লগ্নি টানতে সদ্য প্রকাশিত খসড়া শিল্পনীতিতে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে রাজ্য। কিন্তু জমি না-নেওয়ার অবস্থানে অনড় থেকেও তা কী ভাবে করা সম্ভব, সেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই।
সড়ক উন্নয়নের সম্ভাবনা (ফিজিবিলিটি) খতিয়ে দেখে রিপোর্ট তৈরির জন্য এর আগেও উপদেষ্টা সংস্থাগুলির কাছ থেকে দরপত্র চেয়েছিল রাজ্য। সেই অনুযায়ী তা জমা দিয়েছিল পাঁচ দেশি-বিদেশি সংস্থা। জানুয়ারিতে যাদের মধ্যে থেকে বাছাই করা হয় চারটিকে। তার পর কাজ শুরুও করে দেয় তারা। কিন্তু এত কিছুর পর চলতি মাসে সেই পুরনো দরপত্র কার্যত বাতিল করে ফের নতুন ভাবে তা চেয়েছে রাজ্য সড়ক উন্নয়ন নিগম। তা-ই নয়, এ বার ফিজিবিলিটি রিপোর্টের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প রিপোর্টও তৈরি করতে বলেছে তারা। দরপত্র জমা দিতে বলেছে ৩০ মে-র মধ্যে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, নতুন করে দরপত্র চাওয়ার আসল কারণ জমি-সমস্যা। যার জেরে এ রাজ্যে থমকে জাতীয় সড়ক উন্নয়নের কাজও।
বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগের পথে হেঁটেই (পিপিপি মডেল) সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিল রাজ্য। কিন্তু শিল্পের মতে, যে কোনও বেসরকারি সংস্থাই প্রকল্পে টাকা ঢাললে, মুনাফার মুখ দেখতে চাইবে। তাই এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক ভাবে সফল হতে হবে রাস্তাকে। অথচ তা হওয়ার প্রথম শর্তই হল যান চলাচল বৃদ্ধি। তার জন্য প্রয়োজন রাস্তা সম্প্রসারণ। যা করতে গেলে জমি অধিগ্রহণ না-করে উপায় নেই। কিন্তু রাজ্য যেহেতু জমি না-নেওয়ার অবস্থানে অনড়, তাই সেখান থেকেই যাবতীয় সমস্যার সূত্রপাত। জমি না-নিয়েও সড়ক উন্নয়নের প্রকল্পকে কী ভাবে লাভজনক করা সম্ভব, তার হদিস না-থাকার কারণেই আগের সম্ভাবনা যাচাইয়ের রিপোর্ট বাতিল হয়েছে বলে শিল্পমহলের একাংশের অভিমত।
নিগম অবশ্য জানাচ্ছে, কোথায় কত যানবাহন চলে, কতটা যান চলাচল বাড়ালে লাভ হবে, কোথায় টোল প্লাজা তৈরি সম্ভব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে স্পষ্ট তথ্য থাকবে নয়া ফিজিবিলিটি রিপোর্টে। পরিকাঠামো শিল্পের দাবি, ওই তথ্যের উপরই নির্ভর করবে বেসরকারি লগ্নির সম্ভাবনা।
কারণ, গাড়ির সংখ্যা ও টোল থেকে আদায় হওয়া অর্থের সঙ্গে লগ্নির অঙ্কের সরাসরি যোগ রয়েছে। শিল্পের পরিভাষায় যার নাম ‘ইন্টারনাল রেট অফ রিটার্ন’ (আই আর আর)। শিল্পমহলের দাবি, আই আর আর অন্তত ১৫ থেকে ১৮% না হলে, লগ্নির ঝুঁকি নিতে চায় না কোনও সংস্থাই। অথচ রাজ্যে দু’লেনের রাস্তা নিদেন পক্ষে চার লেন না-হলে, ওই হিসাব মেলা শক্ত।
কিন্তু রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য প্রথম যা জরুরি, তা হল জমি। যা নিয়ে এ রাজ্যে এই মুহূর্তে সাঁড়াশি সমস্যায় শিল্প। কারণ, এক দিকে জমি না-নেওয়ার ধনুর্ভঙ্গ পণে এখনও অনড় রাজ্য। অন্য দিকে রাস্তা তৈরির সময় যে বাড়তি জমি নেওয়া হয় (রাইট অফ ওয়ে), তার অধিকাংশই দখল হয়ে রয়েছে। ১১০০ কিলোমিটার রাজ্য সড়ক সম্পর্কে রিপোর্ট তৈরির কাজ হাতে নিয়ে আগেই এই সমস্যার কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা রেল ইন্ডিয়া টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনমিক সার্ভিসেস (রাইটস)। তাই নতুন করে দরপত্র চাওয়ার পরেও জমি-নীতি না-বদলালে, কোন বেসরকারি সংস্থা বিনিয়োগে আগ্রহী হবে, প্রশ্ন থাকছে।
অনেকে মনে করছেন, এই সমস্যা এড়াতে পুরোনো পদ্ধতিতেই সড়ক উন্নয়নের কাজে হাত দিতে চাইছে রাজ্য। যেখানে পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প রিপোর্টের ভিত্তিতে ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থাগুলির কাছ থেকে রাস্তা তৈরির দরপত্র চাওয়া হবে। তাঁদের মতে, সম্ভবত সেই কারণে গোড়াতেই পূর্ণাঙ্গ প্রকল্প রিপোর্ট পেশের উপর জোর দিচ্ছে নিগম। জুলাইয়ের মাঝ থেকেই তা তৈরির কাজ শুরু করে দিতে তৎপর তারা। কিন্তু জমি-নীতি না বদলালে, তাতেও কতটা লাভ হবে, তা অস্পষ্ট।
|