কোদাইকানালের অভিজাত সামার হাউস থেকে গুরুনাথ মায়াপ্পনের দৌড় শেষ হল মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসে।
শুক্রবার রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ সংবাদমাধ্যমের প্রবল চেঁচামেচি-ধাক্কাধাক্কির মধ্যে মুম্বই পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) হিমাংশু রায় বললেন, “আমরা গুরুনাথ মায়াপ্পনকে ডেকেছিলাম। উনি আজ মুম্বই এসেছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওঁর বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। তাই ওঁকে আমরা গ্রেফতার করেছি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোর্টে তুলব।” ইংরেজি, হিন্দি, মরাঠি এই কথাগুলোই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বলে গেলেন হিমাংশু। একটাও বাড়তি কথা নয়।
মুম্বই পুলিশ গত কাল তাঁর বাড়িতে সমন পৌঁছে দেওয়ার পর গুরুনাথের আর্জি ছিল, তাঁকে আজকের বদলে সোমবার, অর্থাৎ আইপিএল ফাইনালের পরের দিন ডেকে পাঠানো হোক। সেই আর্জি পত্রপাঠ খারিজ করে মুম্বই পুলিশ জানিয়ে দেয়, আসতে হবে আজই, বিকেল পাঁচটার মধ্যে। তখনও জানা যায়নি, দুই রাজ্যের পুলিশ হন্যে হয়ে যাঁকে খুঁজে চলেছে, সেই গুরুনাথ রয়েছেন কোথায়?
প্রশ্নের উত্তর মেলে দুপুর সওয়া একটা নাগাদ। কোদাইকানালে শ্বশুর এন শ্রীনিবাসনের সামার হাউসে টিভি ক্যামেরায় বন্দি হয়ে যান গুরুনাথ! একটা সময়ে সাংবাদিকদের জটলা অগ্রাহ্য করে যথেষ্ট গতিতে ওই সামার হাউসে ঢুকে পড়েছিল শ্রীনিবাসনের গাড়ি। বন্ধ গেটের ও-পারে হলদে জামা আর জ্যাকেট পরা বোর্ড প্রেসিডেন্টকে গাড়ি থেকে নামতে দেখা যায়। গেটের বাইরে থেকে লেন্স তাক করাই ছিল। তাতেই ধরা পড়েন গুরুনাথ। তিনি তখন গাড়িতে উঠছেন। |
এর আগে-পরে অবশ্য বিস্তর নাটক রয়েছে। মুম্বই পুলিশ তাঁকে আজ হাজির হওয়ার কড়া নির্দেশ জারির পরেই কোদাইকানালের সামার হাউসে আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন গুরুনাথ। সেখানেই ঠিক হয়, কোদাইকানাল থেকে মাদুরাই যাবেন তিনি। সেখান থেকে চার্টার্ড বিমানে মুম্বই। সঙ্গে যাবেন এক ঘনিষ্ঠ আইনজীবীও।
এই টানটান পরিস্থিতির মধ্যে গুরুনাথের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে হঠাৎই ‘টিম প্রিন্সিপ্যাল, চেন্নাই সুপার কিংস’ কথাগুলো মুছে ফেলা হয়। শুধু রয়ে যায় তাঁর পারিবারিক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত পরিচয়টুকু। অর্থাৎ ‘ম্যানেজিং ডিরেক্টর, এভিএম প্রোডাকশন্স অ্যান্ড এন্টারটেনমেন্ট, এভিএম স্টুডিওজ, এভিএম কনস্ট্রাকশন্স’। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির সঙ্গে হলুদ জার্সি পরা প্রোফাইল ছবিটা অবশ্য মোছা হয়নি। তবে বিকেল নাগাদই সিএসকে-র ফ্রাঞ্চাইজি ইন্ডিয়া সিমেন্টস বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেয়, ‘গুরুনাথ মায়াপ্পন সিএসকে-র মালিক, সিইও বা টিম প্রিন্সিপ্যাল নন। তিনি শুধুমাত্র ম্যানেজমেন্ট টিমের এক সম্মানিত সদস্য। কেউ দোষী প্রমাণিত হলে সিএসকে সহ্য করবে না।’ আসলে আইপিএলের নিয়ম বলছে, টুর্নামেন্টের মর্যাদাহানির দায়ে কোনও টিম প্রধান দোষী সাব্যস্ত হলে সংশ্লিষ্ট টিম টুর্নামেন্ট থেকে বাতিল হয়ে যাবে। সেই সম্ভাব্য পরিস্থিতি আঁচ করেই গুরুনাথের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ানোর চেষ্টা শুরু করে দেয় টিম শ্রীনিবাসন।
গুরুনাথ মুম্বইয়ে পৌঁছনোর খানিক আগে যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) জানিয়েছিলেন, তাঁকে বিন্দু দারা সিংহের সামনে বসিয়ে জেরার কথা ভাবা হচ্ছে। বিন্দুকে আজ আদালতে তুলে তাঁকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত নিজেদের হেফাজতে রাখার অনুমতি আদায় করে নিয়েছে পুলিশ। বিন্দুও জেরায় গুরুনাথের রক্তচাপ বাড়ানোর মতো বেশ কিছু বিস্ফোরক দাবি করেছেন। পুলিশের দাবি, বিন্দু জানিয়েছেন, গুরুনাথের হয়ে চলতি আইপিএলে আগাগোড়া তিনি বেটিং করেছেন। গুরুনাথ ইতিমধ্যে এক কোটি টাকার মতো হেরেও গিয়েছেন। এমনকী বিন্দু এ-ও দাবি করেন, তাঁর হাত দিয়েই আম্পায়ার আসাদ রউফের জন্য গুরুনাথ উপহার পাঠিয়েছিলেন। পুলিশ দেখতে চাইছে, মাত্র এক-দেড় দিনের মধ্যে গুরুনাথ ও বিন্দু ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বার ফোনে কী কথা বলেছিলেন। এর মাঝে শোনা যায়, বিন্দু ও গুরুনাথের কথোপকথনের অডিও সিডি এবং দু’জনের এক ফ্রেমে থাকা ভিডিও ফুটেজ পুলিশের কাছে রয়েছে। স্বভাবতই তা প্রকাশের দাবি ওঠে। শ্রীনিবাসনের ছেলে অশ্বিন আবার দাবি করেছেন, আইপিএল শুরুর আগে থেকেই চেন্নাই ও দুবাইয়ের একাধিক বুকির সঙ্গে গুরুনাথের যোগাযোগ ছিল।
মুম্বই পুলিশের দেওয়া সময়সীমার মধ্যে পৌঁছতে পারেননি গুরুনাথ। রাত আটটার পরে মুম্বই বিমানবন্দর থেকে তাঁর গাড়িকে এসকর্ট দিয়ে বার করে আনে পুলিশ। ক্রফোর্ড মার্কেটে ক্রাইম ব্রাঞ্চের দফতরে পৌঁছতে বাজে প্রায় ৯টা। ঘণ্টা তিনেক জেরার পর গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। শোনা যাচ্ছে, জেরা চলবে সারা রাত।
|