দিয়েছে, বিতর্কিত বর্শাটি বাইরে থেকে আনা হয়েছিল।
মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট তৈরি হয়ে গেলেও পুলিশি তদন্তের কী অবস্থা?
পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দারোয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং কিছু নমুনা ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তদন্ত শেষ হবে কবে? লালবাজারের এক কর্তা এই প্রসঙ্গে বলেন, “ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য যে নমুনা পাঠানো হয়েছিল, তার রিপোর্ট এখনও পাওয়া যায়নি।” |