পৃথিবীর সপ্তম উচ্চতম শৃঙ্গ নেপালের ধৌলাগিরি অভিযানে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় পড়েছেন এভারেস্ট-জয়ী বসন্ত সিংহরায় ও দেবাশিস বিশ্বাস। ধৌলাগিরির উচ্চতা ৮১৬৭ মিটার। সাড়ে সাত হাজার মিটারের সামান্য উপরে তৈরি হয়েছিল তাঁদের চতুর্থ শিবির বা সামিট ক্যাম্প। সেখান থেকে শৃঙ্গ আরোহণের শেষ পর্বে তাঁরা তুষার ঝড়ের মুখে পড়েন বলে জানিয়েছেন মাউন্টেনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ কৃষ্ণনগর বা ম্যাক-এর কোষাধ্যক্ষ তপন রায়। শেষ পর্যন্ত নেপাল সরকারের উদ্যোগে শুক্রবার তাঁদের উদ্ধার করা গিয়েছে। ম্যাকের সহ-সভাপতি অশোক রায় বলেন, “দু’জনেই বিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছেন। দেবাশিসবাবুর ফ্রস্ট বাইট ও স্নো ব্লাইন্ডনেস (বরফের উপরে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হওয়ায় সাময়িক অন্ধত্ব) হয়েছে। বসন্তবাবুও গুরুতর অসুস্থ। তবে তাঁরা এখন নিরাপদেই রয়েছেন বলে খবর পেয়েছি।” ম্যাকের তরফে জানা গিয়েছে, চার জনের একটি দল শনিবার সকালে কাঠমান্ডু রওনা দিচ্ছে। তাতে থাকবেন বসন্তবাবু এবং দেবাশিসবাবুর স্ত্রী-ও।
মহাকরণ সূত্রে খবর, এই দিন দুপুরে দুর্ঘটনার খবর পান যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি সে কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বসন্তবাবুদের উদ্ধারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে উদ্যোগী হন। তাঁর কথায় রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র যোগাযোগ করেন বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে। বিদেশ মন্ত্রক যোগাযোগ করে নেপাল সরকারের সঙ্গে। এর পরেই নেপাল সরকার দুই এভারেস্ট জয়ী বাঙালি পর্বতারোহীকে উদ্ধারের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস পরে বলেন, “শেষ খবর পাওয়া যাচ্ছে, পর্বতারোহীদের উদ্ধার করা গিয়েছে।” লোবেন এক্সপেডিশন নামে একটি সংস্থার সাহায্যে এই অভিযানে গিয়েছেন বসন্তবাবুরা। সেই সংস্থা সূত্রের খবর, শুক্রবার শৃঙ্গের সামান্য নীচে প্রায় ৭৮০০ মিটার উচ্চতায় খোলা জায়গায় বরফের মধ্যে বসন্তবাবুকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। ওয়াং চু নামে তাঁদের দলেরই এক শেরপা এই দিন দুপুরে তাঁকে উদ্ধার করেন। |
তপনবাবু জানান, এই অভিযানে ম্যাকের তরফে বসন্তবাবু, দেবাশিসবাবুর সঙ্গে ছিলেন হাওড়ার বাসিন্দা মলয় মুখোপাধ্যায় নামে আর এক পর্বতারোহী। তাঁদের তিন জনের সঙ্গে ছিলেন তিন জন শেরপাও। ১৯ মে চার হাজার আটশো মিটার উচ্চতায় মূল বেসক্যাম্প থেকে অভিযান শুরু করেন বসন্তবাবুরা। তৃতীয় ক্যাম্পে পৌঁছনোর পরে মলয়বাবু আর এগোননি। তাঁর সঙ্গেই থেকে যান শেরপা ওয়াং চু। তপনবাবু জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বসন্তবাবু ও দেবাশিসবাবু দলের অন্য দুই শেরপা পেম্বা শেরপা ও পাসাং শেরপার সঙ্গে চূড়ান্ত অভিযান শুরু করেন। তার মধ্যেই তাঁরা তুষারঝড়ে পড়েন বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে।
তপনবাবু বলেন, “ওই রাতেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন দেবাশিসবাবু। তিনি পেম্বা শেরপার সঙ্গে চতুর্থ ক্যাম্পে নেমে আসেন। বসন্তবাবু পাসাং শেরপার সঙ্গে রয়ে যান।
কিন্তু তার পর থেকে তাঁর সঙ্গে আর কোনও ভাবে যোগাযোগ করা যাচ্ছিল না।”
ইতিমধ্যে তিন নম্বর ক্যাম্প থেকে ওয়াং চু বসন্তবাবুর খোঁজে বেরিয়ে যান। বেলা ২টো ৪০ মিনিট নাগাদ খবর আসে, তিনি বসন্তবাবু ও পাসাং শেরপাকে খুঁজে পেয়েছেন। পাসাং শেরপাও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানা গিয়েছে। লোবেন সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, পেম্বা শেরপা স্যাটেলাইট ফোনে তাঁদের জানিয়েছেন যে, সকলেই নিরাপদে রয়েছেন।
ম্যাকের সহ-সভাপতি অশোক রায় জানান, বেশ কয়েক দিন ধরেই আবহাওয়া খারাপ ছিল। তাই শৃঙ্গশীর্ষে পৌঁছনোর অভিযান ক্রমশ পিছোচ্ছিল।
প্রথমে ঠিক ছিল বসন্তবাবুরা ১৪ বা ১৫ মে শৃঙ্গ জয়ের জন্য চূড়ান্ত অভিযান করবেন। কিন্তু আবহাওয়ার জন্যই সেই দিনটি ক্রমশ পিছোতে থাকে। বসন্তবাবু ও দেবাশিসবাবু এর মধ্যে দ্বিতীয় বেসক্যাম্পেও নেমে এসেছিলেন এক বার।
বসন্তবাবু ও দেবাশিসবাবু ২০১০ সালে এভারেস্ট জয় করেছিলেন। তার পরে ২০১১ সালে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা এবং ২০১২ সালে অন্নপূর্ণা শৃঙ্গ জয় করেন।
অশোকবাবু বলেন, “ধৌলাগিরি খুবই বিপজ্জনক পথ। এভারেস্টে ওঠার থেকেও এই পথে বিপদ বেশি। তাই এ বার তা জয় করতে বদ্ধপরিকর ছিল ওরা।” তিনি জানান, শুক্রবার সকালের মধ্যেই সেই শৃঙ্গ জয়ের কথা ছিল বসন্তবাবুর। তিনি তা করতে পেরেছেন কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
|