সারাদিন ডিউটির পর রাতের খাবার শুকনো মুড়ি অথবা চিড়ে। কখনও প্রায় তিন কিলোমিটার হেঁটে কেউ নিয়ে আসছেন রুটি, সবজি। পানীয় জলের কল দিয়েও ঘোলা জল পড়ে। তাতেই তেষ্টা মেটানো। রাতেও চোখে ঘুম নেই। পোশাক পরে লাঠি হাতে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে শ্যামল সেন কমিশনের শিলিগুড়ির অফিসের চারপাশে। অভিযোগ পত্র জমা দিতে আসা এজেন্ট, আমানতকারী মহিলা-পুরুষের সুবিধা-অসুবিধার দিকেও চোখ রাখতে হচ্ছে তাঁদের। ওঁরা শিলিগুড়ির হিমাঞ্চল বিহারে কমিশনের অফিসে কর্তব্যরত ২৪ জন পুলিশ কর্মী। রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের ১২ ব্যাটেলিয়নের কর্মীদের অনেকেই এই অব্যবস্থার অভিযোগ তুলে ক্ষোভে ফুঁসছে।
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বলেন, “কমিশনের অফিসের সমস্যা জেলা প্রশাসনের দেখার কথা। কর্তব্যরত পুলিশ কর্মীদের নিজেদের খাবারের ব্যবস্থার করার কথা। তার পরেও কোনও সমস্যা থাকলে তাঁরা জানাতে পারতেন। বিষয়টি দেখা হবে।” দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “পুলিশ কর্মীদের খাবার বা পানীয় জলের সমস্যার বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি। তাঁদের যাতে সমস্যা মেটানোর ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে। শুধু পুলিশ নয়, অভিযোগপত্র জমা দিতে আসা আমানতকারী, এজেন্ট বা সেখানে কর্তব্যরত কর্মীদের যাতে কারও কোনও অসুবিধে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, ১০ মে শ্যামল সেন কমিশনের অফিস চালু হওয়ার দিন থেকে হিমাঞ্চল বিহারের দোতলা ভবনের উপর তলায় পুলিশের ক্যাম্প বসানো হয়। সেখানে তিন জন অফিসার-সহ ২৪ জন পুলিশ কর্মীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সকাল ৯টা থেকে অভিযোগপত্র জমা নেওয়া শুরু হয়। চলে বিকাল ৩টা পর্যন্ত। এর পরেও সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েকজন কর্মীরা কাজ করেন। পুলিশ কর্মীদের কয়েক জানান, দিনের বেলা দুটি দোকান বসে অফিস চত্বরে। এ ছাড়া চা-সহ বিভিন্ন দোকানি ঘুরে বেড়ায়। একটি দোকানে ভাতের ব্যবস্থা করা হয়। সেখানেই দিনের বেলা খাবার খাওয়া হয়। কিন্তু, সন্ধ্যা হওয়ার আগেই সব দোকান বন্ধ হয়ে যায়। অফিস চত্বর থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে একটি নার্সিংহোমের সামনে কয়েকটি দোকান রয়েছে। আর নইলে তিন কিলোমিটার দূরে মাটিগাড়া বা দার্জিলিং মোড় থেকে খাবার আনতে যেতে হয়।
এক পুলিশ কর্মী বলেন, “প্রতিদিন হাজার হাজার লোক ভিড় করছে। কমিশনে। লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোলে জড়িয়ে পড়ছে তাঁরা। সে সব সামলাতে সামলাতে হচ্ছে। রাতেও ডিউটি করতে হচ্ছে। রান্নার সময় নেই। তাই মুড়ি অথবা চিড়ে দিয়েই কাজ চালাতে হচ্ছে।” পুলিশ কর্মীদের একাংশ জানান, প্রতিদিন রাতে অনেক এজেন্ট ও আমানতকারী অফিস চত্বরেই থেকে যান। তাঁরা রাতেই লাইন দিয়ে কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে অনেক মহিলা থাকেন। ফলে তাঁদের নজরদারিতে রাখতে হয়। রাত জাগতে হয়।
বৃহস্পতিবার কমিশনে ৭ হাজার ৩৮৫টি অভিযোগ জমা পড়েছে। সবমিলিয়ে অভিযোগের সংখ্যা দাঁড়াল ৪৯ হাজার ১৭৬টি। |