আইনের ফাঁক। আর নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা আসলে কার হাতে, তা নিয়ে থেকে যাওয়া ধোঁয়াশা। এই দু’য়ের দৌলতেই যে সারদার মতো অর্থ লগ্নি সংস্থার ‘রমরমা’, সম্প্রতি তা বহু বার বলেছেন বিশেষজ্ঞরা। ওই দুই ক্ষেত্রে দুর্বলতার কথা স্বীকার করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। তাঁর পর এ বার আইনের ওই ধূসর জায়গার কথা মেনে নিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বারাও-ও। একই সঙ্গে, সারদা-কেলেঙ্কারি যে এ নিয়ে চোখ খুলে দিয়েছে, তা মেনে নিলেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, শুক্রবার সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সামনে সুব্বারাও বলেন, কোনও অর্থ লগ্নি সংস্থা আইন ভাঙলে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার যথেষ্ট ক্ষমতা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নেই। প্রতারক সংস্থার কর্তাদের গ্রেফতারের ক্ষমতাও আইন তাকে দেয়নি। কমিটিতে পশ্চিমবঙ্গের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও গুরুদাস দাশগুপ্তর সামনে শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্ণধার মেনে নেন যে, সারদা-কেলেঙ্কারি চোখ খুলে দিয়েছে। দেখিয়ে দিয়েছে যে, বিভিন্ন ধরনের সংস্থার উপর নজরদারির জন্য বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক থাকলেও, তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব স্পষ্ট। আইন থাকলেও ফাঁক রয়েছে তার মধ্যে। উল্লেখ্য, দু’দিন আগে ঠিক এই একই কথা বলেছিলেন চিদম্বরমও।
আইনের ফাঁক বন্ধ করতে এ দিন দিল্লিতে যেমন শীর্ষ ব্যাঙ্ক সরব হয়েছে, তেমনই মুম্বইয়ে বাড়তি ক্ষমতার দাবি তুলেছে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি-ও। রজত জয়ন্তীর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সামনে সেবি-র চেয়ারম্যান ইউ কে সিন্হা বলেন, বেআইনি ভাবে আমানত সংগ্রহ অন্যতম দুশ্চিন্তার জায়গা। তবে তার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হলে আইন আরও মজবুত করা জরুরি। ২০০২ সালের পর সেবি-আইনে যে কোনও সংশোধন হয়নি, তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি।
অনেকেই মনে করছেন, একই দিনে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও সেবি-র শীর্ষ কর্তাদের আইন পোক্ত করার এই ডাক নড়ে বসতে বাধ্য করবে কেন্দ্রকে। কিছুটা সেই ইঙ্গিত দিয়ে চিদম্বরমও এ দিন সেবি-র অনুষ্ঠানে বলেছেন, সবার আগে ক্ষুদ্র আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। সারদা-কাণ্ডের পরে কেন্দ্রে যে আন্তঃমন্ত্রক গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে, বৃহস্পতিবারই তার প্রথম বৈঠক হয়েছে। অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, সেবি ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে আরও বেশি ক্ষমতা দেওয়ারই সুপারিশ করবে ওই গোষ্ঠী। যেমন, সেবি-কে সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা, তল্লাশি, নথিপত্র আটক ইত্যাদির ক্ষমতা দেওয়া হতে পারে। বিভিন্ন মন্ত্রক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে যোগাযোগও আরও মজবুত করতে চায় আন্তঃমন্ত্রক গোষ্ঠী।
এই সমন্বয় বাড়ানোর উপর এ দিন জোর দিয়েছেন সুদীপবাবু, গুরুদাসবাবুরাও। তাঁদের দু’জনেরই দাবি, পশ্চিমবঙ্গেও রাজ্য স্তরে একটি সমন্বয় কমিটি তৈরি হোক। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নেতৃত্বাধীন ওই কমিটিতে থাকবেন সেবি, কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রক, রাজ্য সরকারের প্রতিনিধিরা।
সুদীপবাবুর দাবি, কেন্দ্র এখন সেবি-কে বাড়তি ক্ষমতা দেওয়ার কথা ভাবছে। সেখানে সংস্থার অফিসে ঢুকে তল্লাশি, নথিপত্র আটক, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ব্যবস্থা আগেই করেছে রাজ্য। সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে যে ভাবে শ্রীনগর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে কিংবা শ্যামল সেনের নেতৃত্বে তৈরি কমিশনে দেড় লক্ষেরও বেশি আমানতকারীর দরখাস্ত জমা পড়েছে, তা নজরকাড়া দৃষ্টান্ত। অবশ্য রাজ্য যে ভাবে অর্থ লগ্নি সংস্থায় টাকা রাখা মানুষের আমানত ফেরাতে ৫০০ কোটির তহবিল তৈরি করেছে, তার সমালোচনা করেছেন বিজেপির অনুরাগ ঠাকুর।
কমিটির মতে, অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে প্রচার চালানো প্রয়োজন। এই প্রস্তাবে রাজি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরও। ঠিক হয়েছে, সপ্তাহব্যাপী প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপন দেবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কই।
|