|
|
|
|
পেনশনেও বিদেশি লগ্নি, ঊর্ধ্বসীমা বাড়ল বিমায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
জোটের বড় শরিক সমর্থন তুলে নিয়েছে সংস্কারের প্রথম দাওয়াই দেখেই। প্রতিবাদের রাস্তায় বিরোধীরাও। কিন্তু কোনও কিছুই যেন আর স্পর্শ করছে না তাঁকে। অর্থনীতির হাল ফেরাতে আজ ফের বড় রকমের সংস্কারে হাত দিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। পেনশন ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নিতে ছাড়পত্র দেওয়ার পাশাপাশি, বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করার প্রস্তাবে অনুমোদন দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। সেই সঙ্গে কোম্পানি বিল, ফরওয়ার্ড ট্রেডিং বিল ও কম্পিটিশন বিলেও অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
বাজারের আস্থা ফেরাতে তাঁর বিশ বছর আগের রেকর্ড যেন ভেঙে ফেলতে চাইছেন মনমোহন। রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে প্রথম ইউপিএ জমানা, এমনকী দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের সাড়ে তিন বছর যা করতে পারেননি, মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে সেই সব কর্মসূচিতে দুই ধাক্কায় অনুমোদন দিলেন প্রধানমন্ত্রী। যা দেখে বাজার তার খুশি চেপে রাখেনি। বিশেষ করে বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা ২৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৯ শতাংশ করার সিদ্ধান্তে উজ্জীবিত সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলি। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সব সংস্কার নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে আশা ছিলই। সেই আশায় ভর দিয়ে মুম্বই শেয়ার বাজারের সূচক সেনসেক্স আজ ১৯ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। গত পনেরো মাসের মধ্যে যা সর্বোচ্চ।
পার্টি-গণিত
|
কিন্তু বাজার স্বাগত জানালেও সংস্কারের এই সব কর্মসূচি সংসদের শিলমোহর পাবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই। কারণ, কংগ্রেস ছাড়া কার্যত আর সব দলই হয় প্রকাশ্যে, নয় একান্ত আলোচনায় এর বিরোধিতা করেছে।
এমনিতেই দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের প্রথম থেকে রাজ্যসভায় সরকার পক্ষ সংখ্যালঘু। তৃণমূল সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর এখন লোকসভাতেও খাতায়কলমে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। কোনও বিল পাশ করাতে গেলে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টির মতো সমর্থক দলকে পাশে নিতেই হবে সরকারকে। কিন্তু পেনশন বিল ও বিমা বিল নিয়ে নিজেদের আপত্তির কথা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন সপা এবং বিএসপি নেতৃত্ব। শুধু তা-ই নয়, কঠিন সিদ্ধান্তের দায়ভার যে তারা নেবে না, আজ মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুপস্থিত থেকে সেই ইঙ্গিতও দিয়েছে দুই শরিক এনসিপি এবং ডিএমকে।
বিজেপি সমর্থন করলে অবশ্য বিল পাশ করানো সম্ভব। কিন্তু বিমা ও পেনশন দুই ক্ষেত্রেই বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা ২৬ শতাংশের বেশি করার বিরোধী তারা। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম আজ বলেন, বিমা বিল নিয়ে বিজেপি শীর্ষ নেতা যশবন্ত সিনহার নেতৃত্বে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি যে সব সুপারিশ করেছে, তার প্রায় সবটাই মেনে নেওয়া হয়েছে। এমনকী পেনশন ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নি সত্ত্বেও, কোনও ব্যক্তি চাইলে যাতে ন্যূনতম সুনিশ্চিত ফেরত পেতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কেবল প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা ২৬ শতাংশে বেঁধে রাখার প্রস্তাব মানা সম্ভব হয়নি। কারণ, বিমা ক্ষেত্রে প্রচুর মূলধন প্রয়োজন। পেনশন খাতে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা কী হবে, তা এখনও স্থির করেনি সরকার। চিদম্বরমের বক্তব্য, বিমা ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা যতটা হবে, পেনশন ক্ষেত্রেও ততটা হবে। অর্থাৎ বিমা ক্ষেত্রে ৪৯ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির যে প্রস্তাব রাখা হয়েছে, তা সংসদে অনুমোদিত হলে, পেনশন ক্ষেত্রেও তা-ই হবে।
চিদম্বরম এ-ও বলেন, কেন্দ্রে প্রধান বিরোধেী দলের সভাপতি ক’দিন আগে জানিয়েছিলেন, খুচরো ব্যবসায় ছাড়া আর সব ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নিতে বিজেপি-র সায় রয়েছে। বিজেপি-ও সংস্কারের পক্ষে। সে কারণে তাদের সমর্থন পাওয়ার ব্যাপারে সরকার আশাবাদী।
তবে প্রকাশ্যে নিতিন গডকড়ী যাই বলুন, রাজনীতির কারবারিদের মতে, শেষমেশ বিজেপি সরকারকে সংস্কারের কৃতিত্ব নিতে দেবে না। কেননা সরকার অর্থনীতির হাল ফেরাতে সক্ষম হলে বিজেপি-র কী লাভ? এমনিতেই দুর্নীতির প্রসঙ্গ থেকে বিতর্কের মুখ ঘুরে গিয়েছে। এ বার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালে বিজেপি-র হাতে পড়ে থাকবে পেনসিল। তাই যে ভাবে পরমাণু চুক্তির সময় বিজেপি বিরোধিতা করেছিল, এ বারও তাই করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কংগ্রেস সূত্র বলছে, বিজেপি-র এই অবস্থান যে সরকারের অজানা তা নয়। তা সত্ত্বেও সংস্কারের পথে পা বাড়ানোর পিছনে মূলত রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে। প্রথমত, এত দিন যে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সরকার কোণঠাসা ছিল, তা এখন পিছনের সারিতে চলে গিয়েছে। নীতিপঙ্গুত্বের অভিযোগও মুছে ফেলা গিয়েছে। এখন যাবতীয় বিতর্কের কেন্দ্রে সংস্কার। গত কাল গুজরাতে গিয়ে সংস্কারের প্রসঙ্গ তুলে তাকে ভোটপ্রচারের অঙ্গ করে ফেলেছেন খোদ সনিয়া গাঁধী। আপাতত সংস্কার নিয়েই বেশি চর্চা হবে, দুর্নীতি নিয়ে ততটা নয়। বিজেপি-র কোর্টে বল ঠেলে কংগ্রেস বলবে, তারা যদি সংস্কারের পক্ষেই হয় তা হলে বিলের সমর্থনে এগিয়ে আসুক। দলের ওই অংশের আরও বক্তব্য, এখন যদি সরকার পড়েও যায়, তা হলে তার গায়ে থাকবে সংস্কার নিয়ে সাহসী হওয়ার তকমা, দুর্নীতির কলঙ্ক নয়।
কংগ্রেসের অন্য অংশ অবশ্য বলছে, রাজনীতির পাশাপাশি দেশের বেহাল অর্থনীতি নিয়েও চিন্তিত মনমোহন। সেই কারণে, বিমা ও পেনশন বিল পাশ করাতে এই দুই ক্ষেত্রেই বিদেশি লগ্নির ঊর্ধ্বসীমা নিয়ে বিজেপি-র সঙ্গে দর কষাকষির একটা সম্ভাবনা থাকছেই।
পেনশন ও বিমা বিলের পাশাপাশি আজ ফরওয়ার্ড ট্রেডিং বিল, কম্পিটিশন বিল ও কোম্পানি বিলে ছাড়পত্র দেওয়াকেও ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মনে করছে শিল্পমহল। সরকারের দাবি, ফরওয়ার্ড ট্রেডিং বিল পাশ হলে ফরওয়ার্ড মার্কেট কমিশন আরও ক্ষমতাশালী হবে। সে ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিয়ে চাষিদের আরও লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকবে। অন্য দিকে অর্ধশতাব্দী প্রাচীন কোম্পানি বিলে সংশোধন এনে সরকার বিনিয়োগের বাতাবরণ অনুকূল করতে চাইছে।
প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় সূত্রে আরও বলা হচ্ছে, গণবণ্টন ব্যবস্থাকে কম্পিউটার চালিত করাও কম বড় পদক্ষেপ নয়। কারণ তাতে আখেরে ভর্তুকির বোঝা কমবে। কম দামে যাঁদের খাদ্যশস্য পাওয়ার কথা, তাঁদের সুনির্দিষ্ট ডেটাবেস এ বার তৈরি করা সম্ভব হবে। ফলে ভুয়ো রেশন কার্ডের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে রেশনের চাল-গম যাতে কেউ সরিয়ে ফেলতে না পারে তা-ও কম্পিউটার চালিত ব্যবস্থার মাধ্যমে সুনিশ্চিত করা হবে।
সরকারের এই পদক্ষেপকে
খাদ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়নের প্রথম ধাপ বলে মনে করা হচ্ছে।
গণবণ্টন ব্যবস্থার সংস্কার ও আধুনিকীকরণের যে রূপরেখা প্রধানমন্ত্রী তৈরি করেছেন তা থেকেই বিষয়টি স্পষ্ট। কেন্দ্রের লক্ষ্য হল, মে মাসের মধ্যে উপভোক্তাদের তালিকা তৈরি করে ফেলা।
সূত্রের খবর, তার আগে ফেব্রুয়ারিতে কেন্দ্রীয় বাজেটে খাদ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়নের জন্য বড় মাপের বরাদ্দ ঘোষণা করা হবে।
|
সংস্কারের রিপোর্ট কার্ড |
|
বিদেশি লগ্নি |
|
বহুপণ্যের খুচরোয় ৫১% |
হয়ে গিয়েছে |
|
বিমান পরিবহণে ৪৯% |
হয়ে গিয়েছে |
|
বিমায় ৪৯% |
মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত |
|
পেনশনে ৪৯% |
মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত |
|
|
জ্বালানি ও পরিকাঠামো |
|
ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি |
হয়ে গিয়েছে |
|
বিদ্যুৎ পর্ষদগুলির পুনর্গঠন |
হয়ে গিয়েছে |
|
বেসরকারিকরণের রূপরেখা |
কাজ এগোচ্ছে |
|
জাতীয় বিনিয়োগ পর্ষদ |
কাজ এগোচ্ছে |
|
জমি অধিগ্রহণ বিল |
কাজ এগোচ্ছে |
|
|
গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র |
|
চিনির ন্যূনতম সহায়ক মূল্য |
এখনও হয়নি |
|
ইউরিয়ার মূল্যবৃদ্ধি |
এখনও হয়নি |
|
|
|
|
|
|
|