মুখ ঘুরিয়ে চলে যাওয়া ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, লুফৎহানসা-কে ফেরার আমন্ত্রণ জানাল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বহু দিন আগে কলকাতা ছেড়ে চলে যাওয়া ডাচ বিমানসংস্থা কেএলএম-কেও ফেরাতে তৎপর রাজ্য। মহাকরণে তাঁদের প্রতিনিধিদের ডেকে বলা হবে, রাজ্যে পরিবর্তন এসেছে। কলকাতায় চালু হয়েছে নতুন আন্তর্জাতিক মানের টার্মিনাল। এখান থেকে আন্তর্জাতিক উড়ান চালাতে অনুরোধ করা হবে বিমানসংস্থাগুলিকে। ইতিমধ্যেই জাপান এয়ারলাইন্স ও এয়ার আরাবিয়া কলকাতা থেকে উড়ান চালানোর বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। মহাকরণের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তাদেরও।
মহাকরণ সূত্রের খবর, আগামী বুধবারের ওই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে উপস্থিত থাকবেন। বৈঠকটি হবে তাঁরই কনফারেন্স হলে। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ভারতে বিমান পরিবহণের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশনের শীর্ষকর্তা অরুণ মিশ্রকেও। থাকবেন কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মা, বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্ট সংগঠনের প্রতিনিধি ও পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্তাব্যক্তিরাও। কলকাতা থেকে নিয়মিত আন্তর্জাতিক উড়ান চালাচ্ছে যে সব বিমানসংস্থা, বৈঠকে ডাকা হয়েছে তাদেরও। |
লাভ হচ্ছে না, এই যুক্তি দেখিয়ে ২০০৯-এর মার্চে কলকাতা ছেড়েছিল ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। এর তিন বছর পর লুফৎহানসা। তাদেরও যুক্তি ছিল একই। কলকাতা থেকে এখন ইউরোপ যাওয়ার সরাসরি কোনও উড়ান নেই। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, লুফৎহানসা, কেএলএম-কে ডাকাটা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিমান পরিবহণের বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু কেন ফিরে আসবে তারা? তিন বছরে এমন কী আমূল পরিবর্তন এসেছে বাংলায়? রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় মনে করেন, অবশ্যই বড়সড় পরিবর্তন হয়েছে। এবং সে কথা ভেবেই মুখ্যমন্ত্রী এই উদ্যোগ নিয়েছেন। পার্থবাবুর কথায়, “নতুন টার্মিনাল এখন আমাদের অন্যতম প্রধান শো-কেস। তা ছাড়া, রাজ্যে পর্যটন ক্ষেত্র খুব দ্রুত উন্নতি করছে। দার্জিলিং তো রয়েইছে। সুন্দরবন, তাজপুর, দীঘা, উত্তরবঙ্গে আমরা বড় পর্যটন-কেন্দ্র গড়ে তুলছি।” তবু প্রশ্ন উঠছে। কারণ, এই পর্যটন কেন্দ্রগুলি মূলত মধ্যবিত্তদের কথা ভেবে গড়া হচ্ছে। ইউরোপ-আমেরিকা থেকে আসা পর্যটকদের থাকার মতো পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। মানতে নারাজ পার্থবাবু। তাঁর যুক্তি, কলকাতা-সহ বিভিন্ন জায়গায় পাঁচতারা হোটেল হচ্ছে। এক সময়ে বিমানসংস্থাগুলির অভিযোগ ছিল, উড়ান বাতিল হলে যাত্রীদের রাখার মতো হোটেলই নেই কলকাতায়। এখন অনেকগুলি হোটেল হচ্ছে। কলকাতাকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। কিন্তু, শুধু পর্যটন আর নতুন টার্মিনাল দেখেই কি ফিরে আসবে বিমানসংস্থাগুলি? তারা তো চায় বিজনেস ও উচ্চ-শ্রেণির যাত্রী! ভারী শিল্প না বাড়লে তেমন যাত্রী কোথায় পাবে কলকাতা?
শিল্পমন্ত্রীর কথায়, “ভারী শিল্প হচ্ছে না, এটা কে বলল? তথ্য-প্রযুক্তিতে কাজ হচ্ছে। ইউরোপ-আমেরিকা থেকে লোক যাতায়াত করছেন তার জন্য। দিল্লি-মুম্বই হয়ে যাতায়াত করতে তাঁদের সমস্যা হচ্ছে। ব্রিটেন বিনিয়োগ করছে শিক্ষা ক্ষেত্রে। এ ছাড়া খড়্গপুরে জাপান পরিকাঠামো ব্যবসায় নামছে। জাপান সরকারকে এখানে গাড়ি তৈরির জন্যও অনুরোধ করেছি আমরা।”
ট্রাভেল এজেন্ট ফেডারেশন তবু সংশয়ে। সংগঠনের পূর্বাঞ্চলের চেয়ারম্যান অনিল পঞ্জাবির কথায়, “পর্যটনের জন্য আর কত যাত্রী হবে? যাত্রী বেশি হয় বাণিজ্যের জন্য। সত্যি কি সেই বাণিজ্য-পরিবেশ তৈরি হয়েছে রাজ্যে? আখেরে নিজেদের লাভই তো দেখবে বিমানসংস্থা। উচ্চ শ্রেণির যাত্রী না পেলে তারা আসবে কেন?” কলকাতায় বিমান জ্বালানির উপরে করও অনেক রাজ্য থেকে বেশি। অনিলের মতে, সেই কর কমালেও অনেক বিমানসংস্থা আকৃষ্ট হতে পারে। পার্থবাবু জানিয়েছেন, প্রস্তাব পেলে অবশ্যই ভেবে দেখবেন মুখ্যমন্ত্রী।
|