|
|
|
|
‘সরকারি’ মুরগি কিনে ঘরে ফিরলেন মহাকরণ-কর্মীরা
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
‘এমন বসন্ত দিনে, বাড়ি ফেরো মাংস কিনে’।
না হয় ভরা গ্রীষ্ম। তা বলে কি মাংস কিনে বাড়ি ফেরা আটকায়?
মোটেই না। অন্তত সেটাই দেখল বৃহস্পতিবারের মহাকরণ।
বেলা সাড়ে ১২টা। মহাকরণের সামনে এসে দাঁড়াল মোবাইল ভ্যান। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পরম মমতায় সুন্দর করে ছাড়ানো, প্লাস্টিকের মোড়কবন্দি মুরগির মাংস নিয়ে। বিভিন্ন বাজারে সেই মাংস পৌঁছে দিতে দিতে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের কর্মীরা মহাকরণের সরকারি স্টলে হাজির। দলে দলে ১৫০ টাকা কিলো সেই মুরগি কিনেই এ দিন বাড়ি ফিরলেন লাল বাড়ির কর্মীরা।
পূর্ত দফতরের কর্মী সঞ্জীব সরকার এবং অর্থ দফতরের কমলকুমার কর্মকার ছিলেন এ দিনের প্রথম দুই ক্রেতা। হরিণঘাটা মিট প্লান্টের ছাপ মারা সেই মুরগির মাংসের ৫০০ গ্রামের প্যাকেট কিনে মহা খুশি দু’জনেই। বললেন, “বাজারে মুরগির মাংসের দাম ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কিলো। সেখানে ভাল করে ছাড়ানো, প্যাকেট করা ৫০০ গ্রাম মুরগি যখন ৭৫ টাকায় পাচ্ছি, নেব না? খেতে ভাল লাগলে এখান থেকেই বাড়িতে মাংস নিয়ে যাব।” |
|
মহাকরণে বিক্রি হচ্ছে প্যাকেটবন্দি মুরগির মাংস। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র |
মহাকরণে সরকারি স্টলের কর্মী অশোক দাস সকাল থেকেই মাংস আসার অপেক্ষায় বসে। দোকানের সামনে ব্যানারে লেখা ‘ফেয়ার প্রাইস শপ’। এই স্টল থেকেই নিয়মিত হরিণঘাটা খামারে তৈরি তেল, ঘি, জেলি এবং মধু-সহ বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করেন অশোকবাবু। এ দিন মাংস এসে পৌঁছতেই তড়িঘড়ি ফ্রিজে ঢুকিয়ে দিয়েছেন। অশোকবাবু বলেন, “প্রথমে পাঁচ কিলো মাংস এসেছিল। অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। পরে আরও ১০ কিলো মাংস আনা হয়। বিকেল পাঁচটায় সেই মাংসও প্রায় শেষের দিকে। প্রথম দিন ভালই বিক্রি হয়েছে। কাল ২০ কিলো মাংস দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে বলেছি।” পালক ছাড়ানো, সুন্দর করে প্যাকেট করা মাংস কম দামে পেয়ে স্বভাবত খুশি ক্রেতারাও। অশোকবাবুর আশা, শনি-রবিবারের ছুটির আগে শুক্রবার বেশি মাংস বিক্রি হবে।
চার্চ গেটের পাশ দিয়ে মহাকরণের পিছনের দিকে পরপর দু’টি স্টল। তার মধ্যে একটি মাদার ডেয়ারির, অপরটি প্রাণিসম্পদ বিকাশ বিভাগের। মাদার ডেয়ারির স্টলে দুধ, ঘি, পনির, দই, পানীয় জলের বোতল বিক্রি হয়। আর প্রাণিসম্পদ বিকাশ বিভাগের স্টল থেকে বিক্রি হয় পাখির মাংস, মাংসের কিমা, তেল, হরিণঘাটায় তৈরি ঘি-সহ অনেক কিছুই। এ দিন দুপুর পৌনে ১টা থেকেই মহাকরণের একতলায় মাংসের স্টলের সামনে ভিড় শুরু হয়। দোতলা এবং তিনতলার করিডরেও ছিল কর্মীদের ভিড়।
এ দিন মহাকরণে বৈঠক করেন প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের মন্ত্রী নুরে আলম চৌধুরী। সেখানে কলকাতা পুরসভা ছাড়া পোল্ট্রি ফেডারেশন এবং ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্যেরাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ঠিক হয়েছে, ১৫০ টাকা কিলো দরেই মুরগির মাংস বিক্রি হবে। আগামী ১০ দিন বিক্রির পরে পরিস্থিতি পর্যালোচনা হবে। পুরসভা মাংস বিক্রি করার জায়গা না দেওয়া পর্যন্ত প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরের ১০টি স্টল থেকেই মাংস বিক্রি করা হবে। দফতরের এক কর্তা জানান, প্রথম দিন ১০টি স্টলে ৩০০ কিলো মাংস দেওয়া হয়েছিল। তার বেশির ভাগটাই বিক্রি হয়েছে। গড়িয়াহাট এবং টালিগঞ্জের স্টলে মাংস দেরিতে পৌঁছনোয় কিছুটা মাংস থেকে গিয়েছে। শুক্রবার সকাল সকাল বাজারের স্টলে মাংস পৌঁছে যাবে। ওই কর্তার কথায়, “মোবাইল ভ্যানে করে শ্যামবাজার এবং পাইকপাড়ায় মাংস বিক্রি করা হয়েছে। পাইকপাড়ায় সকাল ৯টা ২০ মিনিট থেকে ৯টা ৪০ মিনিটের মধ্যে ২০৭৫ টাকার মাংস বিক্রি হয়েছে।”
ওয়েস্ট বেঙ্গল পোল্ট্রি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মদনমোহন মাইতি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি এক দিকে ক্রেতাদের স্বার্থ রক্ষা করেছেন, অন্য দিকে উত্পাদনকারীরা যাতে দাম পান, তার দিকেও নজর দিয়েছেন তিনি। মাঝখান থেকে ফড়েরা যে লাভ করত, তা আর করতে পারবে না।” তিনি আরও বলেন, “মুরগির মাংস বিক্রি করা সরকারের কাজ নয়, এটা আমরা জানি। কিন্তু যে ভাবে বাজারে মুরগির মাংসের দাম বাড়ছিল, তা নিয়ন্ত্রণ করতেই মুখ্যমন্ত্রী এটা করেছেন। আমরা সরকারের সঙ্গে মুরগি উত্পাদনকারীদের যোগসূত্র স্থাপন করেছি মাত্র।” সরকার কম দামে মুরগির মাংস বিক্রি করায় কলকাতার অনেক খোলা বাজারেই মাংসের দাম কমেছে বলে মন্তব্য করেন মদনবাবু।
|
পুরনো খবর: মমতার মুখরক্ষায় মহাকরণে মুরগি |
|
|
|
|
|