সমাজবিরোধীরা মন্ত্রীদের হয়ে টাকা তুলছে বলে অভিযোগ করলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাড়া হাজরা মোড়ে দাঁড়িয়ে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এই গুরুতর অভিযোগ তুললেন শনিবার। পরে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সোমবার হাজরা মোড়েই দলের পাল্টা সভায় তিনি বুদ্ধবাবুর কথার জবাব দেবেন।
এ দিন হাজরায় কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের ডাকা সভায় বুদ্ধবাবুই ছিলেন প্রধান বক্তা। তিনি বলেন, “আমাদের সময়ে সমাজবিরোধীরা ছিল না, এমন নয়। কিন্তু তারা এ ভাবে দাপিয়ে বেড়াত না। এখন বেহালা, আলিপুর, বালিগঞ্জে তৃণমূলের মন্ত্রী, বিধায়করা লক্ষ লক্ষ টাকার পুজো করছেন। আর সমাজবিরোধীরা তাদের হয়ে টাকা তুলছে।” প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর আরও অভিযোগ, সমাজবিরোধীরা কারখানার মালিক থেকে সাধারণ মানুষ, প্রত্যেকের কাছ থেকেই তোলা আদায় করছে। কিন্তু পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
সারদা-কাণ্ড এবং ছাত্রনেতা সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যুর সিবিআই তদন্ত-সহ বিভিন্ন দাবিতে হাজরায় সভা ডেকেছিল কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট। বুদ্ধবাবু ছাড়াও সিপিএম নেতা দিলীপ সেন, রবীন দেব, আরএসপি-র মনোজ ভট্টাচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লকের নরেন দে প্রমুখ সেখানে বক্তৃতা করেন। |
ওই সভায় বুদ্ধবাবু শিল্প ও কৃষি নিয়ে রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। তবে তিনি মমতা-সরকারকে বেশি আক্রমণ করেন পুলিশের ভূমিকা এবং আইনশৃঙ্খলার অবনতির প্রশ্নে। গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে তৃণমূল কাউন্সিলর মহম্মদ ইকবাল ওরফে মুন্নার জামিনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বুদ্ধবাবু বলেন, “পুলিশকে খুন করে গার্ডেনরিচের তৃণমূল কাউন্সিলর বেরিয়ে এল। আর ও দিকে এক জন কংগ্রেস কর্মী এখনও জেলে! তাঁর জামিন হবে না। এ ভাবে পুলিশ চলতে পারে?”
বুদ্ধবাবুর অভিযোগ, প্রত্যেক পাড়ায় এই ধরনের সমস্যা হচ্ছে। পুলিশ এক পক্ষের লোকেদের গ্রেফতার করে জেলে দিচ্ছে। অন্যদের ছেড়ে দিচ্ছে। ঘটনাচক্রে, এ দিনই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যও এই বিষয়েই সরকারের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ তুলেছেন। তিনিও বলেছেন, “তৃণমূলের মুন্নার বিরুদ্ধে ৩০২ ধারায় মামলা থাকলেও তার জামিন হল! কিন্তু কংগ্রেসের মোক্তারের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ না থাকলেও তার জামিন হল না। কোন যুক্তিতে এবং অধিকারে এই বৈষম্য?”
বাম জমানায় শালবনিতে জিন্দল ও তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পে ইনফোসিস এ রাজ্যে বিনিয়োগ করতে এসেছিল, তা জানিয়ে বুদ্ধবাবু বলেন, “সব শিল্প চলে যাচ্ছে। এদের (তৃণমূলের) এত টাকার চাহিদা যে, শুধুই তোলাবাজি হচ্ছে। কারখানার মালিকরা কত টাকা দেবেন? ক’জনকে দেবেন?” এই সরকারের আমলে রাজ্যে একটি শিল্পও হচ্ছে না বলে অভিযোগ করে বুদ্ধবাবু বলেন, “শুধুই সমাজবিরোধীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সমাজবিরোধীদের ভয়ে পাড়ার ভদ্রলোকদের মাথা নিচু করে থাকতে হচ্ছে। মহিলাদের চুপ করে থাকতে হচ্ছে। না হলেই খুন হতে হবে। অত্যাচার হবে।” বুদ্ধবাবুর হুঁশিয়ারি, পাড়ায় পাড়ায় সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য বামেরা মেনে নেবে না। তাঁর কথায়, “মনে রাখবেন, সমাজবিরোধীরা চিরকাল মানুষকে ভয় দেখিয়ে রাখতে পারবে না।” সাধারণ মানুষের কাছে বুদ্ধবাবুর বার্তা, এই অবস্থা কত দিন চলবে, তা সাধারণ মানুষকেই ঠিক করতে হবে। কারণ, ‘পরিবর্তন’-এ যে ভাল হয়নি, তা সকলেই বুঝতে পারছেন।
এ দিন ওই সভার জন্য আশুতোষ কলেজের কাছে রাস্তার এক পাশ বন্ধ করে মঞ্চ বাঁধা হয়েছিল। কিন্তু সভা শুরুর পরে রাস্তার দু’ দিকই পুলিশ বন্ধ করে দেয়। বামেদের পক্ষ থেকে পুলিশকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, যান চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। রবীনবাবু বলেন, “আমরা রাস্তার একটি লেন ছেড়েই সভা করেছি। কিন্তু এত মানুষ এলে আটকাব কী করে?” |