পাহাড়ের তৃণমূল নেতা খুশনারায়ণ সুব্বার বাড়িতে আগুন লাগানোর জেরে আবার উত্তপ্ত হওয়ার মুখে দার্জিলিং পাহাড়। এই আশঙ্কা আরও বাড়িয়েছে রোশন গিরি, বিনয় তামাংদের মতো মোর্চার প্রথম সারির নেতাদের গ্রেফতার বরণ এবং জামিন নিতে না চেয়ে থানায় বসে থাকার ঘটনা। এই পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দেন, ভরা পর্যটন মরসুমে পাহাড়ের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব মোর্চার। কারণ, তারাই জিটিএ-র ক্ষমতাসীন দল। ঘটনাচক্রে, এর পরে রাতেই মোর্চা প্রধান বিমল গুরুঙ্গের নির্দেশে জামিন নিয়ে নেন রোশন গিরিরা।
তবে সুব্বার বাড়িতে আগুন লাগানো এবং তার পরবর্তী ধরপাকড়ের জেরে মোর্চার সঙ্গে রাজ্য সরকারের সম্পর্ক ফের কিছুটা ধাক্কা খেল বলে মনে করছে প্রশাসনের একটি অংশ। বৃহস্পতিবার রাতে সুব্বার কালিম্পং মহকুমার গরুবাথানের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগে মোর্চার স্থানীয় জিটিএ সদস্য চন্দ্র ইয়ংজন-সহ ছ’জনকে শুক্রবার দুপুরে গ্রেফতার করে দার্জিলিং জেলা পুলিশ। এর পরেই মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি, প্রথম সারির নেতা বিনয় তামাং, আশা গুরুঙ্গ, প্রদীপ প্রধান-সহ বেশ কয়েক জন কর্মী-সমর্থক দার্জিলিং থানায় গিয়ে চন্দ্র ইয়ংজনদের ছেড়ে দেওয়ার দাবি করেন। কিন্তু পুলিশ সে কথায় কান দেয়নি। মোর্চা নেতারা তখন দাবি করতে থাকেন, তাঁদেরও গ্রেফতার করতে হবে। অভিযোগ, জবরদস্তি থানায় ঢুকেও পড়েন তাঁরা। শুরু হয় হইচই। পুলিশ তখন তাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ঘোষণা করে ব্যক্তিগত জামিন নিতে বলে। কিন্তু মোর্চা নেতারা দীর্ঘক্ষণ জামিন না নিয়ে থানাতেই বসে ছিলেন। পরে রাতে তাঁদের জামিন নিতে নির্দেশ দেন বিমল গুরুঙ্গ। অন্য দিকে, কালিম্পং থানাতেও রাতে গ্রেফতার বরণ করেন ৩৫ জন মোর্চা নেতা-কর্মী। রবিবার থেকে কালিম্পং মহকুমায় বন্ধ ডাকার হুমকিও দিয়েছে মোর্চা। |
রোশন গিরিদের থানায় গিয়ে হইচই করা এবং বন্ধের হুমকি শুনে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মোর্চা এখন জিটিএ-র ক্ষমতাসীন দল। পাহাড়ে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব মোর্চারই। কিন্তু ভরা পর্যটন মরসুমেই গোলমাল পাকালে সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আশা করব মোর্চা নেতারা পাহাড়ে
জনজীবন স্বাভাবিক রেখেই আন্দোলন করবেন।” তখন রোশন গিরি বলেছিলেন, “আমরাও অশান্তি চাই না। কিন্তু কেউ অশান্তি করে আমাদের উপরে চাপানোর চেষ্টা করলে তা-ও মানা হবে না।” তাঁর বক্তব্য ছিল, “কালিম্পং মহকুমায় বন্ধ শুরু হয়েছে। ইয়ংজনকে ছাড়া না হলে রবিবার গোটা পাহাড়ে বন্ধ শুরু হবে।” মোর্চা সূত্র থেকে জানানো হয়, বন্ধে সিকিমগামী ৩১-এ জাতীয় সড়কে কোনও প্রভাব যাতে পড়ে তা অবশ্য দেখা হবে। সিকিমের জীবনরেখা হিসেবে পরিচিত এই জাতীয় সড়কে অবরোধ হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ আগেই দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। রাতে গুরুঙ্গ জামিন নেওয়ার নির্দেশ দিলেও মোর্চা বন্ধের পথ থেকে সরে আসবে কি না, তা নিয়ে সংশয় কাটেনি।
জিএনএলএফের এক সময়ের দোর্দণ্ডপ্রতাপ কাউন্সিলর ছিলেন সুব্বা। মোর্চার উত্থানের পরে তিনি গরুবাথান থেকে শিলিগুড়িতে নেমে আসতে বাধ্য হন। গত বছর শেষের দিকে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। মুখ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক দার্জিলিং সফরের পরে সুব্বাকে গরুবাথানে তাঁর বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে উদ্যোগী হয় তৃণমূল। কিন্তু বুধবার মিছিল করে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার সময়ে গরুবাথানের মোড়ে তাঁকে মোর্চা সমর্থকেরা আটকে দেন বলে অভিযোগ। |
সেই রাতে সুব্বা গরুবাথানের বাড়িতে ঢুকতে
পারেননি। বৃহস্পতিবার সুব্বাকে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ছ’জনকে আটক করে পুলিশ। পরে মোর্চা এবং তৃণমূলের রাজ্য স্তরের নেতাদের আলোচনার সাপেক্ষে তাঁদের ছাড়া হয়। ওই রাতেই আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় সুব্বার বাড়িতে। একতলা কাঠের বাড়ির পুরোটাই আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে।
সুব্বা এখন মালবাজারে। তিনি বলেন, “এটা কোথাকার গণতান্ত্রিক পরিবেশ বুঝতে পারছি না। বিমল গুরুঙ্গের দল দাদাগিরির রাজনীতি কায়েম করতে চাইছেন। গরুবাথানে আমার বাড়ি। সেখানে গিয়ে বসে থাকব না রাজনীতি করব, সেটা
আমার বিষয়। মোর্চা তা ঠিক করে দেবে, এটা মানা যায় না।” তৃণমূলের উত্তরবঙ্গ কোর কমিটির চেয়ারম্যান গৌতম দেবও বলেন, “ওদের (মোর্চার) অনেকেরই কথার সঙ্গে কাজের মিল পাওয়া যাচ্ছে না।
পাহাড়ে গণতন্ত্র রাখতেই হবে। সব দলকেই মত প্রকাশের অধিকার দিতে হবে। এই নিয়ে আমরা আপস
করব না। আশা করব মোর্চা বুঝে পদক্ষেপ করবে।”
মুখ্যমন্ত্রীও বলেছেন, “পাহাড়ের আইন শৃঙ্খলার অবনতির কোনও চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না। পুলিশ-প্রশাসনকে শক্ত হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে বলা হয়েছে।”
|