আগেও বেশ ক’বার ধর্মতলা ও বাবুঘাট থেকে বাসস্ট্যান্ড সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু এক সঙ্গে বড় জায়গা না মেলায় তা হয়ে ওঠেনি। এ বার তাই জমি-সমস্যার কথা মাথায় রেখেই কলকাতায় স্থায়ী বাসস্ট্যান্ডের পরিকল্পনা ছেড়ে ধর্মতলা ও বাবুঘাট চত্বরে শুধু বাসস্টপ তৈরির কথা ভাবছে সরকার। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র শনিবার এ বিষয়ে বলেন, “পুজোর আগেই ঝাঁ-চকচকে হয়ে যাবে ধর্মতলা ও বাবুঘাট।”
কেমন সেই পরিকল্পনা? মদনবাবু জানান, ধর্মতলা ও বাবুঘাট থেকে রোজ গড়ে ২৩০০টি বাস ছাড়ে। এর মধ্যে যেমন কলকাতা ও শহরতলির বাস আছে, তেমনই আছে দূরপাল্লা ও আন্তঃরাজ্য বাসও। ছাড়ার অনেক আগে থেকে বাসগুলি স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকে। এতেই দূষণ বাড়ে। তাই প্রাথমিক ভাবে ভাবা হয়েছে, ধর্মতলা ও বাবুঘাটে কোনও বাসকে আর দীর্ঘ সময় দাঁড়াতে দেওয়া হবে না। কলকাতা ও লাগোয়া এলাকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছেড়ে আসা বাস ওই দুই স্ট্যান্ডে যাত্রী উঠিয়ে-নামিয়ে ফের গন্তব্যে রওনা দেবে। পরিবহণমন্ত্রী মনে করেন, শহরতলির বেহালা, কসবা, ইএম বাইপাস, পাতিপুকুর ও সল্টলেকের সরকারি ডিপোয় বেসরকারি বাস দাঁড় করানোর অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। তাতে কোনও স্থানাভাব হবে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পরিবহণ দফতর। |
এ সব নিয়ে ইতিমধ্যে বেসরকারি বাসের একাধিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে এক প্রস্ত কথা বলেছেন মদনবাবু। আগামী বুধবার বাসমালিকদের নিয়ে ফের বৈঠকে বসবেন তিনি। তার আগে এ দিন পরিবহণ দফতরের অফিসারদের নিয়ে বৈঠক করেন মন্ত্রী।
অফিসারেরা মদনবাবুকে জানিয়েছেন, ধর্মতলা ও বাবুঘাটে বেসরকারি বাসের পাশাপাশি সরকারি বাসেরও গুমটি ও টিকিট কাউন্টার আছে। তাঁদের মদনবাবু বলেছেন, বাসস্ট্যান্ড এলাকা পরিচ্ছন্ন রাখাটা জরুরি হলেও তা নিয়ে কোনও মতেই জবরদস্তি করা হবে না। আলোচনার মধ্যে দিয়েই কাজ সারতে হবে।
কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের অধীন ‘ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (নিরি)-এর এক সমীক্ষায় বলা হয়, ধর্মতলা চত্বরে স্থায়ী বাসস্ট্যান্ডের দূষণে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে ২০০৭ সালে হাইকোর্টে মামলা করেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। আদালত তিন মাসের মধ্যে বাসস্ট্যান্ড সরানোর নির্দেশ দেয় রাজ্য সরকারকে। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। তাতেও হার হয় সরকারের। সুভাষবাবু বলেন, “সুপ্রিম কোর্ট ধর্মতলা থেকে বাসস্ট্যান্ড সরিয়ে নেওয়ার কথা বললেও সময়সীমা বেঁধে দেয়নি। তারই সুযোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার।” ২০১১ সালে এ নিয়ে ফের হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন সুভাষবাবু। আদালত এ বার বলে দেয়, বাসস্ট্যান্ড সরাতে রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ করেছে, তা ৫ জুনের মধ্যে জানাতে হবে।
পরিবহণমন্ত্রী শনিবার বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী চান, কলকাতাকে সুন্দর করে সাজাতে। সে জন্য শহরের বিভিন্ন সেতু ও ডিভাইডারগুলি রাঙিয়ে তোলা হয়েছে। পার্কগুলিকে দৃষ্টিনন্দন করে গড়ে তুলতে লাগানো হয়েছে বাহারি গাছপালা। গঙ্গার পাড়ও সাজিয়ে তোলার কাজ চলছে। ধর্মতলা থেকে বাসস্ট্যান্ড সরিয়ে দিয়ে ওই এলাকাও সুন্দর করে সাজিয়ে তুলব আমরা।” |