পঞ্চায়েত ভোটের রণকৌশল ঠিক করতে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৃহস্পতিবার বৈঠক করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন মহাকরণে তাঁর কক্ষে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়, দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী ছাড়া মমতা ডেকে পাঠান তমলুকের তৃণমূল সাংসদ ও দলের যুব সংগঠনের রাজ্য সভাপতি শুভেন্দু অধিকারীকেও। বৈঠকে মমতা তাঁদের বলেছেন, হাতে সময় খুবই কম। পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে বিজ্ঞপ্তি দু-তিন দিনের মধ্যেই জারি হবে। পঞ্চায়েতের পরেই লোকসভা ভোটের সম্ভাবনা প্রবল। ফলে পঞ্চায়েতের প্রচারেই দলকে লোকসভা ভোটের প্রচারের কাজও শুরু করে দিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।
পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার সংগঠিত করার ব্যাপারে প্রধান দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মুকুল, সুব্রত, শুভেন্দু এবং দলের মহাসচিব তথা শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। কাজে ব্যস্ত থাকায় পার্থবাবু অবশ্য এ দিনের বৈঠকে ছিলেন না। তবে প্রচারে উন্নয়নকেই প্রধান হাতিয়ার করার কথা বলেছেন মমতা। সেই সঙ্গে শাসক দলের স্বচ্ছ ভাবমূর্তি বজায় রাখার কথাও মমতা বলেছেন বৈঠকে। তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই নেত্রী দলের অন্দরে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, কেউ যেন এমন কিছু আচরণ না করেন, যাতে সংবাদমাধ্যম বা বিরোধীরা হাতে অস্ত্র পেয়ে যায়।
মহাকরণের বৈঠকে দলে অন্তর্দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গে কোনও কথা ওঠেনি বলেই জানিয়েছেন মুকুল ও শুভেন্দু। বস্তুত, তাঁদের দু’জনের ‘সুসম্পর্ক’ নিয়ে নানা জল্পনা রয়েছে। এমনকী, ২৪ ঘণ্টা আগে বাঁকুড়ায় এক সভায় মুকুল বক্তৃতা শুরু করার পরেই শুভেন্দুর সেখান থেকে চলে যাওয়া সেই জল্পনায় নতুন ইন্ধন জুগিয়েছিল। কিন্তু এ দিন মহাকরণে বৈঠকের পরে দুই নেতাই দাবি করেন, জল্পনার অবকাশ নেই। শুভেন্দু বলেন, “বাঁকুড়ায় ওই সভার পরেই, গড়বেতায় আমার একটা সভা ছিল। আমি তাড়াতাড়ি চলে যাব বলে মুকুলদাকে আগেই বলে রেখেছিলাম।” তাঁর আরও সংযোজন, “আমি দলের এক জন অনুগত সৈনিক। আমি জনসমক্ষে এমন কোনও কাজ করব না যাতে নেতৃত্বের সম্মানহানি হয়, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়।’’ মুকুলবাবুও দাবি করেন, “শুভেন্দুর সঙ্গে আমার আগেই কথা হয়েছিল। ওর গড়বেতায় সভা ছিল বলে একটু আগে বেরিয়ে যায়।’’
এ দিন অবশ্য পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা ব্লকে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর কোন্দলের জেরে বিক্ষোভ হয় তৃণমূল ভবনের সামনে। তবে তাঁদের দল সুসংগঠিত বলে দাবি করে মুকুলবাবু এ দিন বলেন, “চারিদিকে এত ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও মানুষ দেখছে আমাদের সরকার উন্নয়নমূলক কাজে এগিয়ে চলেছে। এতে অনুপ্রাণিত হয়ে কংগ্রেস, সিপিএম, আরএসপি থেকে নেতা-কর্মীরা তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন।” এ দিনও মালদহ জেলা পরিষদের সভাধিপতি উজ্জ্বল চৌধুরী কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। তৃণমূল ভবনে মালদহের দুই মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী ও সাবিত্রী মিত্রের উপস্থিতিতে তাঁর হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন মুকুলবাবু। মালদহে তৃণমূল নেতাদের কাজে আকৃষ্ট হয়ে এবং কংগ্রেস নেতাদের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে তিনি দল ছাড়লেন বলে জানান উজ্জ্বলবাবু।
|