|
|
|
|
লগ্নি ওঠাতে কৌশল কলকাতার |
বিদেশি বিমানকে বিশ্রাম দিয়েও এ বার উপার্জন |
সুনন্দ ঘোষ • কলকাতা |
কলকাতা বিমানবন্দরে বিশ্বমানের নতুন টার্মিনাল চালু হলেও তা ভোজবাজি দেখাতে পারবে না। এতে রাতারাতি কলকাতায় বিমানযাত্রীর সংখ্যা যেমন বাড়বে না, তেমন মুখ ফিরিয়ে চলে যাওয়া লুফৎহানসা-ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের মতো বিদেশি বিমানসংস্থা তড়িঘড়ি কলকাতায় ফিরে আসবে, এমনটাও আশা করা অযৌক্তিক। তা হলে বিমানবন্দর আধুনিকীকরণে লগ্নির টাকা ওঠানো যাবে কী ভাবে?
এ জন্য বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষ কলকাতায় আনছেন অন্য ‘মডেল।’ দিল্লি থেকে ফোনে বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ বলেন, “দিল্লি-মুম্বই মডেল (পুরোপুরি বেসরকারিকরণ) ছেড়ে কলকাতা-চেন্নাইয়ের জন্য আমরা অন্য মডেল ভাবছি।” কর্তৃপক্ষের মতে, যার সার কথা হল: ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ-লুফৎহানসার মতো ‘নামী-দামি’দের আশা ছেড়ে সিল্ক এয়ার বা ড্রাগন এয়ারের মতো তুলনায় অনামীদের দিকে নজর দাও। সস্তার ওই সব বিদেশি উড়ানের বিশ্রামাগার (বিমান পরিভাষায়, হাব) হিসেবে কলকাতাকে কাজে লাগিয়ে রোজগার বাড়াও।
বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষের আশা, এতে দু’দিক দিয়ে লাভ হবে। হাব বাবদ ভাড়া তো মিলবেই, উপরন্তু কলকাতা থেকে ঢাকা-ব্যাঙ্কক-হংকং-সিঙ্গাপুরের মতো ছোট রুটে উড়ান বাড়বে। বস্তুত সেই বাড়তি উড়ানের পরিকাঠামো নির্মাণে কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ঝুঁকি নিয়ে কলকাতায় নতুন করে তিনশো কোটি টাকা ঢেলেছেন। হাব করতে হলে ন্যূনতম যেগুলো প্রয়োজন, সেই হ্যাঙ্গার (বিমানের গ্যারাজ), পার্কিং-বে ইত্যাদিও এই টাকায় তৈরি হবে বলে জানিয়েছেন বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বেদপ্রকাশ অগ্রবাল।
বস্তুত কলকাতার ভৌগোলিক অবস্থানের ফায়দা তুলতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিমানসংস্থার জন্য দরজা আরও খুলে দিতে চাইছেন বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষ। এবং এ ভাবেই আধুনিকীকরণে বিনিয়োগ করা ২৩২৫ কোটি টাকা তুলে নেওয়া যাবে বলে তাঁরা আশাবাদী। বেদপ্রকাশ জানিয়েছেন, সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার দু’টি বিমানসংস্থা ইতিমধ্যে কলকাতাকে হাব করতে চেয়ে আর্জি জানিয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শহর ঘুরে
রাতে তাদের বিমান কলকাতায় এসে নামবে। এখানে রাতভর ‘বিশ্রাম’ নিয়ে পর দিন ভোরে আবার উড়ে যাবে অন্য দেশে।
পশ্চিমের ‘অভিজাত’ বিমানসংস্থাগুলো ফিরবে না? বিমানবন্দর-সূত্রের খবর: ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, লুফৎহানসা যখন কলকাতা ছাড়ে, তখনও কিন্তু সাধারণ ইকনমি শ্রেণিতে তারা পর্যাপ্ত যাত্রী পাচ্ছিল। বরং বিজনেস ক্লাসে তেমন যাত্রী ছিল না। এখন যখন কর্তৃপক্ষ নতুন টার্মিনালে তাদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন, তখন তারা বলছে, পূর্ব ভারতে বাণিজ্য কম, এখানে বিজনেস বা প্রথম শ্রেণির যাত্রী পাওয়া যায় না। তাই কলকাতায় উড়ান চালিয়ে লাভ নেই।
বরং দিল্লি-মুম্বই, এমনকী হায়দরাবাদ-বেঙ্গালুরুতে বিজনেস ও প্রথম শ্রেণির যাত্রী অনেক বেশি বলে সংস্থাগুলির দাবি।
তবু কেন্দ্রের অনুরোধের প্রেক্ষিতে পশ্চিমের দু’-একটা নামী বিমানসংস্থা এর পরেও কলকাতায় আসতে রাজি। কিন্তু তাদের শর্ত, ভারত থেকে আরও বেশি উড়ান চালানোর অনুমতি চাই। আর এখানেই গোল বেঁধেছে। কেন?
বেদপ্রকাশের ব্যাখ্যা: বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের যে চুক্তি (দু’দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ কতগুলো উড়ান চলবে) রয়েছে, তাতে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের মতো পশ্চিমী বিমানসংস্থাগুলির পক্ষে নতুন করে ভারতে উড়ান বাড়ানো সম্ভব নয়। “অবিলম্বে কলকাতা থেকে ইউরোপ-আমেরিকায় উড়ান চালুর সম্ভাবনা তাই কম। কিন্তু পূর্বের দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী এখনও ভারত থেকে সেখানে নতুন উড়ান চালানো যাবে।”
এরই জেরে পূর্বের গুরুত্ব বাড়ছে কলকাতার কাছে। কারণ, কলকাতা থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রায় প্রতিটি দেশের প্রধান বিমানবন্দর আকাশপথে বড়জোর চার ঘণ্টার দূরত্বে। তাই কলকাতাকে ‘হাব’ হিসেবে ব্যবহার করতে পারলে এদের যথেষ্ট লাভ বলে বেদপ্রকাশের দাবি। তবে এ ক্ষেত্রেও সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স কিংবা ক্যাথে প্যাসিফিকের মতো পূর্বের নামী-দামি বিমানসংস্থাগুলো এখনও বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেনি। বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষ মূলত এখন সিঙ্গাপুরের সিল্ক এয়ার বা হংকংয়ের ড্রাগনের মতো সস্তার বিমানসংস্থার দিকেই নজর দিচ্ছেন।
কলকাতা থেকে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, কাঠমান্ডু, চিনে এখন একটা করে বিমানসংস্থার উড়ান রয়েছে। কোনও প্রতিযোগিতা নেই। বেজিং বা হংকংয়ের তো কোনও উড়ানই নেই! ডিসেম্বর থেকে ড্রাগন এয়ারের হংকং উড়ান শুরু হওয়ার কথা। বাংলাদেশের জিএমজি ঢাকা উড়ান গুটিয়ে নিয়েছে। এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ও কিংফিশার নিজেদের সমস্যার কারণে কলকাতা থেকে সমস্ত উড়ান বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে ঢাকা-ব্যাঙ্কক-সিঙ্গাপুর উড়ানেও টান। অথচ ট্র্যাভেল এজেন্ট ফেডারেশনের কর্তা অনিল পাঞ্জাবি জানাচ্ছেন, কলকাতা থেকে এই সব ছোট রুটে উড়ানের যথেষ্ট চাহিদা। এখন নিরূপায় হয়ে অনেকেই দিল্লি-মুম্বই গিয়ে বিমান ধরতে বাধ্য হচ্ছেন।
এই শূন্যস্থান পূরণ করে ব্যবসা বাড়ানোই আপাতত কলকাতার লক্ষ্য। |
|
|
|
|
|